X
মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫
২৩ বৈশাখ ১৪৩২

এনসিপির নেতাকর্মীদের মারধরের শিকার অধ্যক্ষকে নাশকতার অভিযোগে চালান

বগুড়া প্রতিনিধি
০৬ মে ২০২৫, ১৭:৩৩আপডেট : ০৬ মে ২০২৫, ১৭:৩৩

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীদের অভিযানে আটক বগুড়া হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. এস এম মিল্লাত হোসেনকে অবশেষে একটি নাশকতার মামলার তদন্তে পাওয়া আসামি হিসেবে দেখানো হয়েছে। মঙ্গলবার (৬ মে) বিকালে তাকে আদালতের মাধ্যমে বগুড়া জেল হাজতে পাঠানো হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আতোয়ার রহমান এ তথ্য দিয়েছেন।

এনসিপির শ্রমিক উইংয়ের কেন্দ্রীয় সংগঠক ডা. আবদুল্লাহ আল সানীর নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা সোমবার রাতে শহরের ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মার্কেটের চেম্বার থেকে তাকে আটক করে। প্রায় এক কিলোমিটার পথ হাঁটিয়ে লাঠি ও স্যান্ডেল পেটা, চড়-থাপ্পড়, কিল-ঘুষি দিয়ে ডিবি পুলিশ কার্যালয়ে সোপর্দ করা হয়। পানি পান করতে চাইলেও দেওয়া হয়নি।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ডা. এস এম মিল্লাত হোসেন (৫০) বগুড়া শহরের নাটাইপাড়ার খাইরুল ইসলামের ছেলে। তিনি বগুড়া হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, স্বাধীনতা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক পরিষদ জেলা শাখার সভাপতি এবং বঙ্গবন্ধু পরিষদ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক। সোমবার রাত ৮টার দিকে তিনি ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মার্কেটে তার ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখছিলেন। এ সময় এনসিপি শ্রমিক উইংয়ের কেন্দ্রীয় সংগঠক ডা. আবদুল্লাহ আল সানীর নেতৃত্বে ১৫-২০ নেতাকর্মী তার চেম্বারে যান। তারা তাকে ধরে বাইরে রাস্তায় নিয়ে আসেন। প্রকাশ্যে টেনে-হিঁচড়ে লাঠি ও স্যান্ডেল দিয়ে আঘাত, কিল-ঘুষি মারতে মারতে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে বগুড়া ডিবি পুলিশ কার্যালয়ে নেওয়া হয়।

পথিমধ্যে মারধরে তিনি কান্নাকাটি ও আঘাত না করতে অনুরোধ জানান। মারধরে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়। পরনের শার্ট ছিঁড়ে ফেলা হয়। পানি পান করতে চাইলেও একজন বোতল মুখে ধরার পর পান করতে না দিয়ে মাথায় ঢেলে দেন। এ সময় নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগ বিরোধী নানা স্লোগান দেন।

সেখানে বলা হয়, হাসনাত (এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক) ভাইয়ের ওপর হামলা হয়েছে; দেশে একজন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে থাকতে দেওয়া হবে না।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে এনসিপির শ্রমিক উইংয়ের কেন্দ্রীয় সংগঠক ডা. আবদুল্লাহ আল সানীকে বলতে শোনা যায়, ‘অ্যাক (মিল্লাত) ছয় মাস আগে আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম, আমাকে দুর্বল মনে করেছে। আমি স্পষ্ট কথা বলে দিতে চাই, বেশি কথার মানুষ আমি না, এক কথার মানুষ। একবার বলেছি মানে ওইটা ওয়ার্নিং হয়ে গেছে। সময়মতো ধরে ফেলে দিয়েছি। তুই আমার ভাইগরক ২০-২৫ বছর ধরে মারচু। ভারতপন্থি ও আরএসএস ঘনিষ্ঠ দীলিপ রায়ের (স্বাধীনতা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পরিষদের সভাপতি) কোনও সিন্ডিকেট রাখব না, আমরা আসতেছি। হাসনাতের ওপর হামলা হয়েছে।’

ডা. আবদুল্লাহ আল সানী সাংবাদিকদের বলেন, ‘’গত ১৫ বছর এস এম মিল্লাত হোসেন ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন। নিয়োগ-বাণিজ্য করেছেন। তিনি টাকা নিয়েও চাকরি না দেওয়া অনেক ভুক্তভোগী এসে ২০২২ সালেই তার কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। কিন্তু তখন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। ৫ আগস্টের পর এস এম মিল্লাত ফেসবুকে অপপ্রচার চালাচ্ছেন, আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনে নানাভাবে সহায়তা করছেন। নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগকে অর্থ সহায়তা করছেন। তাকে ভুক্তভোগীদের টাকা ফেরত ও এসব কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি শোনেননি। এ কারণে তাকে পুলিশে দেওয়া হয়েছে। এস এম মিল্লাত হোমিওপ্যাথিক কলেজের অধ্যক্ষ পদটিও গুণ্ডামি করে দখল করে আছেন।’

