কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গ্রেফতার ও পলাতকসহ সাত জন জড়িত বলে জানিয়েছে তদন্ত কমিটি। এই ঘটনায় আরও যারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করতে গ্রেফতারদেরকে রিমান্ডে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালে দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কামরুল ইসলাম এই তথ্য জানান।
তিনি বলেন, আগামী সপ্তাহের প্রথম দিকে দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডে তদন্ত কমিটির সদস্যরা লিখিতভাবে প্রতিবেদন দাখিল করবেন।
তিনি আরও বলেন, প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক তিন সদস্যের কমিটি তাদের তদন্ত কাজ শেষ করেছেন। আগামী সপ্তাহের রবি অথবা সোমবার লিখিতভাবে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। এখন কমিটি যা পেয়েছে তাতে করে প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় মূল হোতা হিসেবে মোট সাত জনের নাম উঠে এসেছে। তাদের মধ্যে ছয় জনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করেছে। বাকি একজন বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে গেছে। গ্রেফতারদের রিমান্ডে নেওয়া এই ঘটনায় আরও কারা জড়িত তার খোঁজ মিলবে।
বোর্ডের চেয়ারম্যান আরও বলেন, এই ঘটনায় কোনোভাবেই ট্যাগ কর্মকর্তা দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারেন না। তাকে মন্ত্রণালয় থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, তদন্তে প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব লুৎফর রহমান, ইংরেজি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক আমিনুর রহমান, ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক জোবাইর রহমান, কৃষি বিজ্ঞানের শিক্ষক হামিদুল ইসলাম, বাংলা শিক্ষক সোহেল চৌধুরী, অফিস সহকারী আবু হানিফ ও পিয়ন সুজন মিয়ার নাম উঠে এসেছে। তবে ঘটনার পর ওই বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী আবু হানিফ পলাতক রয়েছেন।
গত ২০ সেপ্টেম্বর কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারী উপজেলার নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ইংরেজি প্রথমপত্র ও ইংরেজি দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠে। এরপর ওই কেন্দ্রের সচিব লুৎফর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রশ্নপত্র ফাঁসের কথা স্বীকার করেন তিনি। পরে তার আলমারি থেকে গণিত (আবশ্যিক), উচ্চতর গণিত, কৃষিশিক্ষা, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পাওয়া যায়।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা জানতে পেরে প্রতিবেদন দিলে ঘটনাস্থলে তদন্ত করতে যায় কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারা। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় ২০ সেপ্টেম্বর রাতে ট্যাগ অফিসার ও কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আদম মালিক চৌধুরী বাদী হয়ে গ্রেফতার চার জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১০-১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
পরদিন ২১ সেপ্টেম্বর দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. কামরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে গণিত, পদার্থ বিজ্ঞান, কৃষি বিজ্ঞান ও রসায়ন পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। পরদিন ২২ সেপ্টেম্বর স্থগিত হওয়া চারটি পরীক্ষার নতুন সময়সূচি ঘোষণা করা হয়। একইসঙ্গে জীব বিজ্ঞান (তত্ত্বীয়) ও উচ্চতর গণিতের (তত্ত্বীয়) প্রশ্নপত্র বাতিল করা হয়। ওই দিনই এই ঘটনায় দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক ফারাজ উদ্দিন তালুকদারকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন শিক্ষাবোর্ডের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক হারুন অর রশীদ মন্ডল ও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা রংপুর বিভাগীয় উপ-পরিচালক আখতারুজ্জামান। কমিটিকে এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়।
/টিটি/