‘স্যার শুধু অভিমানের কথা বলেছেন আমাদের। উনি বলেছিলেন উনাকে যদি মরণোত্তর পদকও দেওয়া হয় উনি ফিরিয়ে দেবেন। কারণ জীবদ্দশায় এ জাতি উনাকে সম্মান করেনি। তাহলে বাকিদের সঙ্গে তার তুলনা কেন?’
বুধবার (১৩ মার্চ) কিংবদন্তি সাদি মহম্মদের মৃত্যুর খবর পেয়ে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ছুটে এসে গণমাধ্যকে ক্ষোভের সঙ্গে ও কেঁদে কেঁদে কথাগুলো বলেন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী অণিমা রায়।
তিনি বলেন, সেদিন আমি সারাক্ষণ স্যারের সাথে ছিলাম। স্যারের গানের রেকর্ডিং হলো। তিনি আমাদের জন্য সেদিন কাচ্চি বিরিয়ানি অর্ডার করেছিলেন। আমাকে নিজে ফোন করেছিলেন যে অণিমা তুমি এসো কিন্তু। সারাক্ষণ শুধু অতীতের কথা, উনার বাবার মৃতুর গল্প করেন। আমার তখন মনে হলো স্যার তো এত কথা বলেন না নিজ থেকে।
তিনি আরও বলেন, আর যখন আমার শুটিং হচ্ছে ফাঁকে ফাঁকে, একটি কথা বারবার বলেছেন, অভিমান, অনেক অভিমান, বুকভরা অনেক অভিমান।
এ সময় অভিমান করে অণিমাও বলেন, একজন মানুষ সাদি মহম্মদ হয়ে উঠলেন, এখনও জাতীয় কোনও পুরস্কার পাননি। এটা কি মানা যায়? রবীন্দ্রসংগীতজগতে যে মানুষটার এত অবদান, এত এত শিল্পী যিনি তৈরি করেছেন, তার কোনও স্বীকৃতি নেই! স্বীকৃতি শুধু সাধারণ মানুষের ভালোবাসা। তাহলে বাকিদের সঙ্গে তার তুলনা কেন? কেন সাদি মহম্মদদের মতো মানুষকে খুঁজে নিয়ে আসতে হবে? যে মানুষকে সবাই চেনে? এই অভিমান স্যারের বুকভরা ছিল।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে অণিমা রায় বলেন, মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে এভাবে স্যারের মৃত্যু দেখতে হবে, ভাবতে পারিনি। নবাগত শিল্পীদের যে মানুষটা প্রথম দরজায় নিয়ে যান, তিনি সাদি মহম্মদ। আর তিনিই চলে গেলেন বুকভরা অভিমান নিয়ে। ভাবতে হবে আমাদের শিল্প-সংস্কৃতি কোথায়।
এর আগে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সাদি মহম্মদকে তার নিজ কক্ষ থেকে উদ্ধার করে রাত সাড়ে ৯টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন পরিবারের সদস্যরা। পরে হাসপাতলের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. স্বাগতিক লোহানী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।