ডা. মিল্লাতকে ডিবি অফিসে হস্তান্তরের পর ওসি ডিবি ইকবাল বাহার জানান, এনসিপি নেতাকর্মীরা তাকে আটক করে এখানে দিয়ে গেছেন। পরে তাকে সদর থানা পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।

বগুড়া সদর থানার ওসি এম এম মঈনুদ্দিন বলেন, ‘এস এম মিল্লাতের বিরুদ্ধে থানায় কোনও মামলা নেই।’

নাম ও পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক ঊর্ধ্বতন এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, এভাবে কাউকে আটক করে পুলিশে দেওয়ায় আমরা বিব্রত। কিন্তু কোনও উপায় না থাকায় তারা নীরব থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।

এদিকে ডা. মিল্লাতের বিরুদ্ধে কোনও মামলা না থাকলেও সদর থানায় গত বছরের ১৬ আগস্ট দায়ের করা বিস্ফোরকদ্রব্য আইন ও দণ্ডবিধির কয়েকটি ধারার মামলায় (নং-১৩) আসামি দেখানো হয়েছে। সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মাহফুজ আলম দাবি করেন, ডা. মিল্লাত ওই নাশকতার মামলায় তদন্তে পাওয়া আসামি। মঙ্গলবার বিকালে তাকে আদালতের মাধ্যমে বগুড়া জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

অন্যদিকে বগুড়া শহরের স্বনামধন্য হোমিও চিকিৎসক ও অধ্যক্ষ ডা. এস এম মিল্লাত হোসেনকে মামলা না থাকার পরও এভাবে আটক এবং প্রকাশ্যে মারধর করে পুলিশে দেওয়ার ঘটনায় সাধারণ জনগণের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগী জানান, তাদের সামনে ডা. মিল্লাতকে টেনেহিঁচড়ে চেম্বার থেকে নিয়ে যাওয়ায় তারা হতবাক হয়েছেন। কেউ অপরাধী হলে তাকে আটক করে পুলিশে খবর দিয়ে গ্রেফতার করানো যায়। কিন্তু কাউকে এভাবে প্রকাশ্যে মারপিট করে পুলিশে দেওয়া কোনও আইনের মধ্যে পড়ে না। এটা ভবিষ্যতে দৃষ্টান্ত হতে পারে।

/এফআর/
সম্পর্কিত
শিরক অজুহাতে কেটে ফেলা হয়েছে শতবর্ষী বট গাছ 
টাকার বিনিময়ে অন্যের হয়ে এসএসসি পরীক্ষা দিতে আসা দুই জন আটক
ছেলের মারধরে আহত বাবা বললেন ‘আগে জানলে এমন পোলা জন্মই দিতাম না’
সর্বশেষ খবর
নারীদের নিয়ে কটূক্তিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি
নারীদের নিয়ে কটূক্তিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি
অসুস্থ মাকে দেখতে স্কয়ার হাসপাতালে ডা. জুবাইদা রহমান
অসুস্থ মাকে দেখতে স্কয়ার হাসপাতালে ডা. জুবাইদা রহমান
তরুণদের রাজনীতিতে আরও বেশি অংশগ্রহণের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
তরুণদের রাজনীতিতে আরও বেশি অংশগ্রহণের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
তিন দিন পর ভোলার সব রুটে বাস চলাচল শুরু
তিন দিন পর ভোলার সব রুটে বাস চলাচল শুরু
সর্বাধিক পঠিত
প্রাথমিকে আরও একটি অধিদফতর হচ্ছে
প্রাথমিকে আরও একটি অধিদফতর হচ্ছে
চেম্বার থেকে নারী চিকিৎসককে টেনেহিঁচড়ে রাস্তায় এনে মারধর
চেম্বার থেকে নারী চিকিৎসককে টেনেহিঁচড়ে রাস্তায় এনে মারধর
এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদের চাপে আওয়ামীপন্থি ৬ প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল
এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদের চাপে আওয়ামীপন্থি ৬ প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল
ঈদুল আজহায় ছুটি ১০ দিন, দুই শনিবার খোলা থাকবে অফিস
ঈদুল আজহায় ছুটি ১০ দিন, দুই শনিবার খোলা থাকবে অফিস
আইএমএফ-বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈঠক শেষ, কিস্তি ছাড়ে কী সিদ্ধান্ত হলো?
আইএমএফ-বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈঠক শেষ, কিস্তি ছাড়ে কী সিদ্ধান্ত হলো?