সবার আগে শিক্ষক প্রশিক্ষণের মানোন্নয়ন করার দাবি জানান শিক্ষাবিদ, শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টরা। ‘শিক্ষা-প্রশিক্ষণের মানোন্নয়নে বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ সমূহের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে এ দাবি জানান বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ শিক্ষক সমিতি।
রবিবার (১ ডিসেম্বর) গণমাধ্যমকে জানায়, শনিবার (৩০ নভেম্বর) ঢাকার সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ অডিটোরিয়ামে এ সেমিনার আয়োজন করা হয়।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) নুজহাত ইয়াসমিন।
বেসরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ শিক্ষক সমিতিকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, সব শিক্ষক যেন সহায়িকা অনুযায়ী পাঠদান করেন। বেসরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজগুলোর নানাবিধ সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট উচ্চ মহলের সঙ্গে পরামর্শ করে শিক্ষক প্রশিক্ষণ উন্নত করা হবে।
সারা দেশের শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ প্রশিক্ষণের আওতার বাইরে থাকা মোটেই সমীচীন নয়। সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে সারা দেশের প্রশিক্ষণের চাহিদা পূরণ করার জন্য ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানান নুজহাত ইয়াসমিন।
অনুষ্ঠানে কি-নোট স্পিকার হিসাবে প্রবন্ধ পাঠ করেন, বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি এবং ধানমণ্ডির ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম খান।
তিনি বলেন, বিগত ৩২ বছর ধরে সরকারের কোনও আর্থিক সুবিধা ছাড়াই নিজস্ব অর্থায়নে কয়েক লাখ শিক্ষককে গুণগত মানোন্নয়নে বিএড প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ। সরকারি ও বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজগুলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধীনে একই কোর্স-কারিকুলামে পরিচালিত হলেও বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজগুলোর শিক্ষকদের কোনও প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হয়নি। সরকারি এবং বেসরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজগুলোর যৌথ এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া সারাদেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষিত করা সম্ভব নয়। সরকারি-বেসরকারি টিটিসি মিলে প্রায় ২২ হাজার আসন রয়েছে বিএড প্রশিক্ষণের জন্য। তাই বলা যায়, আসন সংখ্যার বিবেচনায় প্রায় ৭৫ শতাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজগুলো। অথচ সরকারের কোনও প্রশিক্ষণ কোর্সে আমাদেরকে সংযুক্ত করা হয়নি। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি), জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিসহ (নায়েম) কোনও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বেসরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রকে (টিটিসি) প্রশিক্ষণের সুযোগ দেয় না। এক সময় নায়েম বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজগুলোর শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিলেও অজ্ঞাত কারণে ২০১৬ সাল থেকে এই প্রশিক্ষণ বন্ধ আছে। এই দীর্ঘ বঞ্চনা নিরসন করতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, নায়েমের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. আতিকুল ইসলাম পাঠান, ঢাকা সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক রিজিয়া সুলতানা, এনসিটিবির কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মো. আজিজুর রহমান, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ (গণিত) কাজী মো. খায়রুল বাশার।
দুই পর্বের অনুষ্ঠানে প্রথমে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং দ্বিতীয় পর্বে বিএড শিক্ষাক্রম-২০২৪ : পাঠ পরিকল্পনা ও কর্মসহায়ক গবেষণা বাস্তবায়ন বিষয়ক একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন কলেজের সহকারী অধ্যাপক তপন কুমার রায় কর্মশালায় প্রেজেন্টেশন দিয়েছেন।
কর্মশালায় শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইন্সট্রাক্টরদের প্রশিক্ষণ ও কারিকুলাম বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন এনসিটিবির কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আজিজুর রহমান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন কলেজের অধ্যক্ষ এবং বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম খান।