উপমহাদেশের কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে দুনিয়াজুড়ে। গান ভালোবাসেন, অথচ এই শিল্পীকে বাসেন না বা চেনেন না—তেমন শ্রোতা এই জগতে পাওয়া মুশকিল।
বাংলা তো বটেই, বাংলাদেশের সিনেমাতেও গেয়েছেন এই কিংবদন্তি। তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল এই দেশের শিল্পীদের। ছিল অন্তরঙ্গতাও। তেমনই একজন সাবিনা ইয়াসমিন। লতা মঙ্গেশকরকে যিনি গানের সরস্বতী হিসেবেই মানেন।
বোম্বেতে লতার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় সাবিনা ইয়াসমিনের। সেই স্মৃতিচারণ করে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে দেখা হয়েছিল ১৯৭৮ সালে। আমরা একটা ফেস্টিভালে বোম্বে গিয়েছিলাম। আমার সৌভাগ্য যে উনার সামনে গাইতে পেরেছিলাম। উনার সঙ্গে ছবি আছে। সেটা বের করে সকাল থেকেই দেখছিলাম। সেই সফরে আমি, ববিতা, রাজ্জাক, রোজী সিদ্দিকী ছিলাম। সেখানে ছিলেন শচীন দেববর্মন। তিনি বারবার বলছিলেন, ‘অনেক দিন বাংলা গান শুনি না। কতদিন বাংলা গান শুনি না। তুই একটা গান গা।’ তখন আমি ‘পাল তুলে দে’ গানটি গাইলাম। উনি কাঁদলেন। আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।’’
সাবিনা যোগ করেন, ‘‘তখন দেখি হঠাৎ লতাজি আসছেন। আমি হারমোনিয়াম ছেড়ে অন্যদিকে পালিয়ে গেলাম। কিন্তু আমাকে আবার ডাকা হলো। বলা হলো, গান গাইতেই হবে। ‘জন্ম আমার ধন্য হলো’ গাইলাম। লতাজি এত প্রশংসা করলেন! আমি বললাম, ছোটবেলায় আপনার গান শুনে বড় হয়েছি। সত্যি বলতে, এখনও প্রতিদিন উনার গান শুনি।’’
উপমহাদেশের কিংবদন্তি শিল্পী লতাকে হারিয়ে সাবিনা ইয়াসমিন শোকে মুহ্যমান। বললেন, ‘কী বলবো আর! বলার মতো ভাষা নেই। সকাল থেকেই মুড অফ। কান্নাকাটি করেছি। জানি, পৃথিবীর নিয়মে সবই চলবে। তিনি (লতা মঙ্গেশকর) চলে গেলেন। কিন্তু আমার মনে সবসময় একটা চিন্তা ভর করতো, ভাবতাম, তিনি হয়তো কখনও যাবেন না। লতা মঙ্গেশকর ছাড়া একটা পৃথিবীতে—ভাবাই যায় না। আমি ভাগ্যবান যে লতাজির সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল, কথা হয়েছিল। সেই মুহূর্তগুলো আজও আমার মনে ভর করে। এখন সেদিনের স্মৃতি খুব মনে পড়ছে। এত বড় মাপের শিল্পী কিন্তু কাছে গিয়ে বোঝার উপায় নেই। একটা কথা তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, যত বড় শিল্পী ছিলেন, মানুষ হিসেবে ছিলেন ততই বিনয়ী।’
১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর লতার জন্ম এক মারাঠি পরিবারে। বাবার হাত ধরেই গান ও অভিনয়ের জগতে প্রবেশ করেন তিনি। ১৩-১৪ বছরে প্রথম গান গেয়েছিলেন মারাঠি ছবিতে। হিন্দিতে প্রথম প্লেব্যাক করেন ‘মজবুর’ সিনেমা দিয়ে। লতার সুরেলা কণ্ঠ সিনেমা ও গানে প্রাণ ঢেলে দিতো। নক্ষত্রপতনে তাই শোকস্তব্ধ দুনিয়া।
২৭ দিন ধরে করোনা, চলেছে নিউমোনিয়ার সঙ্গে লড়াই। ৯ জানুয়ারি লতার করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এরপর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে। সেখানে অবস্থার অনেকটাই উন্নতি হয়েছিল লতার। ৩০ জানুয়ারি তাঁর করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। ভেন্টিলেশন থেকে বের করেও নিয়ে আসা হয় সুরসম্রাজ্ঞীকে। এরপর আজ (৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টা ১২ মিনিটে না ফেরার দেশে চলে গেলেন লতা মঙ্গেশকর।