X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

সুসং দুর্গাপুরে মিথিলার দিনগুলো...

সুধাময় সরকার
সুধাময় সরকার
০৭ অক্টোবর ২০২২, ১৯:৩২আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০২২, ১৬:০৯

পৃথিবীটাকে ঈগল পাখির চোখে দেখার মতো এমন সুযোগ খুব কম মানুষেরই হয়। যার মধ্যে অন্যতম একজন মডেল-অভিনেত্রী ও শিশুদের জীবনমান উন্নয়নকর্মী রাফিয়াত রশিদ মিথিলা। এই ঈগলকন্যার ঢাকা-কলকাতা তো বটেই, আফ্রিকার জীবন সম্পর্কেও তার লেখার মাধ্যমে বেশিরভাগ মানুষ জানেন। সম্প্রতি এই অভিনেত্রী অন্যরকম জীবন কাটিয়ে এলেন নেত্রকোনার সুসং দুর্গাপুর এলাকায়। যেখানে তিনি খুঁজে পেয়েছেন মোবাইল ফোন আর টেলিভিশনহীন ভিন্ন জীবনের তল। কাছ থেকে দেখেছেন পাহাড়ের ঝর্ণা ধরে বয়েচলা ঝিরি আর গারো-হাজং সম্প্রদায়ের নেটওয়ার্কবিহীন সকাল-সন্ধ্যা। গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ‘কাজল রেখা’ ছবির সুবাদে এই অভিনেত্রীর এমন অভিজ্ঞতা। যিনি এই ছবির মাধ্যমে প্রথমবার অভিনয় করেছেন ‘ভিলেন’ চরিত্রে! প্রায় ৮ মাস ধরে চলা ছবিটির ক্যামেরার কাজ শেষ হলো ৫ অক্টোবর। ছবিটির সেট ও লুক প্রকাশে কঠোরতা রয়েছে নির্মাতার পক্ষ থেকে। তাই বাংলা ট্রিবিউন-এর পাঠকদের জন্য মিথিলার বয়ানে তুলে ধরা হলো ছবিটির শুটিংকাল আর দুর্গাপুরের অপরূপ দৃশ্যগুলোর শব্দরূপ-    

ছবিটির শুটিং ৮ মাস ধরে দেশের অনেকগুলো স্থানে হয়েছে। তবে আমার অংশটি মূলত নেত্রকোনায় সুসং দুর্গাপুরে হয়েছে। মেঘালয়ের বর্ডার ঘেঁষা অদ্ভুত একটা অঞ্চল। ৫/৬ মাস আগে প্রথম লটে অংশ নিয়েছি। আর শেষটা তো করলাম দুদিন হলো, ৫ অক্টোবর। তো প্রথমদিন সেখানে পৌঁছানোর পর এতো অবাক হয়েছি- ঠিক ততোটা মুখে বলা যায় না। প্রকৃতি তো বটেই, যে সেট বা আয়োজন দেখলাম, সেটা দেখে সত্যিই বিস্ময়কর মুগ্ধতায় ভেসে গেলাম। 

অনেকেই জানেন, ‘কাজল রেখা’র গল্পটা তিনশ বছর আগের প্লট। মৈমনসিংহ গীতিকা থেকে নেওয়া। ফলে সেই সময়টাকে ধরার জন্য যা যা করা দরকার ছিলো, তার সবটাই করেছেন সেলিম ভাই (গিয়াস উদ্দিন সেলিম)। তখন জানলাম, এই সেট তৈরির জন্য সেলিম ভাই একজন নামকরা আর্কিটেক্টের সঙ্গে মিলে লম্বা সময় কাজটা করেছেন। তারই বাস্তবচিত্র প্রথমদিন দেখলাম। এটা বলে বুঝানো যাবে না- কতোটা সুন্দর। বাঁশের দোতলা বাড়ি। নকশাগুলো পাথরের। এতো সুন্দর সেট-পরিবেশ। সেই সেটের পাশ দিয়েই পাহাড় থেকে নেমে আসা একটা অদ্ভুত সুন্দর ছড়া/ঝিরি চলে গেছে। রোজ শুট শেষ করে আমরা পা ভিজিয়ে বসে থাকতাম, খুব মজা করতাম।

সুসং দুর্গাপুর/ ছবি: রাফিয়াত রশিদ মিথিলা এই কাজটি করতে গিয়ে আমার ব্যক্তিগতভাবে খুব ভালো লেগেছে যে, এমন অপরূপ পরিবেশে আমরা শুট করেছি। অনেক কষ্টও করতে হয়েছে। কিছু জায়গা খুব কঠিন ছিলো। পাহাড়ে পিচ্ছিল পথে ওঠা-নামা। আমার চরিত্রটি একটু নেগেটিভ রোল। সেটির জন্য একটা দৃশ্যে খুব কষ্ট হয়েছে। যেখানে দেখা যাবে, আমাকে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছিল। সেটা ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। গর্ত করে কোমরের ওপর পর্যন্ত আমাকে মাটিচাপা দেওয়া হয়। তখন দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। শরীর ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। এমন কিছু দৃশ্যে বেশ কষ্ট করতে হয়েছে। 

