X
শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
২৪ মাঘ ১৪৩১

সেন্সর-কাণ্ড: সরে দাঁড়ালেন নিপুণ, বোর্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন

মাহমুদ মানজুর
মাহমুদ মানজুর
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩:৩৩আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৮:২১

অন্তর্বর্তী সরকার এ পর্যন্ত অনেকগুলো উদ্যোগ, পদায়ন, পদত্যাগ, মুক্তি, জেল, গ্রেফতার ও নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার সবগুলোর ট্যাগলাইন মূলত ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয়। এরমধ্যে কিছু প্রশংসিত হয়েছে, কিছুতে এসেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। এই সরকার এতোটা তোপের মুখে আর পড়েনি, যেমনটা পড়েছে ১৫ সেপ্টেম্বর সেন্সর বোর্ড গঠন করে।

এদিন (১৫ সেপ্টেম্বর) তিনটি প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। যেখানে নির্মাতা আশফাক নিপুণ ও অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদকে পাওয়া গেছে দুটি বোর্ডের সদস্য হিসেবে; শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট ও চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডে। বেশিরভাগের প্রশ্ন, দেশে যোগ্য লোকের এতোই সংকট যে, নিপুণ-নওশাবাকে একই দিনে প্রকাশিত একাধিক কমিটিতে রাখতে বাধ্য হলো সরকার! নাকি সরকারের ভেতর দু’জন বেশ প্রভাব বিস্তার করছেন! পতিত সরকারের ফেরদৌস-রিয়াজ, তারিন-সুইটিদের নজির টেনে প্রশ্ন উঠেছে এমনটাও।

তবে সব ছাপিয়ে দিন শেষে রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার পর তুমুল প্রশ্ন ওঠে সদ্য গঠিত সেন্সর বোর্ড ও এর সদস্যদের নিয়ে। সোজা ভাষায় এই বোর্ডে স্থান পাওয়া বিগত বিপ্লবী তিন নির্মাতা আশফাক নিপুণ ও খিজির হায়াত খান এবং অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদ তুমুল বিতর্কের মুখে পড়েন। বৃষ্টির মতো বিরোধিতা আসতে থাকে সোশ্যাল হ্যান্ডেলে। অভিযোগ রয়েছে, মূলত দুই নির্মাতা বরাবরই তীব্র প্রতিবাদ করে আসছিলেন সেন্সর প্রথা বিলুপ্তির জন্য। অভিযোগ, সেই দুই প্রতিবাদী কণ্ঠ সেন্সর বোর্ডের সদস্যপদ পেয়ে অতীত ভুলে গেলেন! মেনে নিলেন এই বোর্ড? 

এছাড়া সিনেমা সেন্সরের জন্য এই তিন তরুণ মুখের যোগ্যতা/অভিজ্ঞতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। এরমধ্যে আশফাক নিপুণ এখনও আনুষ্ঠানিক কোনও সিনেমাও বানাননি। অন্য দুজনের সিনেমা জার্নিও সূচনা মাত্র। তীরের মতো এসব প্রশ্নে নিপুণ-নওশাবাদের বিঁধছিলেন মিডিয়ার মানুষরাই। শুটিংয়ে কাজী নওশাবা আহমেদ তবে তার আগেই ১৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় প্রজ্ঞাপন প্রকাশের পর বোর্ড সদস্য কাজী নওশাবা আহমেদ পুলকিত মনে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিষয়টি (সেন্সর বোর্ড) আমার জন্য একেবারেই নতুন। সিনেমাকে ভালোবাসি। এর সঙ্গে আমার প্রেম আছে। এই ক্রান্তিলগ্নে সকলে মিলে কাজ করবো। এখানে বার বার বলছি সকলে মিলে। একসঙ্গে কাজ করলে জয় আসে। যেটা সাম্প্রতিক আন্দোলোনেও আমরা দেখেছি। তো এই ক্রান্তিলগ্নে আমি আসলে বোঝার চেষ্টা করছি।’  

একই সময়ে অন্য সদস্য খিজির হায়াত খান ফেসবুক প্রতিক্রিয়ায় কাছাকাছি সুরে বলেন, ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড-এর সদস্য হিসাবে আমাকে যোগ্য মনে করায় বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ধন্যবাদ। দোয়া করবেন সবাই যাতে সততা আর নিষ্ঠার সাথে আমার এবং আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে আমাদের চলচ্চিত্রকে আলোর দিশা দেখাতে পারি। ধন্যবাদ।’ 

তবে তখনও (সন্ধ্যা) এই বোর্ডের সবচেয়ে আলোচিত সদস্য আশফাক নিপুণের কোনও প্রতিক্রিয়া মিলছিলো না। না সোশ্যাল হ্যান্ডেলে না ফোনে। যেন তিমির নীরবতায় ডুব দিয়েছেন সেন্সর-বিরোধী তুমুল-কণ্ঠ ‘ওসি হারুন’ স্রষ্টা আশফাক নিপুণ। এরমধ্যেই অতীতে সেন্সর বোর্ড বিলুপ্তির দাবিতে তার মন্তব্যগুলো ভাইরাল হতে থাকলো সোশ্যালে। রাত ৮টা, ৯টা, ১০টা বেজে যাচ্ছে; কিন্তু চুপচাপ আশফাক! বিপ্লব শেষে সাম্প্রতিক বানভাসিদের পাশে খিজির হায়াত খান সেই সুবাদে এই সেন্সর বোর্ড যে অবৈধ, সেই তথ্য প্রমাণ হাজির হতে থাকে চলচ্চিত্রজনদের পক্ষ থেকে। কারণ, এই সেন্সর প্রথা বাতিল করে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন ২০২৩’ সংসদে পাশ করা হয় গত বছরের নভেম্বরে। যার মাধ্যমে পুরনো বোর্ড প্রথার বিলুপ্তি ঘটেছে এবং নতুন ‘সার্টিফিকেশন বোর্ড’ গঠনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। যেটি মূলত হয়েছে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, অমিতাভ রেজা, আশফাক নিপুণদের মতো নির্মাতাদের তুমুল দাবির প্রেক্ষিতেই। 

এই আইনের আলোকে চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের অন্যতম নেতা বেলায়েত হোসেন মামুন বিস্ময় প্রকাশ করেন নতুন সেন্সর বোর্ড প্রসঙ্গে। তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন ২০২৩ অনুযায়ী গঠন করার কথা ‘সার্টিফিকেশন বোর্ড’। কিন্তু দেখা যাচ্ছে গঠিত হয়েছে ‘সেন্সর বোর্ড’! কীভাবে এটা হচ্ছে? তাহলে কি ‘চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন ২০২৩’ বাতিল করে পুনরায় ‘ফিল্ম সেন্সর আইন’ পুনর্বহাল করা হয়েছে?’’

এই চলচ্চিত্রজনের প্রশ্নের উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বলাও সম্ভব নয়। কারণ সংসদে উত্থাপন করে পাশ করা আইন বদলাতে হলে ফের সেটিকে তুলতে হবে সংসদেই। অথচ ৫ আগস্টের পর সংসদ বিলুপ্ত। তাহলে দেশের চলমান আইন কেমন করে খণ্ডালো অন্তর্বর্তী সরকার? নাকি তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তারা এ বিষয়ে অবগত নন। তাই তো বেলায়েত হোসেন মামুনসহ এমন অসংখ্য চলচ্চিত্রজনের তীব্র প্রশ্ন, ‘কীভাবে কি হচ্ছে! কারা করছে এসব!’

না। এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের স্পষ্ট কোনও মুখপাত্র কিংবা মন্তব্য পাওয়া যায়নি। বেলায়েত হোসেন মামুন তবে রাত গড়াতেই বোর্ড সদস্যদের প্রতিক্রিয়ার বদল পাওয়া যাচ্ছিলো ক্রমশ। এবারও সবার আগে নির্মাতা খিজির হায়াত খান প্রতিক্রিয়া দিলেন পুরনো সুর পাল্টে। রাত ১১টা নাগাদ ‘ওরা ৭ জন’ নির্মাতা খিজির বলেন, ‘সেন্সর বোর্ড নয়, সেন্সর সার্টিফিকেশন চাই। এটাই চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্য হিসাবে আমার এবং বাংলাদেশের প্রথম দাবি, চলেন আগে বাড়ি।’

সার্টিফিকেশনের দাবি করেছেন সেন্সর বোর্ডের পদে বসে! এটা রাত ১০টার পর।

কাছাকাছি সময়ে কাজী নওশাবা আহমেদও হুবহু, যেন একই চিত্রনাট্যে নানাবিধ নবাগতর অডিশন চলছে ক্যামেরার সামনে! নওশাবা বলেন, ‘সেন্সর সার্টিফিকেশন চেয়েছি, চাইবো!’

এটা রাত ১১টা নাগাদ।

যদিও দু’জনেই প্রজ্ঞাপন জারির পর সেন্সর বোর্ড নিয়ে মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন, করেছেন নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার প্রতিজ্ঞা। রাত সাড়ে ১১টার পরও এই আলোচনা সমালোচনার মূল নায়ক ‘মহানগর’ নির্মাতার কোনও মন্তব্য মিলছিলো না। কারণ সমালোচকদের সিংহভাগই মূলত আশফাক নিপুণের আত্মপক্ষ সমর্থন শোনার অপেক্ষায় রবিবার সন্ধ্যা থেকে।

