X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১
নতুন বছরের নকশা

প্রেক্ষাগৃহ আর সোশ্যাল হ্যান্ডেল সামলানোর চ্যালেঞ্জ

ওয়ালিউল বিশ্বাস
০১ জানুয়ারি ২০২২, ১৫:২৭আপডেট : ০২ জানুয়ারি ২০২২, ১৩:২৪

শুরু হলো দিনপঞ্জিকার আরও একটি নতুন বছর- ২০২২। তবে নতুন পাতা উল্টানোর আগে পুরনো দুই বছরের একটি ক্ষত সামলাতে হচ্ছে- করোনা। সাংস্কৃতিক অঙ্গন অনেকটাই পিছিয়ে গেছে এই মহামারিতে। সঙ্গে রয়েছে পুরনো মন্দা।

অনেকে মনে করছেন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর অপব্যবহার। যার ফলে মেধাস্বত্ব, শিল্পমান ও মূল্যায়নের বড় চ্যালেঞ্চগুলো চলে আসছে সামনে।

সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সামনের কাতারে থাকা চলচ্চিত্র, টিভি নাটক, মঞ্চনাটক ও সংগীতে করোনার ব্যাপক ক্ষতিসাধন পুষিয়ে আগের অবস্থায় ফেরা এবং নতুন-পুরনো কিছু সমস্যা কাটিয়ে ওঠাই নতুন বছরের বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

২০২১ সালের আলোচিত ও ব্যয়বহুল ছবি ‌‘গলুই’র প্রযোজক হচ্ছেন খোরশেদ আলম খসরু। তিনি বিগত কয়েক দশক চলচ্চিত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। তার মতে সিনেমা হল পুনঃপ্রতিষ্ঠাই হলো চলচ্চিত্রাঙ্গনের প্রধান চ্যালেঞ্জ। 

খসরুর ভাষ্য, ‘প্রথম চ্যালেঞ্জ সিনেমা হল। চলচ্চিত্রে ইনভেস্ট করার লোকের অভাব নেই। দরকার শুধু জায়গাটা তৈরি করা। মানে প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণ। জায়গা হলে ছবির খরচ উঠানো সমস্যা হবে না। তখন আর প্রযোজকের অভাব হবে না। আগে যে  ক’টা হলে ছবি মুক্তি পেত, করোনার দুই বছরে তাও হয়নি। আগে ১০০টির মতো হলে ছবি আসতো। করোনায় প্রায় ৪০টা হল কমে গেছে। এখন ৬০-৬৫ হলে মুক্তি পায়। বড় চ্যালেঞ্জ, আমরা ছবি বানাই কিন্তু দেখাতে পারি না। প্রধানমন্ত্রী যে তহবিল দিয়েছেন, ১০০০ কোটি টাকা, সেটাকে সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার করতে হবে। এটাও যেমন চ্যালেঞ্জ, তেমনি উত্তরণেরও জায়গা। ৩০০-৪০০ হল এই টাকা দিয়ে তৈরি করতে হবে। এমন সংখ্যার প্রেক্ষাগৃহ না হলে ছবি বানানোর খরচ উঠবে না। তথ্য মন্ত্রণালয় যে ৬৪টি তথ্যকেন্দ্রে ৬৮টা সিনেপ্লেক্স করছে সেটা ২০২২-এ বাস্তবায়ন করতে হবে।’ 

তার মতে, তথ্য কেন্দ্রের সিনেপ্লেক্স ও সরকারের ১ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট দুইটা বাস্তবায়ন যেমন চ্যালেঞ্জ তেমনি আমাদের হল সমস্যার উত্তরণের উপায়ও।

সংগীতাঙ্গনে মেধাস্বত্ব নিয়ে সংগ্রাম বহু বছরের। সম্প্রতি সংগীত ঐক্য বাংলাদেশসহ বেশ কিছু শিল্পীর ‍উদ্যোগ সে যাত্রায় অনেকটাই এগিয়ে দিয়েছে এ অঙ্গনকে। তবে তার চেয়েও গভীর এক সংকটের কথা বললেন দেশ বরেণ্য গীতিকবি মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান। সেটা হলো গানের ‘প্রাণ’ হারানোর শঙ্কা।

তিনি বললেন, ‘সবকিছু তো এখন নেট নির্ভর হয়ে গেছে। ফলে সমন্বিত কাজ করবার যে একটি বিষয় ছিল, সেটা ক্রমান্বয়ে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবার যে সুফলটা আমরা পেতাম, সেটা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। গানেও প্রভাব পড়ে। যিনি গান লিখেছেন- গীতিকবি, যিনি সুর করছেন- সুরকার, আবার যিনি গান গাইছেন- কণ্ঠশিল্পী, তারা বসে লেখা, সুর করা বা গাওয়া হচ্ছে না। এটাই বড় আশঙ্কার লক্ষণ। এছাড়া প্রতিভা আগেও যেমন এসেছে, এখনও আছে, ভবিষ্যতেও আসবে।’

দেশের নাটকে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে এসেছে শিল্পী সংকট। একই শিল্পীদের বারবার জুটি হিসেবে পর্দায় আসায় বিরক্তও দর্শকরা। যার অভিযোগ বহুবার সামাজিক মাধ্যমগুলোতে এসেছে। এই শিল্পী সংকটটাই প্রধান সমস্যা বলে মনে করেন দেশের বর্ষীয়ান অভিনেতা-নির্দেশক মামুনুর রশীদ। 

বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে নাটক নিয়ে আছেন তিনি। টিভি, মঞ্চ ও পথনাটকে নানামাত্রায় কাজ করা এ মানুষটির ভাষ্য, ‘মঞ্চনাটকের রচনা, নির্দেশনা ও অভিনয়- এই তিনটি জায়গাতেই অবক্ষয় হয়েছে। ঢাকার বাইরের অবস্থা খুবই খারাপ। একমাত্র চট্টগ্রাম এর ব্যতিক্রম। কিছু কিছু কাজ হচ্ছে। আর ঢাকাতেই কয়েকটি দলের নাটক ছাড়া বাকিগুলোর নাটক দেখা যায় না। আর একটা কথা, এই তিন জায়গায় প্রধান সংকট হলো অভিনয়শিল্পী। একেবারেই অভিনয় নেই। বিশাল এক শূন্যতা তৈরি হয়েছে। অভিনেতা যদি তৈরি করতে না পারি বা অভিনেতারা যদি তাদের দায়িত্ব বুঝতে না পারে- একটা বড় ধরনের সংকট আসতে যাচ্ছে।’

তিনি মনে করেন, অভিনয়শিল্পীদের এই সংকট এবার ধাক্কা দেবে টেলিভিশনেও।

মামুনুর রশীদের ভাষায়, ‌‘মিডিয়াতে এটা ভীষণভাবে পড়বে। মঞ্চকে আগে বলতাম অভিনেতা ও কুশলীদের সূতিকাগার। এই সূতিকাগারেই এখন ঝামেলা চলছে। তার মানে ভবিষ্যতটা কী হতে পারে? ২০২২ সালে এটা বড় চ্যালেঞ্জ। তাই সৃজনশীল লোক খুঁজতে হবে। পেলেই তাদের সুযোগ দিতে হবে। সেটা যে দলই পাক।’

টেলিভিশন নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা টিভি চ্যানেলগুলোকে এ বিষয়ে বলবো- তারা কেন, ঘুরে ফিরে কিছু মানুষকে সুযোগ দিচ্ছে। বৈচিত্রতা রক্ষা না করলে তারাও বড় ধরনের চ্যালেঞ্জে পড়বে। দীর্ঘ পরিকল্পনা নিয়ে ভালো ও তরুণ শিল্পীদের পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে তাদের।’

মঞ্চনাটকের জন্য আরও একটি চ্যালেঞ্জ দর্শক শূন্যতা। তার মতে, ঢাকা শহরে যে কয়েকটি নাটক হচ্ছে, তাতে দর্শক আসছে না। কারণ জ্যাম। উত্তরা, পূর্বাচল, নারায়ণগঞ্জ, পুরান ঢাকার দর্শকরা আর নাটক পাড়াতে আসছে না। তাই জ্যামটা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। গত দুই বছরের করোনায় নাটক অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত। সেটাও এখন বিবেচ্য।

অন্যদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, টিকটকসহ সোশ্যাল হ্যান্ডেলের নানা প্রভাবের কারণে সঠিক শিল্পী তৈরিতে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর কথাও বলছেন এই কিংবদন্তি। কারণ মঞ্চে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও দ্রুত পরিচিতি না পাওয়ার কারণে অনলাইনে অনেকেই প্রস্তুতি ছাড়া যুক্ত হয়ে যাচ্ছেন, যার প্রভাব দ্রুত মূলধারায় পড়বে বলে মনে করছেন মামুনুর রশীদ।

/এমএম/
সম্পর্কিত
খুশি মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান: ‘আবেদন না করেও পাওয়া যায়!’
স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২৪খুশি মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান: ‘আবেদন না করেও পাওয়া যায়!’
‘আমাদের প্রশাসন ও আমলাতন্ত্র উদাসীন’
‘আমাদের প্রশাসন ও আমলাতন্ত্র উদাসীন’
মামুনুর রশীদ: ১৯তম জন্মদিনে অভিনয়ের বাতিঘর!
মামুনুর রশীদ: ১৯তম জন্মদিনে অভিনয়ের বাতিঘর!
‘ফিরতে হবে গাজী মাজহারুল আনোয়ারদের কাছেই’
‘ফিরতে হবে গাজী মাজহারুল আনোয়ারদের কাছেই’
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
সন্ধ্যা নামিলো শ্যাম: গানে ও চিত্রে মুগ্ধতার সমন্বয়
সন্ধ্যা নামিলো শ্যাম: গানে ও চিত্রে মুগ্ধতার সমন্বয়
রসায়ন পরীক্ষায় ১০ জনের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠতা’!
রসায়ন পরীক্ষায় ১০ জনের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠতা’!
শাকিবের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের জায়গা অন্যরকম: চঞ্চল
শাকিবের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের জায়গা অন্যরকম: চঞ্চল