সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, রেজিস্ট্রার, জনসংযোগ ও প্রকাশনা দফতরের পরিচালকের পদত্যাগসহ সাত দফা দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। রবিবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালিত হয়। কর্মসূচির অংশ হিসেবে পরীক্ষা ও ক্লাস বর্জন করেছেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে শনিবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা প্রতিটি অনুষদ ও প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগের রাতে কে বা কারা ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে টাঙানো ছাত্রদলের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে। এর জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষ হয়। এ সময় ৩০ থেকে ৪০ জন শিক্ষার্থী ছাত্রদল ও বহিরাগতদের মারধরের শিকার হন।
শিক্ষার্থীদের আরও অভিযোগ, সংঘর্ষের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মারধরের শিকার শিক্ষার্থীদের ‘ছাত্রলীগ’ ট্যাগ দিয়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন। শনিবার রেজিস্ট্রার এক বিজ্ঞপ্তিতে ব্যানার ও ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলার ঘটনাকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ বলে আখ্যা দেন। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলনে নেমেছেন।
সকাল ৯টায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। বেলা ১টার দিকে তারা উপাচার্য মো. আলিমুল ইসলাম বরাবর সাত দফা দাবি সংবলিত স্মারকলিপি দেন। প্রথম তিনটি দাবি হচ্ছে: বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, রেজিস্ট্রার এবং জনসংযোগ ও প্রকাশনা দফতরের পরিচালকসহ অভিযুক্ত ব্যক্তিদের প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ; উপাচার্যকে রাজনৈতিক ব্যানারে যুক্ত করে যারা বক্তব্য দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বৃহস্পতিবার রাতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মামলা করে দ্রুত দোষীদের গ্রেফতার করা।
অন্য দাবিগুলো হলো বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ীভাবে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের প্রক্রিয়া দ্রুত নিশ্চিত করা; শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক দলের ট্যাগযুক্ত করা মন্তব্য প্রত্যাহার করা এবং শিক্ষার্থীদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভুল দলের ট্যাগ দেওয়া সম্পর্কে যুক্তিপূর্ণ জবাব দেওয়া; শিক্ষার্থীদের অ্যানোনিমাস মার্কিং ব্যবস্থা চালু করা, ইম্প্রুভ পরীক্ষা (দেড় মাসের মধ্যে) সিস্টেম চালু করা, ইয়ারড্রপ ব্যবস্থা বাতিল করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র সার্বক্ষণিক খোলা রাখা, যেন শিক্ষার্থীরা জরুরি স্বাস্থ্যসেবা পান।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আলিমুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছি। পরে এ বিষয়ে জানানো হবে।’
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অথচ সেটা উপেক্ষা করে ছাত্রদল ক্যাম্পাসের ফটকে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানিয়ে ব্যানার টানায়। বৃহস্পতিবার রাতে কে বা কারা সেই ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে। এর জেরে বহিরাগত এক ছাত্রদল নেতা এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে ঢুকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধর করেন।
সংঘর্ষের রাতেই কেন্দ্রীয় ছাত্রদল তাৎক্ষণিকভাবে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কমিটিকে মেয়াদোত্তীর্ণ উল্লেখ করে বিলুপ্ত ঘোষণা করে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাবেক এক নেতাকে সংগঠনের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। পাশাপাশি এই সংঘর্ষের প্রকৃত কারণ উদঘাটনে দুই সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি।