গাইবান্ধার সদর উপজেলায় কুলখানি অনুষ্ঠানের খাবার খেয়ে নারী-শিশু ও বৃদ্ধসহ কমপক্ষে দুই শতাধিক মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন নারী ও শিশুসহ দেড় শতাধিক মানুষ। চিকিৎসকরা জানান, খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণে হাসপাতালে ভর্তি অসুস্থদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সদর উপজেলার বাদিয়াখালী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের উত্তর রিফায়েতপুর চরপাড়া গ্রামে কুলখানির দাওয়াত খেয়ে কয়েক গ্রামের শিশুসহ নারী-পুরুষের অসুস্থ হওয়ার ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানায়, রিফাইতপুর গ্রামের ইজিবাইক চালক বেলাল মিয়ার মায়ের মৃত্যু হয়। সোমবার দুপুরে বেলাল মিয়া মায়ের কুলখানি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মোজাফরের বাড়ির উঠানে। দোয়া শেষে বেলালের স্বজনসহ পাঁচ শতাধিকের বেশি মানুষ ডাল, ভাত ও মাংস দিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে বাড়ি ফেরেন। কিন্তু বিকাল হতেই অধিকাংশ মানুষের পেট ব্যথা ও পায়খানা শুরু হয়। অনেকে রাতেই স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নেওয়া ছাড়াও ভর্তি হন হাসপাতালে। মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শতাধিকের বেশি মানুষ গাইবান্ধা সদর হাসপাতাল ও উদাখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছ, সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত সদর হাসপাতালে ১২৪ জন ও ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৭১ জনকে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে চিকিৎসা শেষে ৫১ জনকে ছাড়পত্র দিলে তারা বাড়ি ফিরে যান। ভর্তি রোগীদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। অবস্থার অবনতি হওয়ায় ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে দুই জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন মজিবুর রহমান বলেন, আমার পাশের বাড়িতে কুলখানির দাওয়াতে পরিবারসহ দুপুরের খাবার খাই। কিন্তু রাতে একে একে পরিবারের ছয় সদস্য পেট ব্যথা পাতলা পায়খানা হলে অসুস্থ হয়ে পড়ি। মঙ্গলবার সকালে পরিবারের সবাই হাসপাতালে ভর্তি হই। এখন চিকিৎসা নেওয়ার পর কিছুটা ভালো লাগছে।
মনোয়ারা বেগম নামে এক নারী বলেন, দুপুরে স্বামী ও ছয় বছরের ছেলেকে নিয়ে খাবার খেয়ে বিকাল অসুস্থ বোধ করি। সন্ধ্যার দিকে স্বামী ও ছেলে বেশি অসুস্থ হলে তাদের নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হই। কুলখানির দাওয়াতে কয়েক গ্রামের শিশু ও নারী-পুরুষসহ পাঁচ শতাধিকের বেশি মানুষ ভাত, ডাল ও মাংস খায়। খাবার খেয়ে বিকাল-সন্ধ্যা থেকে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এ বিষয়ে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ইনচার্জ আরিফা রাহমান বলেন, খাদ্যে বিষক্রিয়ায় কারণে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ১২৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। এর মধ্যে শিশু ও নারীর সংখ্যা বেশি। ভর্তি রোগীদের স্যালাইনসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়। সুস্থ হওয়ায় অনেকেই বাড়ি ফিরে গেছেন।
অপরদিকে, ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রফিকুজ্জামান বলেন, ফুড পয়জনিংয়ে আক্রান্ত নারী-শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ভর্তি হওয়া রোগীদের আমরা সাধ্যমতো চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। তবে দুই জনের অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাদের রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেছি।