রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বাম সংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নেতাকর্মীরা গায়ে পড়ে হাতাহাতি শুরু ও জ্বলন্ত মশাল ছুড়ে মেরে কয়েকজনকে আহত করেছে বলে অভিযোগ করেছে ‘শাহবাগবিরোধী ঐক্য’। বুধবার (২৮ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেট চত্বরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করে সংগঠনটি। একই স্থানে দুপুর সোয়া ১২টায় পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। তারা বলছেন, তাদের কর্মসূচিতে ‘শাহবাগবিরোধী ঐক্যের’ ব্যানারে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছেন। এতে ছাত্র জোটের পাঁচ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
শাহবাগবিরোধী ঐক্যের সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র মিশনের আহ্বায়ক জি এ সাব্বির বলেন, ‘তথাকথিত গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের ব্যানারে বাম-শাহবাগী গোষ্ঠী মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মশাল মিছিল ডাকে। আমরা আমাদের পূর্বঘোষিত শাহাবাগবিরোধী কর্মসূচিতে পরিবহন চত্বরে আসার পর সবার উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিচ্ছিলেন শাহবাগবিরোধী ঐক্যের বিভিন্ন সংগঠক ও নেতৃবৃন্দ। ঠিক তখন পেছন থেকে বাম সংগঠনের কয়েকজন মশালধারী আমাদের শিক্ষার্থীদের রাজাকার, জামাআত-শিবির বলে বুলিং করে। তারা স্লোগান দিয়ে বারবার মশাল নিয়ে আমাদের দিকে তেড়ে আসে। ইচ্ছে করেই একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে ভিক্টিম কার্ড খেলার পুরোনো চেষ্টা চালায় বাম-শাহবাগী গোষ্ঠী।’
ছাত্র জোটের মশালমিছিলে শিবিরের হামলার অভিযোগের বিষয়ে শাহবাগবিরোধী ঐক্যের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘বিগত সময়ে ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলসহ অধিকাংশ ছাত্রসংগঠন শাহবাগীদের রোষানলে ছিল। আমরা শাহাবাগবিরোধী কর্মসূচি ঘোষণা করলে সেখানে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা সংহতি জানান। তারা হামলার ঘটনায় জড়িত নন। বরং ছাত্র জোট আমাদের ওপর হামলা চালায় এবং জ্বলন্ত মশাল ছুড়ে মেরে কয়েকজনকে আহত করেছে।’
পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র গণমঞ্চের আহ্বায়ক নাসিম সরকার বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ড থেকে জামায়াতের নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের খালাসের প্রতিবাদে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মশাল মিছিল ডাকে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। একই সময়ে ছাত্রশিবির একটি আনন্দ মিছিল বের করে পরিবহন মার্কেটে বামপন্থিদের আড্ডাস্থলকে ঘিরে বারবার প্রদক্ষিণ করতে থাকে। আমরা তাদের কর্মসূচি সমাপ্ত হওয়ার অপেক্ষা করতে থাকি। তাদের কর্মসূচি শেষ হওয়ার ৪৫ মিনিট পর রাত সোয়া ৮টায় মিছিল শুরু করি আমরা। সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রশিবিরের প্রচার সম্পাদক ও ছাত্র মিশনের আহ্বায়কসহ আরও অনেকের নেতৃত্বে ২০০ জন কর্মী আমাদের দিকে তেড়ে আসে এবং ইটপাটকেল, চেয়ার ও লাঠি ছুড়ে মারতে শুরু করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা উত্তেজিত না হয়ে সংঘর্ষ এড়িয়ে মিছিল নিয়ে সামনে অগ্রসর হই। পরবর্তীতে মিছিল নিয়ে আমরা বুদ্ধিজীবী চত্বর সংলগ্ন প্যারিস রোডে পৌঁছালে আরও দুই দফা হামলা করা হয়। এ সময় তাদের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে আমাদের মিছিলে থাকা প্রায় সবাই কমবেশি আহত হই। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র গণমঞ্চের আহ্বায়ক নাসিম সরকারকে মাটিতে ফেলে এলোপাতাড়ি লাথি ও ঘুষি মারা হয়। বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের সংগঠক তারেক আশরাফকে ইটের আঘাতে রক্তাক্ত করা হয়। এ ছাড়া ছাত্র ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ কাইসার আহমেদ, দফতর সম্পাদক আহমেদ ইমতিয়াজ সৈকত আহত হন।’
প্রক্টরিয়াল বডির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে নাসিম সরকার বলেন, ‘চব্বিশের অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ কায়দায় এই ভয়াবাহ সন্ত্রাসী হামলার বিচার চাইতে আমরা প্রক্টর অফিসে যাই। সেখানে গিয়ে দেখতে পাই প্রক্টরিয়াল বডি চা চক্রে বসে সিসিটিভি ফুটজ দেখছে। এত বড় হামলার ঘটনা ঠেকানোর তারা কোনও চেষ্টাই করেননি। পরিবহন চত্বরে হামলা পরে আরও দুই দফা হামলা করা হয়। প্রক্টরিয়াল বডি তৎক্ষণাৎ পদক্ষেপ নিলে আমাদের সহযোদ্ধারা এভাবে রক্তাক্ত হতো না। প্রক্টরিয়াল বডি শুরুতে একটা পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলাকে মারামারি হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। হামলাকারীদের সঙ্গে কথা না বলে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয় বলেও জানায়। শুধু তাই নয়, যারা বিনা উসকানিতে আমাদের ওপরে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে, তাদের সঙ্গে আমাদেরকে সাংলাপে বসানোর চেষ্টা চালায় প্রক্টরিয়াল বডি।’
হামলার অভিযোগে মঙ্গলবার রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর দুই পক্ষ লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে এখনও কারও বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, ‘আমরা দুই পক্ষের অভিযোগ পেয়েছি। আমি ক্যাম্পাসের বাইরে থাকায় বিষয়টি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাইনি। তবে আমাদের প্রক্টরিয়াল বডি কাজ করছে। ক্যাম্পাসে এখন পর্যন্ত যেহেতু ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হয়নি, সেহেতু সবাই সবার মতো কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। কেউ কাউকে কোনও বাধা দেবে না। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ এবং ভিডিগুলো দেখে তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।’