X
বুধবার, ০৭ মে ২০২৫
২৪ বৈশাখ ১৪৩২

প্লাস্টিকের বোতল প্রক্রিয়াজাত করে স্বাবলম্বী

নীলফামারী প্রতিনিধি
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১২:৫৪আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৪:১১





প্লাস্টিকের বোতল ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক বোতল প্রক্রিয়াজাত ও পুনরায় বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী শফিকুল ইসলাম কালু। পাশাপাশি এ কাজে যুক্ত হয়েছেন অনেক বেকার নারী-পুরুষ। তার কারখানার নাম বিসমিল্লাহ প্লাস্টিক (রিসাইক্লিং)। নীলফামারী জেলা সদরের ইটাখোলা ইউনিয়নের বাদিয়ার মোড় অধিকারীপাড়া গ্রামে তার কারখানা।

২০০৭ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর তার বাম পায়ে অস্ত্রোপচার করা হয়। তখন একেবারে বেকার হয়ে পড়েন তিনি। উপায় না পেয়ে বাবার দেওয়া ৫ শতাংশ জমি বিক্রি করেন। সেই তহবিল দিয়ে প্রথমে ফেরিওয়ালার (হকার) কাছ থেকে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল কেনেন। পরে সেগুলো সৈয়দপুরে মহাজনের কাছে বিক্রি শুরু করেন। এরপর ধীরে ধীরে ব্যবসার উন্নতি হলে রিসাইকিক্লং মেশিন কিনে যাত্রা শুরু হয় কাটিংয়ের (চিপ) কাজ।

বর্তমানে এসব পণ্য ঢাকার ইসলামবাগ, ভারত, চীনসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হচ্ছে। তিনি জানান, ভারতে এগুলো দিয়ে প্লাস্টিকের সুতা তৈরি করা হয়।

একই এলাকার নুরি এন্টারপ্রাইজের মালিক আনোয়ার হোসেনও প্লাস্টিকের বোতল প্রক্রিয়াজাত করেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রক্রিয়াজাতের পর ওইসব কাঁচামাল দিয়ে তার কারখানায় গৃহস্থালির বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা হয়।’
প্লাস্টিকের বোতল প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানিয়ে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ব্যবসার আরও প্রসার করা সম্ভব হবে। স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এতে গ্রামের মানুষের বেকারত্ব দূর হবে। ’

এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক খালেদ রহীম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশীয় পণ্য উৎপাদন করে স্থানীয় বাজারে বাজারজাত করা একটি ভালো উদ্যোগ। এ জাতীয় ব্যবসায়ীদের সরকারিভাবে আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার সুযোগ থাকলে তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তাদের ব্যাংক ঋণসহ সব সুবিধা দেওয়া যেতে পারে।’

জেলা সদর ছাড়াও ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরগঞ্জ,  বিষেশ করে বাণিজ্যিক শহর সৈয়দপুরে এ ধরনের ছোট-বড় অনেক কারখানা গড়ে উঠেছে।

শারীরিক প্রতিবন্ধী কালু প্রায় ১২ বছর ধরে ওই ব্যবসায় (রিসাইক্লিং) জড়িত। তিনি বলেন, ‘গ্রাম ঘুরে ফেরিওয়ালারা চানাচুর, আচার, সুঁই-সুতা ও চকলেটের বদলে এসব প্লাস্টিকের বোতল ও ভাঙ জিনিসপত্র কেনেন। পরে কেজি দরে তা আমাদের কাছে বিক্রি করেন। প্রকারভেদে প্রতি কেজি ২০ থেকে ২৬ টাকায় বিক্রি করেন তারা।’

শারীরিক প্রতিবন্ধী কালু জানান, এগুলো কারখানায় এনে বাছাই করে প্রকার ও রঙ ভেদে আলাদা করে মেশিনের সাহায্যে তা প্রক্রিয়াজাত (কাটিং) করে পাউন্ড হিসেবে বিক্রি করা হয়। প্রক্রিয়াজাত করার পর তা প্রতি কেজি ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করা হয়। প্রতি মাসে তার আয় হয় লক্ষাধিক টাকা। আনুষঙ্গিক খরচ বাদ দিয়ে লাভ থাকে অর্ধেকের বেশি।

প্লাস্টিকের বোতল ওই কারখানার শ্রমিক আমিনা বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখানে কাজ করে অভাবের সংসারে ছেলে-মেয়ের খাওয়া-দাওয়া ও লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছি।’

একই কারখানার শ্রমিক শাহানাজ বেগম বলেন, ‘এসব ফেলে দেওয়া পণ্য থেকে বয়াম, জগ, চেয়ার, প্লাস্টিকের সুতা, বয়ামের ঢাকনা, বালতি, বাইসাইকেলের পাদানিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি হচ্ছে। গ্রামের নারীরা এ কাজে যুক্ত হয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন।’

কারখানার মালিক কালু জানান, প্রতিদিন প্রায় ১০-১২ জন শ্রমিক এখানে কাজ করেন। দিনশেষে প্রত্যেককে ১৫০ টাকা করে দিতে হয়।’

 

/এনআই/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মোহাম্মদপুরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে শিশুসহ দগ্ধ ৩
মোহাম্মদপুরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে শিশুসহ দগ্ধ ৩
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হল থেকে মাদকদ্রব্য উদ্ধার, অভিযুক্ত ৪
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হল থেকে মাদকদ্রব্য উদ্ধার, অভিযুক্ত ৪
‘তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে নিয়েও তাকে বাঁচানো যায়নি’
‘তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে নিয়েও তাকে বাঁচানো যায়নি’
কলাপাড়ায় খাল থেকে অজ্ঞাত নারীর লাশ উদ্ধার
কলাপাড়ায় খাল থেকে অজ্ঞাত নারীর লাশ উদ্ধার
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য আসছে নতুন আইন
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য আসছে নতুন আইন
ঈদুল আজহায় ছুটি ১০ দিন, দুই শনিবার খোলা থাকবে অফিস
ঈদুল আজহায় ছুটি ১০ দিন, দুই শনিবার খোলা থাকবে অফিস
৩০ পেরোনোর পর বলিরেখা আটকাতে এই ৫ টিপস মেনে চলা জরুরি
৩০ পেরোনোর পর বলিরেখা আটকাতে এই ৫ টিপস মেনে চলা জরুরি
সার্বভৌমত্ব রক্ষার ডাক আসিফ-হাসনাতের
সার্বভৌমত্ব রক্ষার ডাক আসিফ-হাসনাতের
শব্দচয়ন ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’, হেফাজতের দুঃখপ্রকাশ
শব্দচয়ন ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’, হেফাজতের দুঃখপ্রকাশ