X
শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫
১৯ বৈশাখ ১৪৩২

কুড়িগ্রামে পাওয়া যাচ্ছে না বোতলজাত সয়াবিন, মানুষের ভোগান্তি

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
০১ মার্চ ২০২৫, ২১:৪৯আপডেট : ০১ মার্চ ২০২৫, ২১:৪৯

কুড়িগ্রামের কোনও দোকানে মিলছে না বোতলজাত সয়াবিন তেল। ফলে অত্যাবশ্যকীয় এই ভোগ্যপণ্যের ভোগান্তি নিয়ে শুরু হলো ভোক্তাদের পবিত্র মাহে রমজানের যাত্রা। 

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট পরিবেশকদের কাছে তেল চেয়েও পাওয়া যাচ্ছে না। কোনও কোম্পানি বোতলজাত সয়াবিন সরবরাহ করছে না।  

শনিবার (১ মার্চ) শহরের একাধিক বাজারের পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের দোকান ঘুরে বোতলজাত সয়াবিন পাওয়া যায়নি। গ্রাহকরা বাধ্য হয়ে খোলা তেল কিনে চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করছেন। প্রতি লিটার খোলা তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। তবে খোলা তেলে অতৃপ্তি নিয়ে ঘরে ফিরেছেন ক্রেতারা।

বিক্রেতারা জানান, তারা বারবার তাগিদ দিয়েও ডিলারদের কাছে বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ পাচ্ছেন না। ক্রেতারা আসলে তাদের খোলা তেল সরবরাহ করতে হচ্ছে। প্রথমে আপত্তি করলেও কয়েক দোকান ঘুরে শেষে খোলা তেল কিনে বাড়ি ফিরছেন ক্রেতারা।

কুড়িগাম শহরের জিয়া বাজারের আমির অ্যান্ড সন্স দোকানের ব্যবসায়ী নওফেল বলেন, ‘কোম্পানিগুলো বোতলজাত সয়াবিন সরবরাহ করছে না। গ্রাহকরা বারবার বোতলজাত সয়াবিন দাবি করলেও আমরা দিতে পারছি না। বাধ্য হয়ে খোলা তেল নিচ্ছেন তারা। এমনকি আমরা নিজেরাও খোলা তেলে রান্না করে খাচ্ছি।’

কোম্পানিগুলো বোতলজাত তেল দিতে নানা শর্ত জুড়ে দিচ্ছে উল্লেখ করে এই ব্যবসায়ী আরও বলেন, ‘এক কার্টন তেল নিতে এক বস্তা প্যাকেট চাল, আটা কিংবা সরিষার তেল নেওয়ার শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন কোম্পানির প্রতিনিধিরা। এভাবে ব্যবসা করা অসম্ভব।’

শহরের বেশ কয়েকটি দোকান ঘুরে এই ব্যবসায়ীর কথার সত্যতা পাওয়া যায়। কোনও দোকানে বোতলজাত সয়াবিন মেলেনি। দুই একটি দোকানে ভেজিটেবল অয়েলের বোতল পাওয়া গেলেও তার সংখ্যা সীমিত।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, তীর, রূপচাঁদা, ফ্রেশ এবং পুষ্টি কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা (এসআর) বোতলজাত তেলের সঙ্গে চাল, আটা ও সরিষার তেল নেওয়ার শর্তে বোতলজাত সয়াবিন সরবরাহ করতে চাচ্ছেন। রাজি হলে দুই কার্টনের বেশি তেল দিতে চাইছেন না তারা। ফলে গ্রাহকরা বোতলজাত সয়াবিন পাচ্ছেন না।

শহরের মুদি দোকানি আজগর আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অন্য পণ্য নেওয়ার শর্ত ছাড়া বোতলজাত সয়াবিন মিলছে না। কোম্পানিগুলো শর্তের জালে দোকানদারদের জিম্মি করছে। ডিলারদের ফোন দিলে বলছে তেল নাই।’

একই কথা বলেছেন আরেক মুদি দোকানি মানিক ঘোষ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দুই দিন আগে রূপচাঁদা কোম্পানির এসআর এসে এক কার্টন তেলের সঙ্গে এক বস্তা প্যাকেট চাল নেওয়ার শর্ত দিয়ে গেছেন। নিতে পারি নাই। বোতলজাত সয়াবিন না থাকলেও খোলা সয়াবিন সরবরাহ স্বাভাবিক আছে।’

মানিক ঘোষের দোকানে দেখা মেলে জুয়েল নামে এক গ্রাহকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বোতলের সয়াবিন কিনতে আসছি। কোথাও পাচ্ছি না। বাধ্য হয়ে খোলা তেল কিনলাম।’

আরেক গ্রাহক রাজিয়া বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রমজান মাস আসলেই জনগণের ভোগান্তি বাড়ে। জিনিসের দাম তো বেশি হয়, সঙ্গে সংকটও তৈরি হয়। ইফতারসহ রান্নার কাজে সয়াবিনের ব্যবহার একটু বেশি হয়। সব পরিবারে একই রকম। কিন্তু বোতলের তেল কোথাও নেই। খোলা তেল নিয়ে বাড়ি ফিরছি।’

কুড়িগ্রামে ফ্রেশ সয়াবিন তেলের ডিলার দবির হোসেন। যোগাযোগ করলে তার ম্যানেজার পাপ্পু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কোম্পানি তেল না দিলে আমরা কী করবো। আমরা বারবার তেল চেয়েও পাচ্ছি না। তারা বলছে, তাদের তেলের সরবরাহ কম। আপনারা কোম্পানির সঙ্গে কথা বলেন।’

রূপচাঁদা কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি সাব্বির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা তেল পাওয়ামাত্র মার্কেটে ছাড়ছি। সরবরাহ তুলনামূলক কম হলেও আমরা আটকে রাখছি না। গত বৃহস্পতিবারও আমি নিজে জিয়া বাজারে ১০৮ কার্টন (প্রতি কার্টনে ১৬ বোতল) বোতলজাত তেল দিয়েছি। আমার কাছে প্রত্যেকটার বিক্রয় স্লিপ আছে। শনিবার পৌরবাজার ও খলিলগঞ্জ বাজারে চাহিদাপত্র নিয়েছি। রবিবার সরবরাহ করবো।’

দোকানদারদের অভিযোগের বিষয়ে এই বিক্রয় প্রতিনিধি বলেন, ‘বোতলজাত তেলের চেয়ে খোলা বিক্রিতে লাভ বেশি। দোকানিরা বোতলের তেল খুলে বিক্রি করছেন কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা উচিত।’

এদিকে, তেল নিয়ে তেলেসমাতি চললেও ভোক্তাদের ভোগান্তি নিরসনে বন্ধ থাকা সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য বিক্রি শুরু হয়নি। বোতলজাত সয়াবিনের সঙ্কটের বিষয়টি জেলা প্রশাসন অবগত থাকলেও টিসিবি পণ্য বিক্রির বিষয়ে রমজানের চাঁদরাত পর্যন্ত কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি।

এ ব্যাপারে জানতে জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানাকে একাধিকবার ফোন দিলেও রিসিভ করেননি।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) উত্তম কুমার রায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বোতলজাত সয়াবিনের সঙ্কটের বিষয়টি আমাদের জানা আছে। এ নিয়ে পরিবেশকদের সঙ্গে দুই-একদিনের মধ্যে কথা বলবো।’

টিসিবির পণ্য বিক্রির বিষয়ে উত্তম কুমার রায় বলেন, ‘টিসিবি বন্ধ নেই। আমরা পণ্য পেয়েছি। শিগগিরই বিক্রি শুরু হবে।’ তবে টিসিবি ডিলারদের দাবি, কবে থেকে পণ্য বিক্রি করতে হবে, সে ব্যাপারে এখনও সুনির্দিষ্ট তারিখ পাওয়া যায়নি।

/এএম/
সম্পর্কিত
ভিটামিন-সমৃদ্ধ ভোজ্যতেল প্রাপ্তির বাধা খোলা ড্রাম
প্রতি লিটার সয়াবিন তেলে লাভ ১২ টাকা?
১৬১ টাকা লিটার দরে রাইস ব্রান তেল কিনছে সরকার
সর্বশেষ খবর
ফিলিপাইনে বাস দুর্ঘটনায় নিহত ১০, আহত ৩০ 
ফিলিপাইনে বাস দুর্ঘটনায় নিহত ১০, আহত ৩০ 
মানুষের টিকে থাকার জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ জরুরি: ফরিদা আখতার
মানুষের টিকে থাকার জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ জরুরি: ফরিদা আখতার
মোহাম্মদপুরে পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার ২৪
মোহাম্মদপুরে পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার ২৪
‘জিমি থাকলেও ওমানকে হারানো যেতো না, ট্যাকটিক্যালি আমরা পিছিয়ে পড়েছি’
‘জিমি থাকলেও ওমানকে হারানো যেতো না, ট্যাকটিক্যালি আমরা পিছিয়ে পড়েছি’
সর্বাধিক পঠিত
অস্ত্র নিয়ে সাবেক এমপির ওপর হামলা, অল্পের জন্য রক্ষা
অস্ত্র নিয়ে সাবেক এমপির ওপর হামলা, অল্পের জন্য রক্ষা
টেকনাফে সরকারি বরাদ্দের মালামাল মিয়ানমারে পাচার
টেকনাফে সরকারি বরাদ্দের মালামাল মিয়ানমারে পাচার
সাপের কারণে জাপানে বুলেট ট্রেন চলাচল বন্ধ
সাপের কারণে জাপানে বুলেট ট্রেন চলাচল বন্ধ
চিন্ময়ের জামিন কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা না, ইন্টেরিম সাবধান: হাসনাত আব্দুল্লাহ
চিন্ময়ের জামিন কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা না, ইন্টেরিম সাবধান: হাসনাত আব্দুল্লাহ
কূটনীতিক সুফিউর রহমানের নিয়োগ নিয়ে হচ্ছে কী
কূটনীতিক সুফিউর রহমানের নিয়োগ নিয়ে হচ্ছে কী