X
সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫
১০ চৈত্র ১৪৩১

সরকারি গুদামে ধান বিক্রিতে কৃষকের অনীহা, লক্ষ্যমাত্রা পূরণে শঙ্কা

হালিম আল রাজী, হিলি
১০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:০১আপডেট : ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:০১

দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলায় চলতি আমন মৌসুমের ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান শুরুর দেড় মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও কোনও ধান কিনতে পারেনি খাদ্য বিভাগ। ধান শুকনো হওয়া, ব্যাংক থেকে তোলাসহ গুদামে ধান দিতে গেলে নানা ঝামেলা পোহাতে হয় বলে অভিযোগ কৃষকদের। আবার সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে খোলাবাজারে বেশি দাম পাওয়ায় গুদামে ধান দিতে অনীহা তাদের।

পাশাপাশি উৎপাদন খরচের তুলনায় দাম কম পাওয়ায় গুদামে চাল দিতে আগ্রহী নন চালকল মালিকরাও। এতে চলতি মৌসুমে ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে ধানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও চাল সংগ্রহ অভিযানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে আশাবাদী খাদ্য বিভাগ।

গত ১৭ নভেম্বর দিনাজপুর অঞ্চলে আমন মৌসুমের ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধন করা হয়। যা ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। সে অনুযায়ী হাকিমপুরে গত বছরের তুলনায় এক টাকা বাড়িয়ে ৩৩ টাকা কেজি দরে ৫৬৪ মেট্রিক টন ধান ও দুই টাকা বাড়িয়ে ৪৭ টাকা কেজিতে ১৩৭ মেট্রিক টন সেদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। এ ছাড়া ৪৬ টাকা কেজি দরে ৭৩ টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইতিমধ্যে কৃষকরা আমন ধান কাটা ও মাড়াই শেষে জমিতে আলু কিংবা সরিষা লাগিয়েছেন। বর্তমানে অধিকাংশ কৃষকের কাছে তেমন কোনও ধান নেই। তারা খোলাবাজারে ও আড়তদারের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত একমুঠো ধানও কিনতে পারেনি খাদ্য বিভাগ। 

কৃষকরা বলছেন, সরকারি মূল্যের চেয়ে বাজারে দাম বেশি পাওয়া যাচ্ছে। ধান শুকনো হতে হয় ও ব্যাংক থেকে টাকা নিতে হয়; এমন ঝামেলার কারণে খাদ্যগুদামে ধান দিতে আগ্রহ নেই তাদের। সরকার ধানের মণ এক হাজার ৩২০ টাকা নির্ধারণ করলেও বর্তমানে খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৪৫০-৫০০ টাকা।

গুদামে ধান দিতে গেলে নানা ঝামেলা পোহাতে হয় বলে অভিযোগ কৃষকদের

চালকল মালিকরা বলছেন, বেশি দামে ধান কিনে চাল উৎপাদন করতে ৫০ টাকা পড়ছে কেজি। অথচ সরকার গুদামের জন্য দাম নির্ধারণ করেছে ৪৭ টাকা। এতে লোকসান হওয়ায় গুদামে চাল দিতে আগ্রহী নন চালকল মালিকরা। লাইসেন্স বাঁচানোর তাগিদে কেউ কেউ চাল দিলেও অধিকাংশ মালিক চুক্তিবদ্ধ হননি। ১৩ জন চুক্তিবদ্ধ হলেও চাল সরবরাহ করেছেন মাত্র তিন জন। এতে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে সংশয় আছে।

সরকারি গুদামে ধান দিতে নানা ঝামেলা পোহাতে হয় বলে উল্লেখ করেছেন হিলির ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের কৃষক আসলাম হোসেন। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘তারা চায় শুকনো ধান, টাকা নিতে হয় ব্যাংক থেকে। আবার খোলাবাজারের তুলনায় দাম কম। মণ এক হাজার ৩২০ টাকা, অথচ বাজারে এক হাজার ৪৫০-৫০০ টাকা বিক্রি করছি। তাহলে কেন লোকসান দিয়ে ঝামেলা নিয়ে সরকারি গুদামে ধান দিতে যাবো।’

সরকারি গুদামে ধান দেওয়ার কেন আগ্রহ নেই কৃষকদের জানতে চাইলে একই গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, ‘ধান দিতে হয় শুকনো। আবার সরাসরি ধান নিয়ে গেলে গুদামের কর্মকর্তারা নেন না। দালাল ধরতে হয়। এজন্য ঘুষ চাওয়া হয়। আমরা মূলত ধান বিক্রি করি পরবর্তী আবাদের জন্য, মাড়াইয়ের বিল পরিশোধের জন্য। দরকার নগদ টাকার। গুদামে ধান দিলে নগদ টাকা পাওয়া যায় না। টাকা তোলার জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করতে হয়। এসব ঝামেলার কারণে সরকারি গুদামে ধান দিতে আগ্রহী নন কৃষকরা।’

হিলির আরেক কৃষক নুর ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভ্যানে করে গুদামে ধান নিয়ে যেতে হয়। এতে বাড়তি খরচ হয়। আবার শুকনো না হলে মিটার পাস নেই; এমন অজুহাতে গুদাম থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। দালালরা ঘুষ চায়, বলে টাকা দিলে পাস করিয়ে দেবে। আড়তে কিংবা বাজারে নিয়ে গেলে এসব ঝামেলায় পড়তে হয় না। কোনও কোনও ব্যাপারী বাড়ি থেকে ধান কিনে নিয়ে যান। গুদামের চেয়ে বাড়তি দাম পাচ্ছি। সবকিছু মিলিয়ে বাজারে ও আড়তে সহজে বিক্রি করতে পারায় গুদামে ধান দিচ্ছি না আমরা।’

