X
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪
৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
মুখোমুখি

‘একটু সময় নিচ্ছি, সময় দিচ্ছি নিজেকে’

কামরুল ইসলাম
২৫ অক্টোবর ২০২৩, ১৮:১২আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৩, ১২:২৪

মধ্য দুপুর। অথচ নরম আলো বিলাচ্ছে সূর্য। ক্যালেন্ডারে চোখ রাখতেই বোঝা গেলো, প্রকৃতিতে স্নিগ্ধ হেমন্তের আগমন ঘটেছে। এমন কোমল দুপুরে (২৫ অক্টোবর) মুঠোফোনের ওপাশে পাওয়া গেলো হেমন্তের মতো স্নিগ্ধ অভিনেত্রী সারিকা সাবাহকে। মধ্যাহ্নভোজের পালা সেরে জিরিয়ে নেওয়ার ফাঁকে খুলে দিলেন গল্প-কথার ডালি। যেখানে অনস্ক্রিন সারিকার কাজের পাশাপাশি অফস্ক্রিনের ভাবনাও খুঁজে পাওয়া গেলো… 

বাংলা ট্রিবিউন: শোবিজ উদ্যানে বহ্নিশিখা হয়ে উঠেছিলেন। ইদানীং সেই শিখা কি খানিকটা ম্লান?

সারিকা সাবাহ: আসলে একটু সময় নিচ্ছি, সময় দিচ্ছি নিজেকে। অনেক কাজ তো করলাম। দর্শক আমাকে মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের টিভি সিরিজ ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’র ঝুমুর হিসেবে চিনেছে। ভালোবাসা দিয়েছে। কিন্তু এর সঙ্গে কিছু নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াও পেয়েছি। আমার স্বাস্থ্যগত কারণে। মনে হয়েছে, তারা তো ভুল বলছেন না। তাই টানা পাঁচ মাস চেষ্টার মাধ্যমে অনেকটা ওজন কমিয়েছি। এতে একটা গ্যাপ হয়েছে। আবার শিল্পী হিসেবে নিজের মধ্যেও কিছু উপলব্ধি এসেছে, ভালো গল্প-চিত্রনাট্য বোঝার শক্তি হয়েছে। তাই কাজের সংখ্যা কমে গেছে।

বাংলা ট্রিবিউন: শুধু স্বাস্থ্যগত উপলব্ধি নাকি অতি ব্যস্ততা ভালো লাগে না?

সারিকা সাবাহ: আমার মনে হয় এখন অধিকাংশ নাটকে ব্যবসার চিন্তাভাবনা থাকে। আমি গত ঈদে তিনটা নাটক করেছিলাম, একদম অফট্র্যাকের। খুব সুন্দর গল্প, নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়েছি। কিন্তু দুর্ভাগ্য, এসব কাজের রিচ কম। কাজের ডাক যে পাচ্ছি না, এমন না। কমেডি ধাঁচের কাজ, নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে চাইলে অনেক করতে পারি। আমার কাছে মনে হয়েছে, নিজের সঙ্গে আর ফাইট করতে চাই না।

সারিকা সাবাহ বাংলা ট্রিবিউন: অনেকেই বলেন, টিকে থাকার জন্য ইচ্ছে বা পছন্দের বাইরেও কাজ করতে হয়...

সারিকা সাবাহ: মিডিয়া সম্পর্কে আমি তেমন কিছুই জানতাম না। কীভাবে এখানে কাজ হয়, কীভাবে কাজ পায়, কোনও ধারণা ছিল না। আসার পর ধীরে ধীরে বুঝলাম। অনেকে বলতো, তোমাকে মনে রাখতে হলে নিয়মিত কাজ করতে হবে। আমি আসলে তখন বুঝতামও না যে কোন কাজটা করা উচিত। নিজের মধ্যে ম্যাচুরিটি ছিল না, কেউ সেভাবে গাইডও করেনি। এ কারণে যখনই মোটামুটি পরিচিত, ভালো একজন ডিরেক্টরের কাজ আসতো, করে ফেলতাম। এটা ভাবতাম না যে স্ক্রিপ্ট কেমন, আমার চরিত্রটার প্রভাব কেমন। তো আমি যেহেতু অভিনয়টা শেখার চেষ্টা করছি, তাই যেকোনও কাজ আর করতে চাই না।

বাংলা ট্রিবিউন: এই মুহূর্তে আপনার হাতে কী কাজ আছে?