এই ছবিতে আমার মূলত দুটো লুক। যেমনটা আমাকে আগে কেউ দেখেনি। এই দুটো লুক আনতেও বেগ পেতে হয়েছে। এটাও একটা ইন্টারেস্টিং সাইড। এরপর এবারই প্রথম দৃশ্যের প্রয়োজনে ঘোড়ায় চড়েছি। প্রথম প্রথম ভালোই ভয় ভয় লেগেছিল। এছাড়া দুইবার ভালো বৃষ্টির মুখে পড়ি আমরা। দুটো দিন বসে ছিলাম। এটা বড় ক্ষতি আর অস্বস্তির বিষয়। কাজে গিয়ে অসহায়ের মতো বসে থাকা। তবে মজার দিক হলো, একদিন ঝুম বৃষ্টিতে শুটিং প্যাকআপ। দেখলাম নির্মাতা সেলিম ভাই, ডিওপি খসরু ভাই ও সেলিম ভাই মাছ ধরতে নেমে গেলেন! অনেকগুলো পুঁটিমাছ ধরেছেন। সেগুলো পরে ডিনারে ভেজে খেয়েছি। খুব স্বাদ ছিলো।

সেলিম ভাইয়ের সঙ্গে এটা আমার প্রথম কাজ। এমন চরিত্রে প্রথম। ফলে এই কাজটি আমার জন্য যেমন আগ্রহের তেমন ভয়েরও ছিলো। আগ্রহ হলো- ভাই আমাকে কাস্ট করেছেন। আর ভয়টা হলো- ভাইয়ের মতো করে আমি ডেলিভারি দিতে পারছি কী না। ফলে শুটে আমি বরাবরই সচেতন ছিলাম, সেলিম ভাই যেমন চাইছেন তেমন হচ্ছে কি না। বার বার বলছিলাম হচ্ছে তো? উনি বলেছেন, হয়েছে। জানি না আসলে কতোটা হয়েছে। অন্যদিকে সিনেমাটোগ্রাফার খসরু ভাইয়ের সাথে বিজ্ঞাপনে কাজ করেছি আগে। লক্ষণীয় দিক, শুটিংয়ে জয়েন করলে খসরু ভাই শুধু সিনেমাটোগ্রাফার থাকেন না, হয়ে যান চিফ এডি (সহকারী পরিচালক)। সঙ্গে মূল চিফ এডি ছিলেন মৌ। তো আমার অংশের শুটিংয়ে দেখা যেতো আমরা তিনজনই পরিচালকের সহকারী হয়ে থাকতাম।  

সুসং দুর্গাপুর/ ছবি: রাফিয়াত রশিদ মিথিলা সহশিল্পীদের কথা বলি- শরিফুল রাজের সঙ্গে আমার প্রথম কাজের অভিজ্ঞতা। দেখলাম ও খুব ঠাণ্ডা। তাছাড়া ও তখন খানিকটা চিন্তার মধ্যেও ছিলো পরিবার থেকে দূরে এসে। কারণ তখন ওর বাচ্চা হওয়ার সময় ছিলো। বাট ও বেশ ঠাণ্ডা প্রকৃতির। আর মন্দিরা (কাজল চরিত্রে) তো নতুন মানুষ। নতুন হিসেবে নির্মাতা ও সহশিল্পীদের যথেষ্ট ফলো করেছে ও। আসলে সবাই মিলে দারুণ একটা টিম ছিলাম। খুব আনন্দ করে কাজটা করেছি।

আমি মনে করি, ছবিটাতে মূলত বাংলার রূপ দেখা যাবে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শুট হয়েছে। আমি হয়তো সবটাতে ছিলাম না। বাট পুরো ইউনিট বাংলার রূপ ধরতে খুলনা, সিলেট, কক্সবাজার ঘুরেছে। বাংলার ঐতিহ্যটাকে দেখা যাবে ছবিটাতে।

আসলে মানুষটা আমি যেমন, যেখানেই যাই টিমের অংশ হয়ে যাই। আমি তো ছুটের মধ্যে থাকি। এই আফ্রিকা তো এই ভারত। তো যেখানেই যাই, ইউনিট থেকে সবাই আমাকে ম্যাসেজ করতো। মিস করতো। এটাই ছিলো ‘কাজল রেখা’ পরিবার থেকে বড় প্রাপ্তি। জানি না অভিনয়ে কতোটা করতে পেরেছি বা ছবিটা কেমন হবে- বাট এই স্মৃতিটুকু থেকে যাবে।

আমাদের টাইট সিডিউল ছিলো। রোজ ভোর সাড়ে চারটায় কলটাইম। টানা রাত ৯টা পর্যন্ত কাজ করতাম। বড় টিম তো। রেডি হওয়া। লোকেশনে যাওয়া। এসব কারণে আরলি কল টাইম থাকতো। তারপরও রাতে প্যাকআপ হওয়ার সময় আমি পিড়াপিড়ি করতাম- আরও একটা সিন করতে পারবো! সেলিম ভাই অবাক হয়ে বলতেন, তুমি আর্টিস্ট নাকি এডি? 

