X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

পাঠ্যবইয়ের ভুল সংশোধন হয়, শাস্তি হয় না কারও

এস এম আববাস
১৯ মে ২০২৩, ১০:০০আপডেট : ১৯ মে ২০২৩, ১০:০০

২০১২ সালে নতুন শিক্ষাক্রমে প্রণয়ন করা পাঠ্যবই ২০১৩ সালে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এসব বইয়ে বেশ কিছু ভুল ও ইতিহাস বিকৃতি থাকলেও সেভাবেই চলে ২০১৭ সাল পর্যন্ত। ২০১৭ সালে পাঠ্যবইয়ে ভুল ধরা পড়ে। ভুল-ভ্রান্তি সংশোধনে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় ওই বছর। তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ভুলভ্রান্তি ঠিক করাও হয়। কিন্তু কারও শাস্তি হয়নি। এরপর থেকে প্রতি বছরই পাঠ্যবইয়ে কম-বেশি ভুল ধরা পড়েছে। বিজয় দিবসকে ‘স্বাধীনতা অর্জনের দিন’—পাঠ্যবইয়ে এমন ভুল হলেও তার জন্য কাউকে জবাবদিহির আওতায় নেওয়া হয়নি।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ শিক্ষাবর্ষের জন্য ২০১৯ সালে পুনরায় মুদ্রিত বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যবই চালু করা হয়েছিল ২০১৩ সালে। প্রথম পরিমার্জিত সংস্করণ ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে এবং দ্বিতীয় পরিমার্জিত সংস্করণ ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে হয়েছিল। বইগুলো পুনরায় মুদ্রণ করা হয় ২০১৯ সালে। তবে বিগত কয়েক বছরে মুদ্রণ-পুনরায় মুদ্রণ হলেও এই বইগুলোর কনটেন্ট চলছে প্রায় ১০ বছর ধরে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) মাধ্যমিক পর্যায়ের ১৩টিরও বেশি বইয়ে ভুল পায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এসব ভুল সংশোধনের পর ২০২০ সালে আবারও পাঠ্যবইয়ে ভুল ও ইতিহাস বিকৃতি ধরা পড়ে।

পাঠ্যবইয়ের ভুল তদন্তে গঠিত কমিটি ২০১৭ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি এনসিটিবির কয়েকজন কর্মকর্তাকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে প্রতিবেদন দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী চার জন কর্মকর্তাকে স্ট্যান্ডরিলিজসহ ছয় কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়। বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হলেও কোনও কিছুই হয়নি। যদিও একজন আর্টিস্টকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল।

২০২৩ সালে নতুন শিক্ষাক্রমে চালু হওয়া পাঠ্যবইয়ের ভুল সংশোধনে দুটি কমিটি গঠন করা হয়। একটি কমিটি গঠন করা হয় ভুলভ্রান্তি চিহ্নিত করে সুপারিশ করার জন্য এবং আরেকটি কমিটি করা হয় অবহেলা বা ইচ্ছাকৃত ভুল করার বিষয় রয়েছে কিনা তা খুঁজে দেখতে। ইতোমধ্যে দুটি কমিটি মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। ভুল সংশোধনের জন্য গঠিত কমিটির প্রতিবেদন ও সুপারিশ অনুযায়ী পাঠ্যবইয়ে ভুল সংশোধনী দেওয়া হয়েছে। আর অবহেলা বা ইচ্ছাকৃত ভুল করা হয়েছে কিনা তা খুঁজে বের করার জন্য গঠন করা কমিটি প্রতিবেদন দিলেও তা এখনও অপ্রকাশিত। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছেন প্রতিবেদন পেয়েছেন।

পাঠ্যবইয়ে ভুল করার কারণে এ পর্যন্ত কাউকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, ‘বিগত কয়েক বছরে কাউকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে এমন ঘটনা নেই। তবে ভুল যাতে না হয় সে বিষয়ে আমরা সতর্ক করেছি বারবার।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, যারা ভুল করছেন তাদের জবাবদিহি থাকতে হবে। না থাকলে বারবার ভুল হবে। পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার আগে কেন যাচাই করা হচ্ছে না? যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করলে তো ভুল থাকতে পারে না। ভুল সংশোধন করার পরও দেখা যাচ্ছে বানান ভুল। এনসিটিবির দুটি দায়িত্ব, একটি অ্যাকাডেমিক, অন্যটি প্রকাশকদের সঙ্গে। এ দুটি দায়িত্বের কোনটিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত সেটি এনসিটিবিকে ভাবতে হবে।

শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘শাস্তি সব শেষ বিষয়, তার আগে দেখতে হবে কাজটি কারা করছেন। দায়িত্ব বণ্টন কারা করছেন, কাদের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। পাঠ্যবইয়ে যদি ভুল থাকে তাহলে সংশোধন করতে হবে। আমাদের প্রক্রিয়া ঠিক নেই।  পুরো প্রক্রিয়া যদি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হয়, তাহলে ভুল বা বিচ্যুতি হলে শাস্তি দেওয়া সম্ভব। কেউ জানে না কীসের ভিত্তিতে একজনকে পাঠ্যপুস্তক প্রণেতা করা হয়। যাদের নেওয়া হয় তাদের শতভাগ যোগ্যতা নেই, আবার যাদের শতভাগ যোগ্যতা আছে তাদের নেওয়াই হয় না।

এনসিটিবি ছিল শিক্ষাকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান। এখন তাদের বই ছাপানো, বই বিতরণ সংক্রান্ত বড় বড় কাজ করতে হয়। কোনও ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার জন্য তাদের দায়ী করা হয় না। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও কয়েক মাস পর আবার স্বপদে বহাল করা হয়। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি যদি থাকতো তাহলে শাস্তির বিধান প্রয়োগ করা যেতো।

কর্তাব্যক্তি যদি জবাবদিহির ঊর্ধ্বে থাকেন, অপরাধ করে পার পেয়ে যান, তাহলে তো হবে না। উপরের দিক থেকে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।  

যেসব ভুল সংশোধন করা হয়েছে

নবম ও দশম শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’  পাঠ্যবইয়ের ১০৬ নম্বর পৃষ্ঠার ৭.২ পরিচ্ছেদে ‘বাংলাদেশের প্রশাসন ব্যবস্থা’ অধ্যায়ের তিন নম্বর লাইনে লেখা হয়েছে ‘১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে’। এটি সংশোধন করে লেখা হয়েছে বিজয় অর্জন করে।

দশম শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বসভ্যতা’ বইয়ের ২১৩ পৃষ্ঠায় ‘জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা সংহতকরণে নানা পদক্ষেপ’ অংশে স্তুতি গাওয়া নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করে মন্ত্রণালয়। পরে তা সংশোধনও করা হয়। কিন্তু এই ইতিহাস বিকৃতির জন্য কাউকে জবাবদিহির আওতায় নেওয়া হয়নি।

কুসুমকুমারী দাশের কবিতা ‘আমাদের দেশে কবে সেই ছেলে হবে’ এবং অন্যটি তৃতীয় শ্রেণির ধর্ম বইয়ের পেছনে Do not heart anybody। এই লেখাটিতে heart  (হৃদয়) না হয়ে Hurt  (আঘাত) হওয়ার কথা ছিল। এই ভুল সংশোধন করা হয় ২০১৭ সালেই, কিন্তু দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় নেওয়া হয়নি।

ওড়না শব্দ ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক উঠলে প্রথম শ্রেণির পাঠ্যবই থেকে ওড়না সরিয়ে দেওয়া হলেও প্রাক-প্রাথমিকের পাঠ্যবইয়ে এখনও তা রয়ে গেছে।

২০২৩ সালের নতুন শিক্ষাক্রমের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে আবারও ভুল দেখা যায়। যদিও বইগুলো পরীক্ষামূলক ছাপা হয়েছিল। পরে কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ভুলগুলো সংশোধন করা হয়।

/এমএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
রবিবার থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলছে, শনিবারও ক্লাস চলবে
সর্বশেষ খবর
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
বাজারে এলো বাংলা ভাষার স্মার্টওয়াচ ‘এক্সপার্ট’
বাজারে এলো বাংলা ভাষার স্মার্টওয়াচ ‘এক্সপার্ট’
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
জোড়া আঘাতে হায়দরাবাদকে গুটিয়ে চেন্নাইয়ের জয় রাঙালেন মোস্তাফিজ
জোড়া আঘাতে হায়দরাবাদকে গুটিয়ে চেন্নাইয়ের জয় রাঙালেন মোস্তাফিজ
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