কুড়িগ্রাম জেলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়াসমিন আরা হকের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের শিক্ষার্থী ভর্তিতে জালিয়াতির সত্যতা পেয়েছে শিক্ষা বিভাগ। কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার (ডিইও) মো. শামসুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে স্কুলটিতে ভর্তি জালিয়াতি নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এরপরই নড়েচড়ে বসে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরসহ স্থানীয় প্রশাসন। পরে মাউশির নির্দেশে অভিযোগের তদন্ত করেন ডিইও। তদন্তে বিধিবহির্ভূতভাবে শিক্ষার্থী ভর্তির সত্যতা পান তিনি।
ডিইও শামসুল আলম বলেন, ‘সংবাদ প্রকাশের পর মাউশির মৌখিক নির্দেশ এবং রংপুর বিভাগীয় উপপরিচালকের লিখিত নির্দেশে ভর্তি জালিয়াতির অভিযোগ তদন্ত করেছি। তদন্তে বিধিবহির্ভূতভাবে ৭ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সত্যতা মিলেছে। প্রধান শিক্ষকের একক সিদ্ধান্তে লটারির তালিকাবহির্ভূত ওই শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা হয়েছে বলে ভর্তি কমিটির দেওয়া প্রতিবেদন ও নথিতে প্রমাণ মিলেছে।’
এভাবে শিক্ষার্থী ভর্তির বৈধতা প্রশ্নে ডিইও বলেন, ‘বর্তমান নীতিমালা ও নির্দেশনা মোতাবেক লটারির ফলাফলের বাইরে একজন শিক্ষার্থীও ভর্তির কোনও সুযোগ নেই। শুধু সরকারি কর্মচারীদের বদলিজনিত কারণে তাদের সন্তানদের বছরের অন্য সময় ভর্তি করার সুযোগ রয়েছে। তবে সেটাও প্রধান শিক্ষক একক সিদ্ধান্তে পারেন না। যেভাবে ওই ৭ শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ অবৈধ।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক বলেছেন তিনি ভুলবশত ৭ শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়েছেন। বাঁচার জন্য এভাবে বলাটা স্বাভাবিক।’
এর আগে তালিকাবহির্ভূত শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়টি অস্বীকার করেছিলেন প্রধান শিক্ষক জিয়াসমিন আরা হক। তবে মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ওই ৭ শিক্ষার্থীকে বিধিবহির্ভূতভাবে ভর্তি করা হয়েছিল বলে স্বীকার করেন। প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘ভর্তিগুলো বাতিল করা হয়েছে। ওগুলো বাতিল করে আমরা অপেক্ষমাণ তালিকা প্রকাশ করেছি।’
ভর্তি কমিটির একাধিক সদস্যসহ কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, ‘এভাবে তালিকাবহির্ভূত শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে ভর্তি কমিটির সদস্যরা আপত্তি জানিয়েছিলেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক লিখিত নির্দেশ দিয়ে ওই শিক্ষার্থীদের ভর্তি করাতে বাধ্য করেন। তিনি শিক্ষকদের বারণ আমলে নেননি। বরং জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে ওই শিক্ষার্থীদের ভর্তি করান।’
তদন্তে ভর্তি জালিয়াতির সত্যতা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা, রংপুর কার্যালয়ের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে মাউশির মহাপরিচালক বরাবর প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। এখন মহাপরিচালক পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে উপপরিচালক বলেন, ‘এভাবে শিক্ষার্থী ভর্তির কোনও সুযোগ নেই। কোটাভুক্ত হলেও তা লটারির ফলাফলে আসতে হবে।’
প্রসঙ্গত, কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে ২০২৪ সালে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে প্রভাতি ও দিবা শিফটে ‘ক’ ও ‘খ’ শাখা মিলে মোট ২২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সে অনুযায়ী কেন্দ্রীয় লটারির মাধ্যমে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। গত ৩ ডিসেম্বর শিক্ষার্থী ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয় । ভর্তি কার্যক্রমের প্রথম দিনেই প্রধান শিক্ষক তাড়াহুড়ো করে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৬ জন ও নবম শ্রেণিতে একজন শিক্ষার্থীকে ভর্তির সুপারিশ করেন। কিন্তু এদের কেউই লটারিতে ভর্তির সুযোগ পায়নি। এমনকি এক শিক্ষার্থী অনলাইনে আবেদনও করেনি। ওই ৭ শিক্ষার্থীর মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণির চার শিক্ষার্থী কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের চার শিক্ষকের সন্তান।
ভর্তি কমিটির সদস্য শিক্ষকরা এতে আপত্তি জানালে প্রধান শিক্ষক জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে নিয়েছেন জানিয়ে তাদেরকে ভর্তি করাতে বলেন। পরে ওই ৭ শিক্ষার্থীর ৬ জনকে প্রভাতি শিফটে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ‘ক’ শাখায় ও অপর একজনকে নবম শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়।