হিলির দুদু চালকলের (হাসকিং মিল) স্বত্বাধিকারী মোস্তাফিজুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যেহেতু সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি, তাই বাধ্য হয়ে গুদামে চাল সরবরাহ করতে হবে। কিন্তু চাল সরবরাহ করে লাভ তো দূরের কথা উল্টো লোকসান গুনতে হবে। অন্যান্য বারের তুলনায় এবার ধানের দাম বেশি। চাল না দিলে সরকার কালো তালিকাভুক্ত করবে, লাইসেন্স বাতিলসহ অন্যান্য ব্যবস্থা নেবে। এসব কারণে লোকসান দিয়ে হলেও গুদামে চাল দিতে হবে। এক হাজার ৪০০ টাকা মণ ধান কিনে চালের কেজিতে খরচ পড়ছে ৫০ টাকার বেশি। অথচ সরকারি গুদামে ৪৭ টাকা কেজি দরে চাল দিতে হয়। সরকার যদি চালের দাম অন্তত ৫০ টাকা করতো তাহলে সবাই গুদামে সরবরাহ করতো। চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হতো।’

সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে খোলাবাজারে বেশি দাম পাওয়ায় গুদামে ধান দিতে অনীহা কৃষকদের

হিলির শিরীন চালকলের স্বত্বাধিকারী শামসুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হয়তো আগামীতে ব্যবসা হবে এই আশায় লোকসান দিয়ে গুদামে চাল দিচ্ছি। বর্তমানে ধানের যে দাম, তাতে উৎপাদন খরচ পড়ছে ৫০-৫১ টাকা। সেখানে সরকারি গুদাম থেকে ৪৭ টাকা পাচ্ছি। চালের মূল্য সরকারকে আরও বাড়াতে হবে।’

এ ব্যাপারে হাকিমপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক খালেদা বানু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৫৬৪ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সেদ্ধ চাল ১৩৭ টন কেনার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমরা ৩০ শতাংশ অর্থাৎ ৩৯ টন চাল কিনতে পেরেছি। এ ছাড়া আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৭৩ টন ছিল; ইতিমধ্যে তা পূরণ হয়েছে। তবে চাল সংগ্রহ শুরু হলেও এখন পর্যন্ত কোনও ধান সংগ্রহ করতে পারিনি। এর কারণ হলো ধানের সরকারি মূল্য কম। সেই তুলনায় বাজারে বেশি পাওয়ায় কৃষকরা ধান দিচ্ছেন না। সামনের দিনে যদি বাজার দর কিছুটা কমে তাহলে হয়তো লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। যেহেতু ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় আছে, হয়তো ধান সংগ্রহ করতে পারবো আমরা।’ 

যেসব মিলার চাল দেবেন না কালো তালিকাভুক্তসহ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে উল্লেখ করে খালেদা বানু বলেন, ‘যেসব মিলার চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পরও চাল দেবেন না, তাদের লাইসেন্স বাতিলসহ আইনি যেসব প্রক্রিয়া রয়েছে, সেগুলো গ্রহণ করা হবে। তবে আশা করছি, চুক্তিবদ্ধ সব মিলার চাল সরবরাহ করবেন।’

/এএম/
সম্পর্কিত
মুক্তারপুর হাটে প্রতিদিন আড়াই কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি
দিনাজপুরে তেলবাহী লরি খাদে পড়ে দুজন নিহত
রাজশাহীর আমে ১০ হাজার কোটি টাকা বাণিজ্যের আশা
সর্বশেষ খবর
মুক্তারপুর হাটে প্রতিদিন আড়াই কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি
মুক্তারপুর হাটে প্রতিদিন আড়াই কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি
টিভিতে আজকের খেলা (২৪ মার্চ, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (২৪ মার্চ, ২০২৫)
ব্যারিস্টার ফুয়াদ গ্রেফতারের খবর ভুয়া: এবি পার্টির চেয়ারম্যান
ব্যারিস্টার ফুয়াদ গ্রেফতারের খবর ভুয়া: এবি পার্টির চেয়ারম্যান
ঘুরে দাঁড়িয়ে সেমিফাইনালে ফ্রান্স ও পর্তুগাল, সঙ্গে স্পেন-জার্মানি
ঘুরে দাঁড়িয়ে সেমিফাইনালে ফ্রান্স ও পর্তুগাল, সঙ্গে স্পেন-জার্মানি
সর্বাধিক পঠিত
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন সিলেটের আহ্বায়ক গ্রেফতার
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন সিলেটের আহ্বায়ক গ্রেফতার
দুর্নীতিবাজ কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ
দুর্নীতিবাজ কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ
ব্যাংক বন্ধ হলে আমানতকারী ফেরত পাবেন সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা
ব্যাংক বন্ধ হলে আমানতকারী ফেরত পাবেন সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা
কুড়িগ্রাম থেকে সাঁতরে চাঁদপুর, লক্ষ্য বঙ্গোপসাগর ছোঁয়া
কুড়িগ্রাম থেকে সাঁতরে চাঁদপুর, লক্ষ্য বঙ্গোপসাগর ছোঁয়া
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সেই মালেকের ১৩ বছরের কারাদণ্ড
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সেই মালেকের ১৩ বছরের কারাদণ্ড