X
বুধবার, ১৫ মে ২০২৪
১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
আন্তর্জাতিক গণসাক্ষরতা দিবস আজ

ঝরে পড়া ২০ লাখ শিশু লেখাপড়ার সুযোগ হারাচ্ছে

এস এম আববাস
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০৩আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০৩

আজ শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস। এ বছরও যথাযথভাবে দিবসটি পালন করবে সরকার। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য ‘পরিবর্তনশীল ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে সাক্ষরতার প্রসার’। কিন্তু চলতি বছর থেকে সাক্ষরতা কর্মসূচিতে বরাদ্দ বন্ধ রেখেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। ফলে ঝরে পড়া ২০ লাখ শিশু লেখাপড়ার সুযোগ হারাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে সাক্ষরতার হার ৭৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। ১৯৯০ সালে বাংলাদেশকে শতভাগ নিরক্ষরমুক্ত করতে প্রাথমিক শিক্ষাআইন পাস করা হয়। ১৯৯৮ সালে সাক্ষরতা বিস্তারে সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে ’আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা পুরস্কার ১৯৯৮’ লাভ করে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক এই সম্মান পাওয়ার পর থেকে সাক্ষরতার হার কমতে শুরু করে। শুধু তাই নয়, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর আওতায় মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্প বন্ধ হয়ে যায়। চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি-৪) সাব-কম্পোনেন্ট চলমান বলা হলেও গত জুলাই থেকে অর্থায়ন বন্ধ রয়েছে।

সূত্রমতে, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে কর্মসূচি অব্যাহত রেখে বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হলেও মন্ত্রণালয় অর্থ বরাদ্দ বন্ধ রাখে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর এক কর্মকর্তা জানান, মন্ত্রণালয় গণশিক্ষা কর্মসূচি চালাতে চায় না। অথচ মন্ত্রণালয়ের নাম প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

সাক্ষরতা কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক ড. মো. আবুল কালাম আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ২০২৫ সাল পর্যন্ত সাক্ষরতা প্রকল্পটি বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় বাড়ায়নি। মাত্র ৮০০ থেকে ৯০০ কোটি টাকার জন্য প্রোগ্রামটি বন্ধ হয়ে গেলো। ঝরে পড়া ২০ লাখ শিশুর লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছে না।‘সাক্ষরতা নিয়ে আপনাদের লক্ষ্য কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শতভাগ সাক্ষরতা কোনও দেশেই আর সম্ভব না। ৯৯ শতাংশ মানুষকে নিরক্ষরমুক্ত করতে হবে। আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে নিরক্ষরমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছি। কারণ দেশের ২৩ দশমিক ২ শতাংশ জনগোষ্ঠী নিরক্ষর রেখে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে না। ’


সাক্ষরতা কী

মন্ত্রণালয় জানায়, সাক্ষরতা বলতে শুধু অক্ষরজ্ঞান বা স্বাক্ষর করতে পারা নয়। ‘সাক্ষরতা' বলতে মাতৃভাষায় পড়তে পারা, অনুধাবন করা, মৌখিকভাবে এবং লিখিতভাবে বিভিন্ন বিষয় ব্যাখ্যা করতে পারা, যোগাযোগ স্থাপন করতে পারা এবং গণনা করতে পারা।

মহাপরিচালক ড. মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সাক্ষরতা বলতে শুধু অক্ষর বা বর্ণ চেনা নয়, লিখতে, পড়তে ও বলতে পারা। সাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তি ন্যূনতম লেখাপড়া করতে পারবে। গণনা করা ও সাধারণ হিসাব করতে পারবে। পত্রিকা পড়তে ও বুঝতে পারবে। শুধু নাম সাক্ষর করতে পারলেই সাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন বলা যাবে না।’

 
বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেষ মুজিবুর রহমান ১৯৭০ সালের ২৮ অক্টোবর বেতারে ভাষণে বলেছিলেন— ‘নিরক্ষরতা অবশ্যই দূর করতে হবে। পাঁচ বছর বয়স্ক শিশুদের বাধ্যতামূলক অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষাদানের জন্য একটি ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চালু করতে হবে।’ এরপর সাক্ষরতা বিস্তারে আন্তর্জাতিক ফোরামের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সাক্ষরতা দিবস উদযাপিত হয়। ১৯৭৩ সালেই বেসরকারি উদ্যোগে ঠাকুরগাঁওয়ে সাক্ষরতা অভিযান শুরু হয়। ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসের প্রধান অনুষ্ঠান করা হয় ঠাকুরগাঁও জেলায়। বঙ্গবন্ধুর আদেশে এ দিনে ঠাকুরগাঁওয়ের কচুবাড়ী-কৃষ্টপুরকে বাংলাদেশের প্রথম নিরক্ষরতামুক্ত গ্রাম ঘোষণা করা হয়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশের বর্তমান সাক্ষরতার হার ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশ। সাত বছর ও তদূর্ধ্ব প্রায় ২৩ দশমিক ২ শতাংশ জনগোষ্ঠী এখনও নিরক্ষর, যারা কখনও বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়নি বা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়েছে। অথচ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য অর্জনে নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে সাক্ষরজ্ঞান ও কর্মমুখী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করা অত্যন্ত জরুরি।

