শ্রমিকরা কাজে যোগদান না করায় বুধবার (২ জুলাই) সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে দিনাজপুরের মধ্যপাড়া পাথর খনির উৎপাদন কার্যক্রম।
খনিতে চার জন অস্থায়ীভাবে নিয়োগ হওয়া চার জনকে অব্যাহতি দেওয়ায় বুধবার সকাল থেকে শ্রমিকরা কাজে যোগদান করেননি। খনিতে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মধ্যপাড়া পাথর খনির উপ-মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ রফিজুল ইসলাম।
তিনি জানান, শ্রমিকরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অধীনে কাজ করেন। তাই তাদের কাজের বিষয়টির সঙ্গে খনি কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট নয়। তবে সংকট সমাধানে কর্তৃপক্ষ কাজ করছে।
জানা গেছে, মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া ট্রাস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি) প্রতিদিন তিন শিফটে শ্রমিকদের মাধ্যমে পাথর উত্তোলন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এতে প্রতিদিন সাড়ে ৫ থেকে ৬ হাজার মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন হয়।
কিছুদিন ধরেই জিটিসির অধীনে নিয়োগ হওয়া অস্থায়ী শ্রমিকরা প্রোডাকশন প্রফিট বোনাসের দাবি জানিয়ে আসছে। এই দাবি মেনে না নেওয়ায় শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছিল এবং বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হলেও কোনও সুরাহা হয়নি।
এরইমধ্যে কর্তৃপক্ষের বিষয়ে প্রতিবাদ করায় খনির ব্লাস্টার শফিকুল ইসলাম, লং ড্রিল অপারেটর রফিকুল ইসলাম, অপারেটর ওমর আলী ও জুনিয়র হেলপার হাসান আলীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার প্রতিবাদ ও অব্যাহতি দেওয়া শ্রমিকদের পুনরায় সপদে বহালের দাবিতে শ্রমিকরা বুধবার থেকে পাথর উত্তোলনসহ সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেন।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসি জানায়, যারা এই খনিতে কাজ করছেন, তারা সবাই অস্থায়ী ভিত্তিতে। তাই তাদেরকে প্রোডাকশন প্রফিট বোনাস দেওয়ার দাবিটি অযৌক্তিক। তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে রাড়ি হননি জিটিসির কর্মকর্তা।
এদিকে দাবি আদায় না হলে আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং শ্রমিক কল্যাণ সমিতির নেতা শফিকুল ইসলাম, হাসান আলী, সিরাজুল ইসলামসহ অন্যরা।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ফোন করা হলে জিটিসির জেনারেল ম্যানেজার জাবেদ সিদ্দিকী জানান, তিনি হাসপাতালে রয়েছেন। পরে কথা বলবেন।
উল্লেখ্য, দেশের একমাত্র পাথর খনি হিসেবে বাণিজ্যিকভাবে ২০০৭ সালের ২৫ মে যাত্রা শুরু করে দিনাজপুরের মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (এমজিএমসিএল)। প্রথম অবস্থায় খনি থেকে দৈনিক ১৫০০ থেকে ১৮০০ টন পাথর উত্তোলন হলেও পরে তা নেমে আসে মাত্র ৫০০ টনে। উৎপাদনে যাওয়ার পর থেকে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত লোকসানের পরিমাণ দাঁড়ায় শত কোটি টাকার ওপরে।
এমন অবস্থায় দেশের চাহিদা মেটানো ও উৎপাদন বাড়াতে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ৯২ লাখ মেট্রিক টন পাথর উত্তোলনের জন্য খনির উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয় বেলারুশের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া ট্রাস্ট কনসোর্টিয়ামকে (জিটিসি)।
পাথর খনির উন্নয়ন ও উৎপাদনে দুই শতাধিক বিদেশি খনি বিশেষজ্ঞ ও দেশীয় প্রকৌশলী এবং সাত শতাধিক দক্ষ খনি শ্রমিক ও দুই শতাধিক কর্মকর্তা তিন শিফটে কাজ শুরু করে জিটিসি। এরপর থেকে লাভের মুখ দেখতে পায় খনিটি। পাথরের মজুত বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি চাহিদা মাফিক প্রতিষ্ঠানগুলোতেও সরবরাহ হতে শুরু করে মধ্যপাড়া খনির পাথর।
অব্যাহতভাবে সরকারের লাভের মুখ দেখায় পাথর উত্তোলনের জন্য ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসির সঙ্গে ৮৮ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন পাথর উত্তোলনের জন্য ছয় বছরের জন্য দ্বিতীয় দফায় পুনঃচুক্তি করে মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিঃ (মধ্যপাড়া পাথর খনি) কর্তৃপক্ষ।
খনি সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রতি বছর ছয় হাজার কোটি টাকার (প্রায় এক কোটি ৫০ লাখ টন) পাথরের চাহিদা রয়েছে। যেভাবে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে এতে বছরে ১৭ থেকে ১৮ মেট্রিক টন পাথর সরবরাহ করা সম্ভব এই খনি থেকে।