দেশের বেসরকারি কলেজের অনার্স-মাস্টার্স স্তরের সাড়ে পাঁচ হাজার শিক্ষকের বেতন-ভাতার দাবিতে শুরু করা ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চাই’ শীর্ষক অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।
সোমবার (৫ ডিসেম্বর) দ্বিতীয় দিনের আন্দোলন-কর্মসূচি চলাকালে স্থগিত ঘোষণা করেছেন শিক্ষকরা। তবে সাময়িক বিরতি দেওয়া হলেও আবার লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি চালানো হবে বলেন জানান শিক্ষকরা।
রবিবার (৪ নভেম্বর) রাজধানীর শাহবাগে ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চাই’ শিরোনামে আন্দোলন-কর্মসূচি শুরু করে বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজের অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ফেডারেশন। সোমবার (৫ ডিসেম্বর) বিকালে কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করা হয়। ফেডারেশনের সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান মোড়ল এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান মোড়ল বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত বেসরকারি ডিগ্রি কলেজে কর্মরত নন-এমপিও অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকরা এমপিও পাওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সরকারের উচ্চমহলে চেষ্টা করে আসছেন। বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় পদ অন্তর্ভুক্ত না থাকায় দেশের প্রায় সাড়ে ৫ হাজার শিক্ষক বেতনবঞ্চিত। দ্রব্যসামগ্রীর উচ্চমূল্যে শিক্ষকরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সে কারণেই আমরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করতে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি হাতে নেই।’
ফেডারেশনের ঢাকা মহানগরের প্রধান সমন্বয়ক মোসলে উদ্দিন রিফাত বলেন, এমপিও'র দাবিতে আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছি। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় নতুন করে কর্মসূচি শুরু করা হয়।
ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শেখ শামীম আরা সুলতানা বলেন, ‘আমাদের এমপিওভুক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির দফতর থেকে একাধিক সুপারিশ রয়েছে। শিক্ষামন্ত্রীও কয়েকবার আমাদের এমপিওভুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তারপরও আমরা এমপিওভুক্ত না হওয়ায় সামাজিক, মানসিক ও পারিবারিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। তাই বাধ্য হয়ে এই কর্মসূচি পালন করছি।
ফেডারেশনের সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান মোড়ল বলেন, এমপিওভুক্তির দাবি আদায়ের জন্য গত ৪ ডিসেম্বর সকাল ৯টা থেকে শাহবাগ চত্বরে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি আহ্বান করা হয়েছিল। এতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকগণ অংশ নেন। কিন্তু ডিসেম্বর মাসের এই সময় সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচিসহ নানা কারণে আমাদের কর্মসূচি সাময়িক বিরতি ঘোষণা করা হয়েছে। পরে আবার কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জনবল কাঠামো অনুযায়ী ডিগ্রিস্তর পর্যন্ত পরিচালিত এমপিওভুক্ত কলেজগুলোয় ১৯৯৩ সালে অনার্স-মাস্টার্সের অনুমোদন দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। বিধিবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত স্কেলে কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের মূল বেতন দেওয়ার শর্তে অনার্স-মাস্টার্সের বিষয় অনুমোদন পায়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কলেজের টিউশন ফি থেকে শিক্ষকদের বেতনভাতা দেওয়ার নির্দেশনা দেয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে। এই পর্যায়ে কলেজগুলোর জনবল কাঠামোতে স্থান পায় না অনার্স ও মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকদের পদ। ফলে সরকারি বিধিবিধানের আলোকে এমপিওভুক্ত হওয়ার সুযোগ বঞ্চিত হন তারা। এই পরিস্থিতিতে প্রায় ৩০ বছর ধরেই বঞ্চিত হচ্ছেন অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকরা।