গাইবান্ধায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন নেতার ওপর হামলার পর ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মী ফেরদৌস আহমেদ নেহালকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বুধবার (১৪ মে) বিকালে গাইবান্ধা সরকারি ডিগ্রি কলেজের গেটের সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
ফেরদৌস আহমেদ নেহাল (২৫) সাঘাটা উপজেলার হাট ভরতখালী গ্রামের নুরুল ইসলাম ছেলে। তার চাচা মোশাররফ হোসেন সুইট ভরতখালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। গাইবান্ধা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করা নেহাল ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় বলে জানা গেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে গাইবান্ধা সদর থানার (ওসি) শাহিনুর ইসলাম তালুকদার জানান, গোপন খবরে অভিযান চালিয়ে ফেরদৌস আহমেদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের ওপর হামলার ঘটনায় সদর থানায় হওয়া মামলার অজ্ঞাত আসামি হিসেবে গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে বৃহস্পতিবার সকালে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।
এরআগে, এ মামলার এজাহার নামীয় আসামি সুমন, কিরণ ও নাজমুল নামের তিন জনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাইবান্ধা জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম আকাশ বলেন, ওই দিন হামলাকারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন নেহাল। তার হাতে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে আমাদের গুরুতর জখম করে। ছুরিকাঘাতে তার পেটের একটু ওপর থেকে প্রায় ৫০টির মতো সেলাই পড়েছে। ঘটনার আড়াই মাস পর পুলিশ নেহালকে গ্রেফতার করেছে। নেহাল নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতে সক্রিয়। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে গাইবান্ধা ও বগুড়ায় ছাত্র-জনতার ওপর হামলায় অংশ নেওয়া ছাড়াও নানা অপতৎপরতায় সক্রিয় ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, কয়েকদিন আগে নেহাল তার ফেসবুক পোস্টে হাসনাত ও সারজিস আলমসহ সমন্বয়কদেরকে টোকাই বলে সম্বোধন করেছে। আমি চাই, এমন ভয়ানক সন্ত্রাসী কোনোভাবে আইনের ফাঁকফোঁকর দিয়ে যাতে বের হতে না পারে। দ্রুত হামলার ঘটনায় জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্ত শাস্তির দাবি জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গাইবান্ধা শহরের স্বাধীনতা প্রাঙ্গণ মাঠে মাসব্যাপী আয়োজিত বাণিজ্য মেলার শেষ দিন ২৪ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টার দিকে বেড়াতে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটির নেতা শরিফুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান এবং শেফাউর রহমান। এ সময় একটি দোকানে এক নারীকে হেনস্তা করা হচ্ছিল। এতে শরিফুল ইসলামসহ ছাত্রনেতারা বাধা দেন। একপর্যায়ে হামলাকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাইবান্ধা জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান এবং যুগ্ম সদস্যসচিব শেফাউর রহমান আহত হন। পরে তাদের উদ্ধার করে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় গাইবান্ধা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম সদস্যসচিব আসাদুজ্জামান বাদী হয়ে রাতেই সদর থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় আসামির হিসেবে ৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ৯ থেকে ১০ জনকে।
এদিকে, এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদসহ হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ফুঁসে ওঠেন ছাত্রনেতারা। দ্রুত হামলাকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্ত শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। একই সঙ্গে হামলার ঘটনার সময় সদর থানার ওসিসহ পুলিশের নীরব ভূমিকায় প্রতিবাদ জানিয়ে তাদের শাস্তির দাবি জানানো হয়।