X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১
শুভ জন্মদিন

শরণার্থী হয়ে এসে যেভাবে হলেন ঢালিউডের রাজা

বিনোদন রিপোর্ট
২৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০৯আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:৪১

কলকাতার নাকতলা এলাকার জমিদার বংশের সন্তান তিনি। সচ্ছল-সুখী পরিবেশেই বেড়ে ওঠা। খামখেয়ালিতে পড়াশোনায় মন বসেনি সেভাবে। স্কুল জীবনেই ওঠেন মঞ্চে, অভিনয়ে। এর জন্য পাড়ি জমান তৎকালীন বম্বেতেও। কিন্তু গণেশ সুপ্রসন্ন হয়নি।

কলকাতায় ফিরে করলেন বিয়ে। তখন সবে ২০-এর যুবক তিনি। উড়নচণ্ডী তরুণের জীবনে এলেন খায়রুন্নেছা লক্ষ্মী। শুধু নামে নয়, সত্যিকার অর্থেই জীবনে লক্ষ্মী খুঁজে পান তিনি। বছর না ঘুরতে ঘর আলো করে আসে পুত্রসন্তান। আরও এক বছর পর কলকাতায় বাঁধে দাঙ্গা। নিঃসন্দেহে সে ঘটনা কালো অধ্যায়। কিন্তু তার জীবনে এই দাঙ্গাই যেন নতুন রাস্তা খুলে দিয়েছিল।

বৈরি সে পরিবেশে থাকতে না পেরে বাধ্য হয়ে তিনি পা বাড়ান ঢাকার দিকে। স্ত্রী ও পুত্রকে নিয়ে ওঠেন ৮০ টাকা মাসিক ভাড়ায় কমলাপুরের একটি বাসায়। যেহেতু অভিনয় জগতে কাজের অভিজ্ঞতা আগে থেকেই ছিল, তাই ঢাকায় এসে খুব বেশি দিন জুতার তলা ক্ষয় করতে হয়নি।

১৯৬৪ সালেই সহকারী পরিচালক হিসেবে ঢালিউডে কাজ শুরু করেন তিনি। প্রথম ছবির নাম ‘উজালা’। কিন্তু যার জন্য অপেক্ষা করছিলো অভিনয়ের সুবিশাল আকাশ, তার কি ক্যামেরার পেছনে পড়ে থাকলে চলে! একদম তাই, দ্বিতীয় প্রজেক্টের আশিভাগ কাজ সেরেই ছেড়ে দেন সহকারী পরিচালকের পদ।

১৯৬৬ সালে ‘১৩ নম্বর ফেকু ওস্তাগার লেন’ দিয়ে শুরু হয় তার ঢাকাই সিনেমার জার্নি। যদিও ছবিতে তার চরিত্রটি ছিলো সংক্ষিপ্ত। তবে নিজের দৌড় বোঝাতে ভুল করেননি। ফলে একই বছর কালজয়ী নির্মাতা জহির রায়হানের ‘বেহুলা’ সিনেমায় কাজের সুযোগ আসে। এখানে নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করে রাতারাতি নিজের অবস্থান পাকা করে নেন তিনি। এরপরের গল্পটা শুধুই এগিয়ে যাওয়ার।

দীর্ঘ রূপালি জীবনে তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন তিনি। বাণিজ্যিক মাসালা সিনেমা থেকে গল্পনির্ভর ছবি, সবখানেই দ্যুতি ছড়িয়েছেন। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সিনেমা হলো- ‘বেহুলা’, ‘আগুন নিয়ে খেলা’, ‘এতটুকু আশা’, ‘নীল আকাশের নীচে’, ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘ওরা ১১ জন’, ‘অবুঝ মন’, ‘রংবাজ’, ‘আলোর মিছিল’, ‘অশিক্ষিত’, ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘বড় ভালো লোক ছিল’ ইত্যাদি।

শুধু অভিনয় নয়, নির্মাণেও নৈপুণ্য দেখিয়ে গেছেন তিনি। তার পরিচালিত ছবির সংখ্যা ১৬।

নায়করাজ রাজ্জাক/ ছবি: সাজ্জাদ হোসেন এক জীবনে প্রায় সব অর্জনই নিজের করে নিয়েছেন তিনি। দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন ২০১৫ সালে। শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন পাঁচবার। অর্জন করেছেন আজীবন সম্মাননাও। খ্যাতি পেয়েছেন নায়করাজ হিসেবে।

তবে পুরস্কারের ঊর্ধ্বেও তার প্রাপ্তি হলো সর্বস্তরের মানুষ ও ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রির ভালোবাসা। বলা বাহুল্য, ঢালিউডের অন্যতম ক্লিন ইমেজের সর্বজনপ্রিয় তারকা তিনি। যার অভাব প্রতি মুহূর্তে ভাবায়, ভোগায় ঢাকাই সিনেমাকে। ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট মারা গেছেন তিনি।  

আজ সোমবার (২৩ জানুয়ারি) তার জন্মদিন। বেঁচে থাকলে ৮১ বছরে পা রাখতেন। যদিও তার নামটি সবারই জানা, তবু বলার জন্য বলা; তিনি নায়করাজ রাজ্জাক।

তার জন্মদিন উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী আয়োজন রেখেছে চ্যানেল আই। এছাড়া চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে সোমবার (২৩ জানুয়ারি) বাদ আসর দোয়া মাহফিলের আয়োজন থাকছে। তবে পারিবারিকভাবে রাজ্জাকের জন্মদিনে উদযাপন নয় বরং দোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানালেন তার বড় ছেলে বাপ্পারাজ। 

তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আব্বাকে চলে যাওয়ার পর কোনও সেলিব্রেট করা হয়না। এমনিতে মিলাদ, দোয়া করা হয় পারিবারিকভাবে। এর বাইরে কিছু না। আর অন্যরা আব্বাকে নিয়ে কী করলো, সেটা নিয়েও আমাদের মধ্যে অতো ভাবনা নেই। কারণ সম্মানটা তো আসলে বলকয়ে আদায় করার কিছু নেই। আমি শুধু এটুকু বলতে পারি আব্বার জন্য দোয়া করবেন সবাই।’

উল্লেখ্য, রাজ্জাকের ছোট ছেলের নাম সম্রাট। বাবার পথ ধরে দুই পুত্রও সিনেমায় কাজ করেছেন। 

/কেআই/এমএম/
সম্পর্কিত
রাজাহীন ঢালিউডের অর্ধযুগ
মৃত্যুদিনে স্মরণরাজাহীন ঢালিউডের অর্ধযুগ
‘রাজ্জাক ভাই শুধু আমার’
নায়করাজ স্মরণ‘রাজ্জাক ভাই শুধু আমার’
নায়করাজের জন্মদিন ঘিরে তিন দিনের আয়োজন
নায়করাজের জন্মদিন ঘিরে তিন দিনের আয়োজন
মুকুটটা পড়ে আছে, রাজাই শুধু নেই...
মুকুটটা পড়ে আছে, রাজাই শুধু নেই...
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
১৬ বছর পর জেনস সুমনের ফেরা (ভিডিও)
১৬ বছর পর জেনস সুমনের ফেরা (ভিডিও)
মা হারালেন বেবী নাজনীন
মা হারালেন বেবী নাজনীন
ওমর: ‘নায়িকাবিহীন’ এক থ্রিলার
সিনেমা সমালোচনাওমর: ‘নায়িকাবিহীন’ এক থ্রিলার