X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১
লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ

ভবন নির্মাণে ব্যয় ৫ কোটি, নেই নকশা অনুমোদন ও দরপত্র

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর
২২ জানুয়ারি ২০২৪, ০৩:৩০আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ০৩:৩৮

রংপুর নগরীর সেন্ট্রাল রোডে অবস্থিত এমপিওভুক্ত লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছয় তলা ভবন অবৈধভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। নেওয়া হয়নি সিটি করপোরেশনের কোনও অনুমোদন। নির্মাণকাজে কোনও দরপত্র বা কোটেশন আহ্বান করা হয়নি। এ ছাড়া করপোরেশন থেকে নকশা অনুমোদনও নেওয়া হয়নি। অথচ নির্মাণ খাতে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৫ কোটি টাকা।

এ ছাড়া এক ব্যক্তির নামে ৫০ লাখ টাকা করে বিভিন্ন সময়ে পাঁচ কোটি টাকার চেক প্রদান করা, অবৈধভাবে ভবন নির্মাণ করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে কেনা জমির মূল্য নির্ধারণে জ্বালিয়াতিসহ শিক্ষক নিয়োগে চরম অনিয়ম দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগও উঠেছে।

অভিযোগ উঠেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা (মাউশি) অধিদফতর, শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগ শিক্ষক এবং লায়ন্স ক্লাবের সদস্যদের না জানিয়ে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। এতে সরকারি নিয়মবিধিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হয়েছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, নগরীর নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থৗর সংখ্যা হাজার হাজার। এমপিওভুক্ত এ প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগ শিক্ষক সরকারের দেওয়া শতভাগ বেতন পান। শুধু শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন থেকেই কোটি কোটি টাকা আয় হয়। অথচ এ আয়ের অর্থ ব্যয় করার ক্ষেত্রে সরকারি কোনও নিয়মনীতি অনুসরণ করা হয়নি।

গত দুই বছর ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রবেশদ্বারে অপরিকল্পিতভাবে ৬ তলাবিশিষ্ট এই ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ভবনে কোটি ক্লাসরুম, কোনটি সাধারণ কক্ষ, তা বোঝার উপায় নেই বলে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন। ভবনটি নির্মাণ করার সময় শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমোদন নেওয়া হয়নি। ভবনটির নকশা অনুমোদন নেয়নি সিটি করপোরেশন থেকে এবং অভিজ্ঞ প্রকৌশলী দ্বারা ভবন নির্মাণে কোনও প্রাক্কলন ব্যয় বরাদ্দ করা হয়নি।

শুধু তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটির মাধ্যমে এই ভবন নির্মাণ দেখানো হয়েছে। যেখানে রয়েছেন লায়ন্স ক্লাবের প্রেসিডেন্ট বনি আদম বাবু ও ক্লাব সদস্য সোহেলসহ দুজন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, ক্লাব সদস্য এনামুল হক সোহেলের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে কয়েক দফায় ৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে। এসব টাকার চেকে স্বাক্ষর করেছেন স্কুল গর্ভনিং কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ রায়হান শরীফ।

অন্যদিকে ক্রীড়া কমপ্লেক্স তৈরির অনুমোদন, নকশা ও প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ না করে শিশু শ্রেণির খেলার মাঠ বন্ধ করে দিয়ে আধা পাকা টিনের ঘর নির্মাণ দেখিয়ে ৪৮ লাখ টাকা অপ্রয়োজনীয় ব্যয় দেখানো হয়েছে।

অন্যদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে ২৬ শতক জমি কেনার নামে প্রতি শতক ১৩ লাখ টাকা দাম নির্ধারণ করে ৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকার বায়না দলিল করা হলেও, জমির মালিক ছাড়া তৃতীয় পক্ষকে দুই দফায় ৪৮ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। অথচ জমি রেজিস্ট্রেশন করার সময় জমির দাম দেখানো হয়েছে প্রতি শতাংশ ৬ লাখ করে, যা মাত্র ১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। আবার জমির মালিক মিলি বিশ্বাস দুই দফায় পেয়েছেন ২ কোটি ৯০ লাখ টাকা। জমি কেনায় এমন নজিরবিহিন দুর্নীতি ও অনিয়মে শিক্ষার্থী, অভিভাবক এমনকি খোদ লায়ন্স ক্লাবের কর্মকর্তারাও ক্ষুব্ধ।

লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবন নির্মাণে জমি কেনা, বায়না দলিল ও ব্যক্তির নামে চেক ইস্যুসহ সব ধরনের কাগজ এই প্রতিবেদকের হাতে সংরক্ষিত আছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে লায়ন্স ক্লাবের প্রেসিডেন্ট আজাহারুল ইসলাম দুলাল বলেন, আগের কমিটির প্রেসিডেন্ট বনিউল আদম বাবু, ক্লাব সদস্য এনামুল হক সোহেল ভবন নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ তারাই করেছেন। ছয় তলা ভবন নির্মাণ করার কোটি কোটি টাকা অর্থ কোনও ব্যক্তির নামে প্রদান নিয়মের মধ্যে পড়ে না।

তিনি আরও বলেন, লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের মতো নামকরা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের নামে সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। এই ভবন নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ, প্রাক্কলন তৈরি, সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে নকশা অনুমোদনসহ কিছুই করা হয়নি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি গর্ভনিং বডির সভাপতি হিসেবে আকবর হোসেন ও অধ্যক্ষ রায়হান শরীফ কোন ক্ষমতা বলে এনামুল হক সোহেলের নামে দুজন মিলে যৌথ স্বাক্ষর করে ৫ কোটি টাকার চেক প্রদান করেছেন, প্রশ্ন রাখেন তিনি।

রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্থপতি নজরুল ইসলাম বলেন, লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের নতুন কোনও ভবন নির্মাণের জন্য কোনও নকশা তাদের কাছে আসেনি। এসব বিষয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর বলতে পারবে।

তবে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম মো. আখতারুজ্জামান জানান, লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের নতুন ভবন নির্মাণ সম্পর্কে কিছুই জানেন না তারা। তাদের অফিসে এ নিয়ে কেউ যোগাযোগ করেনি।

অভিযোগ বিষয়ে গভর্নিং কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন বলেন, ভবন নির্মাণে কোনও অনিয়ম হয়নি। সব কাগজপত্র ঠিকই আছে বলে দাবি করেন তিনি।

প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ (বর্তমানে অবসরে) রায়হান শরীফ স্বীকার করেন, ব্যক্তির নামে পাঁচ কোটি টাকার চেক প্রদানসহ বিভিন্ন বিষয়ে কিছু ত্রুটি হয়েছে। এ ছাড়া আর কোনও বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

জানতে চাইলে লায়ন্স ক্লাবের সাবেক প্রেসিডেন্ট বদিউল আলম বাবু বলেন, আমাদের কাছে সব কাগজ পত্র আছে। তবে কী কী অসংগতি আছে, তা সাক্ষাৎ করে কথা বলতে বলেন তিনি।

লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের বর্তমান গভর্নিং বডির সভাপতি অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, আগের কমিটির সময়ে কোনও অনিয়ম হয়েছে কি না, তা তিনি ওয়াকিবহাল নন। তবে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক অধ্যাপক এস এম আব্দুল মতিন লস্কর বলেন, লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাদের কিছুই জানানো হয়নি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ভবন নির্মাণসহ কোনও বিষয় তাদের অবহিত করা হয়নি। এটা জানানো উচিত ছিল বলে মনে করেন তিনি।

/এনএআর/
সম্পর্কিত
সেন্ট জোসেফ স্কুলে তিন দিনব্যাপী লিট ফেস্টিভ্যাল শুরু
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ
সর্বশেষ খবর
শিশুর ত্বকের যত্নে বাজারে এলো ‘সিওডিল বেবি ক্রিম’
শিশুর ত্বকের যত্নে বাজারে এলো ‘সিওডিল বেবি ক্রিম’
এই গরমে ক্রিকেট খেলা অমানবিক: সাকিব
এই গরমে ক্রিকেট খেলা অমানবিক: সাকিব
সুন্দরবনের আগুন নেভাতে যোগ দিয়েছে নৌ ও বিমান বাহিনী
সুন্দরবনের আগুন নেভাতে যোগ দিয়েছে নৌ ও বিমান বাহিনী
মৌসুমের চতুর্থ হ্যাটট্রিকে রেকর্ডের কাছে রোনালদো  
মৌসুমের চতুর্থ হ্যাটট্রিকে রেকর্ডের কাছে রোনালদো  
সর্বাধিক পঠিত
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি