X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রীতি উড়াংয়ের মৃত্যু: আমরা গরিব বলে কোনও ‍বিচার পাবো না?

সাইফুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৬:৩৬আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৬:০৩

‘এই ঘটনার পর বুঝতে পারলাম সাংবাদিকের বাসায় আগে একটা ঘটনা ঘটেছে। এমন ঘটনা জানলে কখনোই ওই বাসায় আমার ভাগ্নিকে দিতাম না। আগে বুঝি নাই এ রকম পরিণাম ঘটবে। প্রীতি মাঝেমধ্যে বাবা-মার সাথে ফোনে কথা বলতো। কিন্তু এ পর্যন্ত এক দিনও মেয়েকে বাড়িতে পাঠায়নি তারা। অনেকবার বলেছিলাম ছুটিতে পাঠানোর জন্য। শেষ পর্যন্ত আমার ভাগ্নির করুণ মৃত্যু হলো।’

ফুলসাই উড়াং। তিনি ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসা থেকে পড়ে মারা যাওয়া কিশোরী গৃহপরিচারিকা প্রীতি উড়াংয়ের মামা। বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথাগুলো বলতে বলতে অঝোরে কেঁদে ফেলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, আমার ভাগ্নির এমন মৃত্যু আমরা মেনে নেবো না। কারণ আমরা চেয়েছিলাম আমার ভাগ্নি ওই সাংবাদিকের বাসায় ভালো থাকবে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় একজন শিক্ষিত মানুষের বাসায় গরিব এভাবে কষ্ট পাবে, এটা মানা সম্ভব না। আমরা গরিব বলে কোনও ‍বিচার পাবো না? প্রীতির হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।

এদিকে চা-শ্রমিককন্যা গৃহপরিচারিকা প্রীতি হত্যার বিচার ও অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন চা-শ্রমিকরা। মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টায় শ্রীমঙ্গল শহরের মৌলভীবাজার সড়কে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের আয়োজনে ‘লেবার হাউস’-এর সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে শতাধিক চা শ্রমিক নারী-পুরুষ অংশ নেন।

কিশোরী গৃহপরিচারিকা প্রীতি উড়াং ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসায় কাজ করতো। তার বাসার বারান্দা দিয়ে নিচে পড়ে ১৫ বছর বয়সী প্রীতি উড়াংয়ের মৃত্যুর পর এ ঘটনায় আশফাকুল হক দম্পতিকে দায়ী করে তাদের শাস্তির দাবিতে কয়েক দিন ধরে ঢাকাসহ সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করা হয়েছে।

গত ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মোহাম্মদপুরে সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসায় এ ঘটনার পরদিন সকালে মোহাম্মদপুর থানায় আশফাকুল ও তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকারকে আসামি করে অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে মামলা করেন প্রীতির বাবা লুকেশ উড়াং।

মঙ্গলবার মানববন্ধনে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বালিশিরা ভ্যালির সভাপতি বিজয় হাজরার সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি পংকজ কন্দ্র, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল, অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দি, সহসম্পাদিকা রেখা বাসতি,বালিশিরা ভ্যালির সহ-সভাপতি সবিতা গোয়ালা প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, আমরা চা শ্রমিক বলে আমাদের কি জীবনের দাম নেই? লোকেরা টাকাপয়সার প্রলোভন দেখিয়ে বাড়ির কাজে নিয়ে বিভিন্ন নির্যাতন করে। আমাদের মির্তিঙ্গা চা-বাগানের শিশুকন্যাকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে। আমরা চা-শ্রমিক বলে কি এর কোনও বিচার হবে না? চা-বাগানের মানুষ কিন্তু ঢাকা শহর চেনে না। এখানে কারা এদের ব্যবহার করছে?

তারা আরও বলেন, প্রীতির মা-বাবা খুবই গরিব, অসহায়। মির্তিঙ্গা চা-বাগান তো এরা ভালো করে চিনতে পারে না, তাহলে ঢাকার মোহাম্মদপুরে কী করে গেলো সে? তার মা-বাবা অসহায়-গরিব বলেই একটু ভালোভাবে বাঁচার আশায় পড়াশোনা বন্ধ করে মেয়েকে কাজে দিয়েছে। ১৫ বছর বয়সী মেয়েটাকে তারা নির্যাতন করে মেরে ফেললো? আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

স্থানীয় এক সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রীতি সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসায় কাজের জন্য যায় জানিয়ে বক্তারা আরও বলেন, শুরু থেকেই তাকে পরিবারের সঙ্গে খোঁজখবর রাখতে দিলেও বাড়ি আসতে দিতো না। প্রীতির মৃত্যুর দিন ওই সাংবাদিক আমাদের মেয়ে মারাত্মক অসুস্থ বলে ঢাকায় নিয়ে যান। ঢাকায় পৌঁছানোর পর সরাসরি থানায় নিয়ে গেলে মেয়ের মৃত্যু সংবাদ শুনতে পাই।

যেভাবে ঢাকায় পাঠানো হয় প্রীতি উড়াংকে
প্রীতি উড়াংয়ের মামা ফুলসাই উড়াং বলেন, মিন্টু দেশোয়ারা সাংবাদিকের সঙ্গে আমার চাকরির সুবাধে পরিচয়। মিন্টু সাংবাদিক কারিতাস এনজিওতে চাকরি করতো বিধায় তার সঙ্গে সুম্পর্ক গড়ে ওঠে। মিন্টু একদিন বললো, বাসার কাজের জন্য একজন মেয়ে দরকার। ঢাকায় এক সাংবাদিকের বাসায় পাঠাবেন।

সেখানে ওই সাংবাদিক দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে থাকে। তাদের বাচ্চাদের সঙ্গে খেলাধুলা করবে আর ভালো খাবার খাবে। তারপর প্রীতি উড়াংয়ের বাবা-মার সঙ্গে আলোচনা হয়। প্রতি মাসে প্রীতিকে দুই হাজার টাকা হারে বেতন দেওয়ার কথা জানান মিন্টু। পরে তার মাধ্যমে ঢাকায় পাঠানো হয়।

বাসায় গিয়ে প্রীতি মাঝেমধ্যে বাবা-মার সঙ্গে ফোনে কথা বলতো। কিন্তু এ পর্যন্ত এক দিনও মেয়েকে বাড়িতে পাঠায়নি তারা। অনেকবার বলেছিলাম ছুটিতে পাঠানোর জন্য। শেষ পর্যন্ত আমার ভাগ্নির করুণ মৃত্যু হলো, এখন আমরা কার কাছে বিচার চাইবো? যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটু সুদৃষ্টি দেন, তাহলে আমরা প্রীতির হত্যার সুবিচার পাবো।

এ বিষয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ নন্দী বলেন, যতটুকু জেনেছি প্রীতিকে হয়তো যৌন নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। অবিলম্বে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

মৌলভীবাজার সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জহুর লাল দত্ত বলেন, মেয়েটিকে দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত এবং তাকে যৌন নির্যাতন করার কারণে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমি দোষীদের শাস্তি ও নিহত পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণের দাবি জানাচ্ছি।

/এনএআর/
সম্পর্কিত
বিডি নিউজের প্রধান সম্পাদকের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে, চার্জশিট দাখিল
কোটালীপাড়ার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
সর্বশেষ খবর
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘শেখ হাসিনা কেবল দেশের উন্নয়ন করেননি, জাতিকে কলঙ্কমুক্তও করেছেন’
‘শেখ হাসিনা কেবল দেশের উন্নয়ন করেননি, জাতিকে কলঙ্কমুক্তও করেছেন’
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহত বেড়ে প্রায় সাড়ে ৩৪ হাজার
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহত বেড়ে প্রায় সাড়ে ৩৪ হাজার
যাত্রাবাড়ীতে চাঁদা আদায়ের সময় গ্রেফতার ১৫
যাত্রাবাড়ীতে চাঁদা আদায়ের সময় গ্রেফতার ১৫
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে