ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিধান অনুযায়ী কোনও শিক্ষককে সর্বোচ্চ ৯০ দিন বাধ্যতামূলক ছুটিতে রাখা যায়। তবে অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদীকে দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে এই ছুটিতে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। গত ২৫ আগস্ট উচ্চ আদালত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করে ওই শিক্ষককে বিভাগে যোগদান করতে দিতে বিবাদীদের নির্দেশ দিয়েছে। তবে এখনও তাকে যোগদান করতে দেয়নি কর্তৃপক্ষ।
উচ্চ আদালতের নির্দেশের পর তিন মাসের বেশি সময় পার হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনও পদক্ষেপ না দেখে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন ওই শিক্ষক। গত মঙ্গলবার ও বুধবার অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে ‘আমি শিক্ষক, আমাকে ক্লাসে ফিরে যেতে দিন’লেখা প্লাকার্ড নিয়ে অবস্থান নেন তিনি।
জানা গেছে, ২০১৭ সালে রুশাদ ফরিদীর বিরুদ্ধে কয়েকটি অভিযোগ আনেন ওই বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক। তাদের অভিযোগ রুশাদ ফরিদী শিক্ষকসুলভ আচরণ করেন না। শিক্ষার্থীদের কাছে বিভাগের অন্যান্য শিক্ষকদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করেন। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে ওই সময় বিভাগে জরুরী বৈঠক ডাকা হয়। পরে বিভাগ থেকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সুপারিশ করা হয়।
ওই সুপারিশের ভিত্তিতে তৎকালীন উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ড. রুশাদ ফরিদীকে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০১৭ সালের ১২ জুলাই তাকে ছুটিতে পাঠানোর চিঠি দেয় সিন্ডিকেট।
তবে রুশাদ ফরিদীর অভিযোগ, তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তদন্ত ছাড়াই শাস্তি দেওয়া হয়েছে। বিভাগের বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলায় প্রতিহিংসামূলকভাবে অভিযোগগুলো আনা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। এসব অনিয়মের বিষয়ে বিভাগের চেয়ারম্যানের কাছে সাতটি চিঠি দিয়েছিলেন বলেও জানান তিনি।
সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত জানানোর পর তা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে ভিসি, প্রো-ভিসি (শিক্ষা), প্রো-ভিসি (প্রশাসন), রেজিস্ট্রার, বিভাগের চেয়ারম্যান বরাবর উকিল নোটিশ পাঠান রুশাদ ফরিদী। তাতে সাড়া না পেয়ে ২০১৭ সালের ১৩ জুলাই উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেন তিনি। দীর্ঘ শুনানির পর চলতি বছরের ২৫ আগস্ট বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি খায়রুল আলমের হাইকোর্টের বেঞ্চ ড. রুশাদ ফরিদীর বিরুদ্ধে সিন্ডিকেটের দেয়া আদেশ অবৈধ ঘোষণা করে। একইসঙ্গে তাকে কাজে যোগদানেরও নির্দেশ দেয়। তবে তিন মাস পার হলেও রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশ হয়নি।
ফলে গত সোমবার নিজের আইনজীবীর স্বাক্ষরিত রায়ের সার্টিফিকেট ও যোগদানের কাগজপত্র বিভাগে জমা দিতে যান রুশাদ ফরিদী। তিনি দাবি করেন, বিভাগীয় চেয়ারম্যানের অনুমতি ছাড়া এসব কাগজপত্র গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন কর্মকর্তারা। আর চেয়ারম্যান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কাগজপত্র নিতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে রুশাদ ফরিদী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী ৯০ দিনের বেশি বাধ্যতামূলক ছুটিতে রাখা যায় না। তারপরও আমি ৭০০ থেকে ৮০০ দিনের বেশি ছুটিতে আছি। অন্যায় ভাবে দু'বছর ধরে আমাকে হেনস্থা করা হচ্ছে। উচ্চ আদালতের রায়ের পরও তাদের বিন্দুমাত্র সহানুভূতি দেখছি না।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি অবগত। এটি একটি আইনি প্রক্রিয়া। আইনের প্রতি আমরা সব সময় শ্রদ্ধাশীল। আদালতের আদেশের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হাতে পেলে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবো’।