সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যখন তুঙ্গে ঠিক তখন গ্রেফতার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে অর্থের জোগানদাতাদের মধ্যে। অনেক সাবেক শিক্ষার্থী ভয়ে আন্দোলনকারীদের টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। ইতোমধ্যে সাড়ে সাত লাখ টাকা আন্দোলনকারীদের অ্যাকাউন্টেও এসেছিল। কারা দিয়েছে এসব অর্থ সেটার অনুসন্ধান চালাচ্ছে পুলিশ। এরই মধ্যে আন্দোলনকারীদের কয়েকটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) দিনভর আন্দোলনকারীরা অর্থ সহযোগিতা না পেয়ে কিছুটা নীরব থাকলেও বিকালে চাঁদা তুলে কিছু ব্যয় বহন করেছেন বলে জানা গেছে। সন্ধ্যায় অনশনকারী শিক্ষার্থীদের অনশন থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তাদের সহপাঠীরা। কিন্তু অনশনরতরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে অনড় থাকেন।
এদিকে, আন্দোলনকারীদের বিভিন্ন মাধ্যমে অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করার অভিযোগে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) পুলিশের পৃথক দল ঢাকায় অভিযান চালিয়ে শাবির সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে সিলেট মহানগর পুলিশের জালালাবাদ থানায় আন্দোলনকে পুঁজি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে।
অপরদিকে, বন্ধ হয়ে যাওয়া বিকাশ, নগদ ও রকেটের অ্যাকাউন্টে দুই লাখ ৪৪ হাজার টাকা পড়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। এসব টাকা তোলা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন আন্দোলনে খরচের দায়িত্বে থাকা দুই শিক্ষার্থী। এর আগে এসব অ্যাকাউন্ট থেকে পাঁচ লাখ টাকা তোলা হয়েছে বলে জানান তারা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, গত ১৩ জানুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজার বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েকশ ছাত্রী। এরপর ১৬ জানুয়ারি বিকালে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে উপাচার্যকে মুক্ত করে পুলিশ। এ সময় বেশ কয়েকজন ছাত্র আহত হয়ে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। পুলিশের এই হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য সার্বিকভাবে সহযোগিতা করার আশ্বাসসহ অর্থের জোগান দেওয়ার বিষয়ে আশ্বস্ত করায় কঠোর আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।
এরই মধ্যে সিলেটের চৌহাট্টাস্থ ইস্টার্ন ব্যাংকের শাখায় শিহাব নামে এক ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট নম্বর অর্থ সংগ্রহে ব্যবহৃত হয়। সেই সঙ্গে নগদ, বিকাশ ও রকেটের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে সাত লাখ টাকা আসে আন্দোলনের তহবিলে। এরপর এই টাকা থেকে ব্যয় শুরু হয়। বেগবান হয় আন্দোলন।
এ বিষয়ে উপাচার্য পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে খরচের দায়িত্বে থাকা মীর রানা জানিয়েছেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাই ও আপুরা বিকাশ, নগদ ও রকেটের মাধ্যমে আর্থিক সহযোগিতা করেছিলেন বলেই আমরা অসুস্থদের চিকিৎসা ও খাবারের ব্যবস্থাসহ সার্বিক ব্যয় মেটাতে পেরেছি। এখন আমাদের বন্ধ হওয়া অ্যাকাউন্টগুলোতে টাকা আটকে আছে। তবে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
তিনি বলেন, আমাদের যারা টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন বা অনেকেই করবেন বলে আশ্বস্ত করেছিলেন তাদের মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় টাকা সংগ্রহ করবো কিনা কিংবা নিজেদের টাকায় আন্দোলন চলবে কিনা সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেন, শাবির আন্দোলনকে ভিন্নপথে নেওয়ার জন্য আন্দোলকারীদের অর্থের জোগান দেওয়া হয়েছে। অর্থের উৎসের সন্ধানে কাজ করছে পুলিশ। ইতোমধ্যে তাদের অনেকের নগদ, বিকাশ ও রকেটের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আন্দোলনকারীদেরও নজরদারিতে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি যারা আন্দোলনে অর্থ দিয়েছে তাদেরও খুঁজছে পুলিশ।
এ বিষয়ে আন্দোলনকারী সাদিয়া আফরিন বলেন, ‘আমাদের আর্থিক লেনদেনের সব অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এগুলো আমাদের আন্দোলন নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র বলে আমি মনে করি। এসব করে কোনও লাভ হবে না। আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো।’