সারিকা সাবাহ: সত্যি বলতে, বেশ কয়েকটা কাজ নিয়ে কথা হচ্ছে, কিন্তু চূড়ান্ত হয়নি। এটা তো আসলে দীর্ঘ প্রক্রিয়া। কয়েকটা ওয়েব প্রজেক্টের জন্য অডিশন দিচ্ছি। আর কিছু ব্র্যান্ডের হয়ে কাজ করছি। এর বাইরে আমার লাইফস্টাইল নিয়েও কিছু কনটেন্ট করার পরিকল্পনা আছে।

সারিকা সাবাহ বাংলা ট্রিবিউন: অভিনয় থেকে আপনি আসলে কী চান?

সারিকা সাবাহ: আমি সবসময় মানুষ হিসেবে নিজের কাছে সৎ থাকতে চাই। নিজে যেটা পছন্দ করি না, সেটা করতে চাই না। আমি যেসব কাজের দর্শক, সেরকম কিছু করতে চাই। এই যেমন বাঁধন আপু নেটফ্লিক্সের ‘খুফিয়া’তে কাজ করেছেন। এটাতে তার অভিনয় আমার খুব ভালো লেগেছে। প্রতিনিয়ত তিনি নিজের অভিনয়ে উন্নতি করছেন। এটা তো একটা আর্ট, এখানে সন্তুষ্ট হওয়ার জায়গা নেই। তবে আমি চাই, দশ বছর পরে আমি আজকের চেয়ে অনেক ভালো অভিনয় করতে। যাতে মানুষ অন্তত বলে, সারিকা নিজেকে ভাঙতে পেরেছে।

বাংলা ট্রিবিউন: তার মানে আপনাকে ফর্মুলা সিনেমার গ্ল্যামারাস নায়িকা হিসেবে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই! 

সারিকা সাবাহ: ভালো স্ক্রিপ্ট পেলে আমি এখনই সিনেমা করতে চাই। আর গ্ল্যামারটা খুব দরকার কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে। কিন্তু আমি যদি দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকতে চাই, তাহলে অভিনয়েই মনোযোগ দিতে হবে। পৃথিবীর যত বিখ্যাত অভিনেতা-অভিনেত্রী, তাদের সবাই যে খুব সুদর্শন, তা কিন্তু না। আমি যদি মানুষের আবেগটা ধরতে পারি, তাদের প্রত্যাশিত কাজটা দিতে পারি, সেখানেই আমার সার্থকতা। সুন্দর তো অনেক কিছুই হয়। যেকোনও ফুলই সুন্দর হয়, কিন্তু সেটা সুবাস দিচ্ছে কিনা, তা বড় বিষয়।

সারিকা সাবাহ বাংলা ট্রিবিউন: এবার একটু পেছনে যাই। অভিনয় করে প্রথম কত টাকা পেয়েছিলেন আর সেই টাকা দিয়ে কী করেছিলেন? 

সারিকা সাবাহ: একটি বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করে ১৫ হাজার টাকা পেয়েছিলাম। তখন আমি এটাও বুঝতাম না যে অভিনয় করলে টাকা পাওয়া যায়! ভাবতাম মানুষ আমাকে বিলবোর্ডে, পর্দায় দেখছে, এটাই অনেক বেশি। তো ওই টাকা দিয়ে বাবা ও মায়ের জন্য উপহার কিনেছিলাম। যেহেতু আমি তাদের একমাত্র সন্তান। আমার পুরো পৃথিবীটাই তাদের জন্য।

বাংলা ট্রিবিউন: সোশ্যাল মিডিয়ায় পাওয়া এমন কোনও মন্তব্য বা মেসেজ, যেটা এখনও মনে আছে… 

সারিকা সাবাহ: একজন বলেছিলেন, তার মা সারা দিন বাসায় একা থাকেন। বয়স্ক মানুষ, তেমন কিছু করতেও পারেন না। তিনি ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’-এ আমার অভিনয় দেখার জন্য অপেক্ষা করতেন। ঝুমুরের পা খোঁড়া, তার কষ্টটা অনুভবের চেষ্টা করতেন। তো একজন বৃদ্ধ মানুষ আমার অভিনয় দেখে পছন্দ করেছেন, এটা আমার কাছে অনেক বড় কিছু। আরেকটা ঘটনা আমি শেয়ার করতে চাই। একবার শুটিং করছিলাম পুরান ঢাকায়, একটি বিল্ডিংয়ের ছাদে। ওই সময় একটি মেয়ে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে। আমি নিচে নামার পর মেয়েটা আমাকে জড়িয়ে ধরে প্রায় ১০ মিনিট শুধু কান্না করেছে। আমি ফিল করছিলাম ওর পুরো শরীর কাঁপছে। এত বড় পৃথিবীতে আমি ক্ষুদ্র একটা মানুষ, আমার জন্য আরেকজন মানুষ কান্না করছে! আমি যে এখন কথাটা বলছি, এখনও আমার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। 

সারিকা সাবাহ বাংলা ট্রিবিউন: কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক শেষ করেছেন। এই দিকে কোনও ভাবনা আছে?

সারিকা সাবাহ: আমার খুব বড় একটি স্বপ্ন আছে, নিজের একটা আইটি ফার্ম হবে। এটার জন্য একটু একটু করে কাজ করছি। 

বাংলা ট্রিবিউন: শোবিজের কোন দিকটা আপনার অপছন্দ?

সারিকা সাবাহ: আমরা কাজের চেয়ে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বেশি কথা বলি। এটা দর্শকের ক্ষেত্রে যেমন সত্য, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ক্ষেত্রেও। যখন কাজ নিয়ে আলোচনায় থাকতে পারি না, তখন পারসোনাল লাইফ নিয়ে কথা বলা শুরু করি। আমার মনে হয় এটা হওয়া উচিত না। আমরা যখন কোনও শিক্ষকের কাছে পড়ি, এটা কিন্তু ভাবি না যে স্ত্রীর সঙ্গে তার সম্পর্ক কেমন। তার শিক্ষাদানের ওপরেই তাকে বিচার করি। তো আমি কেমন অভিনয় করছি, সেটা নিয়ে কথা হোক। কার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো, কার সঙ্গে খারাপ, এসব ব্যক্তিগত চর্চা না থাকলে আমার মনে হয় শোবিজটা আরও সুন্দর হতো। 

সারিকা সাবাহ বাংলা ট্রিবিউন: একটি ব্যক্তিগত প্রশ্ন যে আমারও ছিল… যদি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন আর কী

সারিকা সাবাহ: জি বলেন।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার প্রেমের কথা শুনেছিলাম। বিয়ের ভাবনাও ছিল। সেটা কতদূর?

সারিকা সাবাহ: প্রেম তো আসলে সবার জীবনেই থাকে। আমারও প্রেম ছিল, এখন নেই। আর এখন প্রেম-বিয়ে নিয়ে চিন্তাও করছি না। ক্যারিয়ারে ফোকাস দিচ্ছি। এছাড়া আমার মাস্টার্স করা বাকি। দেশের বাইরে থেকে এটা শেষ করার প্ল্যান। এজন্য প্রেম-বিয়ে নিয়ে ভাবছি না। পর্দার ‘ঝুমুর’ চরিত্রের সঙ্গে নির্মাতা মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ

/এমএম/এমওএফ/
সম্পর্কিত
মেসি নাকি এমবাপ্পে: টিভি তারকারা কে কার পক্ষে
বিশ্বকাপ ২০২২ ফাইনালমেসি নাকি এমবাপ্পে: টিভি তারকারা কে কার পক্ষে
শ্রীমঙ্গল থেকে শামীম-সারিকা জুটির নতুন সূচনা
শ্রীমঙ্গল থেকে শামীম-সারিকা জুটির নতুন সূচনা
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
অনুরাগ কাশ্যপের সিনেমায় ঋদ্ধি!
অনুরাগ কাশ্যপের সিনেমায় ঋদ্ধি!
কান থেকে ভাবনা: নিজেকে ছোট অনুভব করাটাও দরকার
কান থেকে ভাবনা: নিজেকে ছোট অনুভব করাটাও দরকার
আমরা একে-অপরের খুব কাছের: জাহ্নবী
আমরা একে-অপরের খুব কাছের: জাহ্নবী
বাংলাদেশ ও রুনা লায়লাকে নিয়ে যা বললেন নাসিরুদ্দিন শাহ
কান উৎসব ২০২৪বাংলাদেশ ও রুনা লায়লাকে নিয়ে যা বললেন নাসিরুদ্দিন শাহ
জয়িতা আঁকলেন সুরে সুরে রবির ছবি
জয়িতা আঁকলেন সুরে সুরে রবির ছবি