X
বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪
২৫ বৈশাখ ১৪৩১

সরল সুদের কথা বলে ৯৭ কোটি টাকা ঋণ দিয়ে চক্রবৃদ্ধি হারে আদায়, রূপালী ব্যাংকের শাখা ঘেরাও

দিনাজপুর প্রতিনিধি
০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০৪আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০৪

সরল সুদের কথা বলে ৯৭ কোটি টাকা ঋণ দিয়ে চক্রবৃদ্ধি হারে আদায়ের অভিযোগে রূপালী ব্যাংকের শাখা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ অবস্থায় কেটে নেওয়া অর্থ ফেরত দেওয়ার দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এটি ব্যাংকের প্রতারণা। যদিও এ ব্যাপারে কথা বলতে চাননি ব্যাংকের কর্মকর্তারা। 

মঙ্গলবার (০৫ সেপ্টেম্বর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রূপালী ব্যাংকের শাখার সামনে বিক্ষোভ করেন ঋণ নেওয়া শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। শাখা ঘেরাও করার ফলে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কার্যালয়ে প্রবেশ করতে পারেননি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরে রূপালী ব্যাংকের রংপুর জোনাল অফিসের ব্যবস্থাপক আবুল হাসান এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় ও রূপালী ব্যাংকের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার মধ্যে ২০০ কোটি টাকার ঋণ চুক্তি হয়। এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে তৎকালীন রেজিস্ট্রার ড. সফিউল আলম এবং রূপালী ব্যাংক বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পক্ষে ব্যবস্থাপক পবিত্র কুমার রায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৮০ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী চুক্তির আওতায় ৯৭ কোটি টাকা ঋণ নেন। ঋণ দেওয়ার সময়ে তাদের বলা হয়েছিল, ৯ শতাংশ সরল সুদে ১৮০টি কিস্তির মাধ্যমে ১৫ বছরে টাকা কেটে নেওয়া হবে। এতে মাসে প্রতি লাখে ১০১৫ টাকা করে দিতে হবে। ২০২২ সালের আগস্ট মাসে ব্যাংকে গিয়ে তারা জানতে পারেন, ৯ শতাংশ সরল সুদে নয়; বরং চক্রবৃদ্ধি হারে টাকা আদায় করা হচ্ছে। এরপর তারা রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একই নিয়মে দেওয়া ৬০ কোটি টাকার ঋণের কাগজপত্র যাচাই করেন। তখন প্রতারণা দেখতে পান। এরপর ঋণগ্রহীতারা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান। বিষয়টি জানার পর রূপালী ব্যাংকে চিঠি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। চক্রবৃদ্ধি হারে যে টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে, তা সমন্বয় করার পাশাপাশি ৯ শতাংশ সরল সুদ থেকে ৮ শতাংশ করতে বলা হয়। রূপালী ব্যাংক বিষয়টি সমাধানের আশ্বাসও দেয়।

ঋণগ্রহীতাদের অভিযোগ, গত বছর থেকে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সমাধানের কথা বলে আসছে। কিন্তু এখনও চক্রবৃদ্ধি হারে যে অর্থ নেওয়া হয়েছে, তা ফেরত দেয়নি। সর্বশেষ গত ৩ আগস্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা ২০ দিনের মধ্যে টাকা ফেরত দেওয়ার সময় চান। শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অতিরিক্ত আরও ১০ দিন সময় বেঁধে দেন। ৪ সেপ্টেম্বর ওই সময় শেষ হয়। এরপরও টাকা ফেরত না দেওয়ায় মঙ্গলবার সকালে ব্যাংকের শাখা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

ঋণ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী বাবলী বেগম বলেন, ‘সরল সুদের কথা বলে আমাদের ঋণ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ব্যাংক আমাদের কাছ থেকে চক্রবৃদ্ধি হারে টাকা কেটে নিচ্ছে। গত ৩ আগস্ট তারা আমাদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য ২০ দিন সময় চেয়েছিল। আমরা আরও ১০ দিন বেশি দিয়েছি। কিন্তু টাকা ফেরত না দেওয়ায় আমাদের আজকের অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ। দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা টাকা ফেরত চাই।’

একই কথা বলেছেন ঋণ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী মোখলেসুর রহমান বাবু। তিনি বলেন, ‘সরল সুদে ২০১৮ সালে ১১ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। মাসে সাড়ে ১১ হাজার টাকা করে কিস্তি কেটে নেওয়া হচ্ছে। পাঁচ বছর কিস্তি নেওয়ার পরও আমার কাছে এখনও ব্যাংক পাবে ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ নেওয়ার জন্য এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ঋণ পরিশোধ করতে করতে আমি দেউলিয়া হয়ে গেছি।’

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাকিম বলেন, ‘সরল সুদের কথা বলে আমাদের কাছ থেকে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ নেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি জানার পর আমরা সমাধানের কথা বলি। কিন্তু তারা আমাদের টাকা ফেরত দেবে না বলে জানায়। আমি ১৭ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলাম, এখন হয়েছে ২৩ লাখ। মাঝে যে পাঁচ বছর কিস্তি পরিশোধ করলাম, সেই টাকা গেলো কই। পুরাই চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ।’

ঋণ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক নওশের ওয়ান বলেন, ‘৯ শতাংশ সরল সুদে হওয়ার কথা থাকলেও আমাদের কাছ থেকে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ নেওয়া হচ্ছে। পরে রুয়েটের শিক্ষকদের দেওয়া ঋণের কাগজপত্র দেখে বিষয়টি জানতে পারি। আমাদের কাছ থেকে যে অতিরিক্ত অর্থ নেওয়া হয়েছে, তা দেওয়া হচ্ছে না। যদিও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আমাদের আশ্বস্ত করেছে টাকা ফেরত দেবে। কিন্তু এখনও দেয়নি।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবেন না বলে জানালেন রূপালী ব্যাংকের রংপুর জোনাল অফিসের ব্যবস্থাপক আবুল হাসান। তবে এ ঘটনায় পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানান তিনি।

চুক্তি ও ঋণের বিষয়টি মূলত যেসব বিভাগ বা যাদের ওপর বর্তায় তার মধ্যে রয়েছে রেজিস্ট্রার, অডিট ও হিসাব শাখা। চুক্তিতে স্বাক্ষর করার সময় দায়িত্বরত রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. সফিউল ইসলামের মৃত্যু হয়েছে। সেসময় থেকে দায়িত্বে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিট শাখার উপপরিচালক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন।

তিনি বলেন, ‘ব্যাংক আমাদেরকে এই টাকা ফেরত দিক, এটাই আমাদের চাওয়া। যদি ফেরত না দেয়, তাহলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। চুক্তির যাবতীয় কাগজপত্র আমরা রেডি করে দিয়েছি, কমিটিতে পর্যবেক্ষণ করানো হয়েছে। এর দায়ভার ব্যাংকের। ব্যাংক আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। একই নিয়মে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঋণ নিয়েছেন, তাদের কাছ থেকে সুদ নেওয়া হচ্ছে এক নিয়মে, আর আমাদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে চক্রবৃদ্ধি হারে। এটি মানা যায় না।’

/এএম/
সম্পর্কিত
রূপালী ব্যাংকের মান্ডা উপশাখার উদ্বোধন
শর্ত পূরণ করেও বৃত্তি পান না হাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা
র‍্যাগিংয়ের অভিযোগে বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য সড়ক অবরোধ
সর্বশেষ খবর
মঙ্গোলিয়ার দাবাড়ুকে হারিয়ে ফাহাদের মুখে হাসি
মঙ্গোলিয়ার দাবাড়ুকে হারিয়ে ফাহাদের মুখে হাসি
চেয়ারম্যান হলেন ৯ এমপির স্বজন, হেরেছেন দুজন
চেয়ারম্যান হলেন ৯ এমপির স্বজন, হেরেছেন দুজন
পিছিয়ে পড়েও জোসেলুর জোড়া গোলে ফাইনালে রিয়াল
চ্যাম্পিয়নস লিগপিছিয়ে পড়েও জোসেলুর জোড়া গোলে ফাইনালে রিয়াল
চেয়ারম্যান হলেন এমপির ছেলে ও ভাই
চেয়ারম্যান হলেন এমপির ছেলে ও ভাই
সর্বাধিক পঠিত
শনিবারে স্কুল খোলা: আন্দোলন করলে বাতিল হতে পারে এমপিও
শনিবারে স্কুল খোলা: আন্দোলন করলে বাতিল হতে পারে এমপিও
‘চুন্নু স্বৈরাচারের দোসর’, বললেন ব্যারিস্টার সুমন
‘চুন্নু স্বৈরাচারের দোসর’, বললেন ব্যারিস্টার সুমন
এক লাফে ডলারের দাম বাড়লো ৭ টাকা
এক লাফে ডলারের দাম বাড়লো ৭ টাকা
ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর ইস্যুতে ন্যাটোকে রাশিয়ার সতর্কতা
ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর ইস্যুতে ন্যাটোকে রাশিয়ার সতর্কতা
ইউক্রেনে পাঠালে ফরাসি সেনাদের নিশানা করার হুমকি রাশিয়ার
ইউক্রেনে পাঠালে ফরাসি সেনাদের নিশানা করার হুমকি রাশিয়ার