সাক্ষরতা কর্মসূচির সার্বিক অবস্থা

উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা আইন ২০১৪ প্রণয়নের মাধ্যমে শিক্ষার সুযোগবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে সাক্ষরজ্ঞানদান, জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জীবিকায়ন, দক্ষ মানবসম্পদে পরিণতকরণ, আত্ম-কর্মসংস্থানের যোগ্যতা সৃষ্টি করা এবং বিদ্যালয়বহির্ভূত ও ঝরে পড়া শিশুদের শিক্ষার বিকল্প সুযোগ সৃষ্টি করা হয়। ১৫ বছর ও তার বেশি বয়সের নিরক্ষর নারী-পুরুষকে সাক্ষরজ্ঞানদান, জীবিকায়ন দক্ষতা প্রদান ও জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি হয়।

উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর আওতায় মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্প (৬৪ জেলা) বাস্তবায়নের কাজ শেষ হয় ২০২২ সালের ৩০ জুন। এ প্রকল্পের আওতায় দেশের ৬৪ জেলার ২৪৮টি উপজেলায় ১৫-৪৫ বছর বয়সের ৪৪ দশমিক ৬০ লাখ নিরক্ষরকে সাক্ষর করা হয়।

চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি-৪) সাব-কম্পোনেন্টের আওতায় ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সের বিদ্যালয়বহির্ভূত ১০ লাখ শিশুকে উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ইতোমধ্যে পিইডিপি-৩ থেকে আগত বিদ্যালয়বহির্ভূত ১ লাখ শিশুকে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া কার্যক্রম শেষ হয়। অবশিষ্ট ৯ লাখের মধ্যে এ পর্যন্ত ৮ লাখ ২ হাজার ৫৩৬ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে এবং ২৫ হাজার ৭১২টি শিখন কেন্দ্রের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে পাঠদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এই অবস্থায় কর্মসূচির অর্থায়ন হচ্ছে না।

 
দিবস পালন

সাক্ষরতা দিবসের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে— আলোচনা অনুষ্ঠান, ক্রোড়পত্র প্রকাশ, সংবাদ সম্মেলন, পোস্টার প্রকাশ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় এ সংক্রান্ত টক-শো ও প্রতিবেদন প্রকাশ ইত্যাদি। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর তেজগাঁওয়ের প্রধান কার্যালয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে সকাল ১০টায় সাক্ষরতা দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
 
দিবসটি উপলক্ষে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেছেন, ‘শতভাগ সাক্ষরতা অর্জনে মন্ত্রণালয়ের নিরন্তর প্রয়াস অব্যাহত আছে।’

/এমএস/
সম্পর্কিত
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক করতে একসঙ্গে কাজ করবে দুই মন্ত্রণালয়
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির অর্থ ব্যয় নিয়ে সংশয়
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
সর্বশেষ খবর
ইউক্রেন নিয়ে চীনের শান্তি পরিকল্পনায় পুতিনের সমর্থন
ইউক্রেন নিয়ে চীনের শান্তি পরিকল্পনায় পুতিনের সমর্থন
অ্যাকাডেমিক অবকাঠামো উন্নয়নে বার্জার পেইন্টস-আইবিএর উদ্যোগ
অ্যাকাডেমিক অবকাঠামো উন্নয়নে বার্জার পেইন্টস-আইবিএর উদ্যোগ
রাঙামাটিতে আধাবেলা অবরোধ পালিত
রাঙামাটিতে আধাবেলা অবরোধ পালিত
অভিযোগের জবাব ও স্টার সিনেপ্লেক্সের ভবিষ্যৎ ভাবনা
অভিযোগের জবাব ও স্টার সিনেপ্লেক্সের ভবিষ্যৎ ভাবনা
সর্বাধিক পঠিত
সোনার অলংকার কেনাবেচায় নতুন হার নির্ধারণ
সোনার অলংকার কেনাবেচায় নতুন হার নির্ধারণ
পেঁয়াজ আমদানি শুরু
পেঁয়াজ আমদানি শুরু
তাসকিনকে সহ-অধিনায়ক করে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা
তাসকিনকে সহ-অধিনায়ক করে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা
একীভূত হতে পারে কেউ পাস না করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
একীভূত হতে পারে কেউ পাস না করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
বিএনপির আকস্মিক জেগে ওঠার উদ্দেশ্য খুঁজছে যুগপৎসঙ্গীরা
যুগপৎ ধারায় আসবে নতুন কর্মসূচিবিএনপির আকস্মিক জেগে ওঠার উদ্দেশ্য খুঁজছে যুগপৎসঙ্গীরা