দিনাজপুরের হাকিমপুরের হিলিতে সাইকেল চুরির মূল অভিযুক্তকে না পেয়ে তার স্ত্রী ও মেয়েকে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বিচার চেয়ে থানায় অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ওই দুই নারী। অভিযুক্ত ফারুক হোসেনের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ভুক্তভোগী মা ও মেয়ে।
এদিকে সাইকেল চুরির বিষয়ে জানতে গেলে তাদের ওপর হামলার অভিযোগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন অভিযুক্তরা। এদিকে ঘটনাটি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
হিলির খট্টামাধবপাড়া ইউনিয়নের নয়ানগর গ্রামে গত শনিবার (১৭ মে) রাতে ফারুকের বাড়ি থেকে সাইকেল চুরির ঘটনা ঘটে। পরদিন অভিযুক্তের বাড়ি থেকে সাইকেল উদ্ধারসহ তাকে আটক করেন ফারুক ও তার স্বজনরা। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা করবে না মর্মে অঙ্গীকার করলে তাকে ছেড়ে দেন।
অভিযোগ রয়েছে, পরদিন সোমবার ফারুকের স্ত্রী এলিনা বেগম অভিযুক্ত সিদ্দিকের বাড়িতে গিয়ে তার কাছে জানতে চান কেন সাইকেল চুরি করেছিল। পরে এ নিয়ে তাদের দুজনের মারামারি হয়। একপর্যায়ে সিদ্দিক এলিনা বেগমের মাথায় আঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে এলিনার ভাই এসে চুরির ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে না পেয়ে তার স্ত্রী ও নবম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়েকে বাড়ি থেকে মারতে মারতে নিয়ে গিয়ে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখেন। এর একটি ছবি বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
স্থানীয় বাসিন্দা সূর্য বেগম, তারা বিবি বলেন, যে সাইকেল চুরি করেছে তাক ধরে বেঁধে রেখেছিল, তারপর তাকে ছেড়েও দিয়েছে। চোর চুরি করেছে, তাকে ধরে শাস্তি দেও, কিন্তু তাকে ধরে ছেড়েও দিলেন। কিন্তু পরে আবার ওই বিষয় নিয়ে গন্ডগোল মারামারি করলেন। আবার বউ ও মেয়েটাকে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে গিয়ে কারেন্টের পোলের সঙ্গে বেঁধে রেখে মারধর করেছে। এভাবে মেয়ে মানুষকে পোলের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা ও মারধর করাটা ঠিক হয়নি। এই কাজ করাটা একেবারে অন্যায় হয়েছে। ছেলে মানুষ মহিলা মানুষের গায়ে হাত দেবে কেন। তোরা মেয়ে মানুষ মারামারি কর, কিন্তু ছেলে মানুষ গায়ে হাত দেওয়াটা ঠিক হয়নি। আবার চোর যে ওই মহিলার মাথায় আঘাত করেছে এটাও অন্যায়।
চুরির ঘটনায় অভিযুক্তের স্ত্রী বলেন, আমার স্বামী নাকি ফারুকের বাড়িতে ঢুকে সাইকেল বের করেছে। আবার যেদিন এই ঘটনা সেদিন আমি বাড়িতে ছিলাম না। তারপরে আমাকে ওরা ফোন দিলে আমি বলি, ওকে ধরেছেন, এখন থানায় দেন। ঘটনার পর দিন আমি বোনের বাড়ি থেকে নিজের বাড়ি আসি। এরপর সকালে ফারুকের স্ত্রী আমার বাড়িতে এসে বলে, স্বামীকে চুরি করতে লাগিয়ে বাড়িতে বসে আছিস। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে সে আমাকে গামলা দিয়ে বাড়ি মারে। এ সময় আমার মেয়ে এসে তাকে আটকায়, আমাকেও আটকায়। একপর্যায়ে সে যখন আমার মেয়েকে ফেলে দেয়, ওই সময় আমার স্বামী ঘর থেকে বাইরে এসে তার মাথায় আঘাত করে। এ সময় অসুস্থ হয়ে পড়লে তার স্বজনরা এসে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়, আর আমাদের না পালাতে শাসিয়ে যায়। আমরা তো পালাইনি, আমরা কোনও অপরাধ করিনি।
তিনি বলেন, পরে ফারুকের বউয়ের ভাই এসে স্বামীকে না পেয়ে বাড়ির দরজা ভেঙে আমাকে ও মেয়েকে মারতে মারতে নিয়ে গিয়ে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখে। সেখানেও ওই অবস্থাতে আমাদের মারধর করতে থাকে। পরে গ্রামবাসী ছেড়ে দিতে বললে ছেড়ে দেয়। আমাদের কথা, অপরাধ সে করলো, তাকে সাজা দিক, কিন্তু আমাদের কেন নির্যাতন করা হলো।
ফারুকের স্ত্রী এলিনা বেগম বলেন, “ছেলের সাইকেল চুরি করেছে ওই ব্যক্তি। চোরকে ধরেছি, দোষী সাব্যস্ত করার পর তাকে মারধর করা হয়নি। গ্রামের মানুষজন উত্তেজিত হলেও আমরা মারধর করতে দেইনি। ভবিষ্যতে এমন কর্মকাণ্ড করবে না মর্মে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরদিন সকালে তাদের বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রীকে বলি, কোন আক্কেলে আমার ছেলের সাইকেল চুরি করতে গেছিলি বিবেকে বাধা দেয়নি? এই কথা বলতেই সে গালিগালাজ করতে থাকে। একপর্যায়ে মা ও মেয়ে দুই জনে মিলে আমাকে টেনে নিয়ে যায়। আর বলে তারা নাকি কিছুই করেনি, কিছুই জানে না। তারা দুই জন আমাকে ধরেছিল আর তার স্বামী ধারালো অস্ত্র দিয়ে আমাকে খুন করার চেষ্টা করে। আমাকে আহত করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে আমার দেবর তার পিছু ধাওয়া করে। এ সময় তাকেও আঘাত করে সে পালিয়ে যায়। পরে স্বজনরা আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমার এমন অবস্থা দেখে আমার ভাই উত্তেজিত হয়ে পড়ে। গ্রামের মানুষজন বলে ওরা নাকি বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাবে। সে কারণে আমার ভাই ওর বউ ও মেয়েকে হাত ধরে নিয়ে পোলের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখে। পরে সবাই বলে মেয়ে মানুষকে বাঁধার দরকার নেই। তখন তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।”
হাকিমপুর থানার ওসি নাজমুল হক বলেন, আমি এই থানায় যোগদান করেছি সোমবার বিকাল ৩টায় আর ঘটনাটি ঘটেছে এর আগের দিন। আমি সন্ধ্যার দিকে ঘটনাটি জানার পর সার্কেল অফিসারকে বিষয়টি জানালাম। এরপর রাতেই ঘটনাস্থলে গেছি। এরপর সেখানে উভয়পক্ষ ও গ্রামবাসীর কাছে ঘটনার বিস্তারিত জেনেছি। ওই ঘটনায় দুই পক্ষই থানায় অভিযোগ দিয়েছে। আমরা আইও নিয়োগ করে দিয়েছি। তদন্তসাপেক্ষে এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।