সুসং দুর্গাপুর/ ছবি: রাফিয়াত রশিদ মিথিলা আমরা যেখানে ছিলাম হাজং ও গারোদের এলাকা সেটা। সেখানেই শুটিং সেট, সেখানেই থাকা। তারাও আমাদের অংশ ছিলো। তাদের বাড়িতে যেতাম, খেতাম, গল্প করতাম। তো ঐ জীবনটাও দেখা হলো। এটাও একটা বড় অভিজ্ঞতা।

দুর্গাপুরে যেখানটায় আমরা থাকতাম, সেখানে সানসেটের সঙ্গে সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। ইন্টারনেট তো দূরের কথা, সেখানে মোবাইল নেটওয়ার্কও ছিলো না। কোনও টেলিভিশন নেই! এই সময়ে এমনটা ভাবা যায়? দুর্গাপুরের দিনগুলোতে আসলে পুরনো অভিজ্ঞতায় ফিরে গেছি আমরা- যখন দেশে টেলিভিশন-মোবাইল ছিলো না।

আমি চাকরির সুবাদে পৃথিবীর অনেক দেশ ঘুরেছি, কিন্তু ‘কাজল রেখা’ আমাকে বাংলাদেশের ভেতরেই আলাদা একটা দেশ দেখালো। যে দেশ শিশুর মতো প্রকৃতির কোলে হেসে-খেলে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। যে রূপ আমি আর দেখিনি দুচোখে, ছুঁইনি তারে শীতল ঝিরির বুকে পা ছড়িয়ে। 

ধন্যবাদ গিয়াস উদ্দিন সেলিম ভাই।

সুসং দুর্গাপুর/ ছবি: রাফিয়াত রশিদ মিথিলা পাদটিকা:

সরকারি অনুদান নিয়ে বাঙাল ফিল্মস-এর ব্যানারে নির্মাণ হচ্ছে ‘কাজল রেখা’। এতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মন্দিরা চক্রবর্তী। তার বিপরীতে আছেন শরিফুল রাজ। ভিলেন কঙ্কণ দাসী চরিত্রে পাওয়া যাবে মিথিলাকে।  

২০০৯ সালে ব্লকবাস্টার ‘মনপুরা’র মুক্তির পরই এই ছবিটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন গিয়াস উদ্দিন সেলিম। প্রযোজক পাননি, নির্মাণের পরিবেশ পাননি, মনের মতো শিল্পী পাননি− কিন্তু হাল ছাড়েননি। বরং প্রতিনিয়ত ছবিটি নির্মাণ প্রক্রিয়া চালিয়ে গেছেন নীরবে। অবশেষে ২০২০ সালে ছবিটির জন্য তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুদান পান সেলিম।

জানা যায়, ৩ থেকে ৫শ’ বছর আগে ৯ বছর বয়স হলেই সমাজের নিয়ম অনুযায়ী মেয়েদের বিয়ে দিতে হতো। কাজল রেখার বয়স যখন ৯ হয়, তখন এক নতুন গল্প তৈরি হয়। সেটিই উঠে আসবে সেলিমের এই সিনেমায়।নির্মাতা জানান, সম্পাদনার কাজ দ্রুত শেষ করে নতুন বছরের প্রথমাংশে ছবিটি মুক্তি দিতে চান তিনি। মিথিলার সেলফিতে টিম ‘কাজল রেখা’

/এমএম/
সম্পর্কিত
নায়িকাদের ঈদ: এগিয়ে বুবলী, আরও যারা মিছিলে…
নায়িকাদের ঈদ: এগিয়ে বুবলী, আরও যারা মিছিলে…
টলিউডে মিথিলার সিনেমায় ঢাকার অনিমেষ! (ভিডিও)
টলিউডে মিথিলার সিনেমায় ঢাকার অনিমেষ! (ভিডিও)
মন্ত্রীর অপেক্ষায় ‘কাজল রেখা’, আরও সময় লাগবে ‘দরদ’-এ!
মন্ত্রীর অপেক্ষায় ‘কাজল রেখা’, আরও সময় লাগবে ‘দরদ’-এ!
এক সিনেমায় ২০ গান, এলো প্রথমটি (ভিডিও)
এক সিনেমায় ২০ গান, এলো প্রথমটি (ভিডিও)
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
প্রেম নাকি বিয়ে, মুখ খুললেন ইলিয়ানা
প্রেম নাকি বিয়ে, মুখ খুললেন ইলিয়ানা
এফডিসিতে মারামারি: যৌথ বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হলো
এফডিসিতে মারামারি: যৌথ বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হলো
সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত, রাফীর সিনেমাটি প্রদর্শনের অযোগ্য!
সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত, রাফীর সিনেমাটি প্রদর্শনের অযোগ্য!
সৌন্দর্যের সংজ্ঞা বদলাতে চান ম্রুনাল
সৌন্দর্যের সংজ্ঞা বদলাতে চান ম্রুনাল
‘জংলি’ মিশনে সিয়ামের সঙ্গী বুবলী
‘জংলি’ মিশনে সিয়ামের সঙ্গী বুবলী