অবশেষে মধ্যরাতের খানিক পরে, ১৬ সেপ্টেম্বর প্রথম প্রহরে বাংলা ট্রিবিউন-এর সঙ্গে কথা হয় আশফাক নিপুণের। তিনি বলেন, ‘আমার নাম যে তালিকায় ঢুকাবে, সেটাই জানতাম না। প্রজ্ঞাপন প্রকাশের পর সেটা জানতে পারলাম। এরপর আমি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। আমার অবস্থান ক্লিয়ার করেছি। এবং এটা মূলত মিস কমিউনিকেশন-এর কারণে হয়েছে। কারণ, এই তালিকায় আমার নাম থাকার কথাই না। আমি সায় দিইনি। কারণ, আমি নিজেই তো এই সেন্সর প্রথার বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছি লম্বা সময় ধরে। সেজন্যই প্রজ্ঞাপন জারির পর আমি বিষয়টি বুঝতে খানিকটা সময় নিয়েছি। এবং বিনয়ের সঙ্গে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, এই সম্মানটুকু আমি গ্রহণ করতে অপারগ। সুতরাং সেন্সর বোর্ডে আমি নেই।’ শুটিংয়ে আশফাক নিপুণ এর বাইরে সবার উদ্দেশ্যে কাছাকাছি সময়ে আশফাক নিপুণ নিজের সবটুকু পরিষ্কার করেন সোশ্যাল হ্যান্ডেলে। ছোট পর্দার সবচেয়ে বড় এই বিপ্লবী নির্মাতার ভাষায়, ‘সেন্সরবোর্ড আগামী কয়েক মাসের ভেতর সেন্সর সার্টিফিকেশন বোর্ডে রূপান্তরিত হবে বলে আমাকে জানিয়েছেন তথ্য মন্ত্রণালয়। আমি আজীবন চলচ্চিত্রে বা শিল্পে সেন্সরবোর্ড প্রথার বিরুদ্ধে। আমি খুবই সম্মানিত বোধ করেছি মন্ত্রণালয় আমাকে বোর্ডের সদস্য হওয়ার যোগ্য মনে করেছিলেন। কিন্তু একটা মিস-কমিউনিকেশন হয়ে গেছে। আমি এই বোর্ডের অফিশিয়াল সদস্যপদ গ্রহণ করিনি। বিনয়ের সাথে ফিরিয়ে দিয়েছি। তথ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে এই ব্যাপারে আমার কথা হয়ে গেছে।’

নিপুণ আরও যোগ করেন, সেন্সর বোর্ড বাতিলের পক্ষে তার অবস্থান সর্বদা চলমান থাকবে।

এ ক্ষেত্রে নতুন প্রশ্ন উঠতে পারে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতি। তবে কি কারও সম্মতি বা অনুমতি ছাড়াই নিজেদের মর্জি মোতাবেক নাম উঠছে সরকারি নানাবিধ বোর্ডে? যদিও এই প্রতিবেদনের মূল লক্ষ্য অবৈধ সেন্সর বোর্ড গঠন।

মাত্র গঠিত বিতর্কিত সেন্সর বোর্ডের আরেক দরকারি সদস্য নির্মাতা, গবেষক ও অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন রাজু। যিনি নিজেও সেন্সর বোর্ড প্রথার বিরোধিতা করে প্রচুর লিখেছেন ও বলেছেন। তাকেও রাখা হয়েছে এই বোর্ডে!

নতুন প্রশ্ন, তবে কি যারাই সেন্সরের বিরোধিতা করেছিলেন বিগত সরকারে, তারাই এবার ডাক পেলেন! যারা এখনও বোর্ডে যুক্ত আছেন, এটা নিয়ে তাদের ভাববার অবকাশ রয়েছে বটে। মতামত পর্যবেক্ষকদের। 

নির্মাতা তাসমিয়া আফরিন মৌ বোর্ডের আরেক নতুন ও তরুণ সদস্য স্বল্পদৈর্ঘ্য নির্মাতা তাসমিয়া আফরিন মৌ। যিনি জুলাই বিপ্লবে বেশ একটিভ ছিলেন বটে! বিপরীতে এবার হলেন সেন্সর বোর্ড সদস্য। যদিও বোর্ডের যে কোনও সদস্যের চেয়ে সবচেয়ে কম আলোচিত মৌ এবং সর্বাধিক অস্বস্তির কারণও তিনি! কারণ বেশিরভাগ পর্যালোচকই এই সদস্যকে ‘ট্রেস’ করতে পারছেন না। সবার প্রশ্ন- উনি আসলে কে? এই বোর্ডে কেন!

তবে সেই তরুণ নির্মাতা কিংবা বোর্ড সদস্যও আসনে বসে প্রায় একই সংলাপ শোনালেন, যেমনটা লেখা ছিলো খিজির ও নওশাবার চিত্রনাট্যে!

মৌ বলেন, ‘বাকস্বাধীনতা ও শৈল্পিক মত প্রকাশের বিরুদ্ধে বিদ্যমান নিপীড়নমূলক সকল আইন বাতিল করতে হবে। এবং সেন্সর বোর্ডকে ফিল্ম রেটিং পদ্ধতিতে নিয়ে আসতে হবে, এটি ফিল্ম কমিউনিটির দীর্ঘদিনের দাবি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূল স্পিরিটের সাথে এই বিষয়গুলো সম্পর্কিত।’

আরও শোনান, ‘ফিল্ম কমিউনিটির সাধারণ একজন সদস্য হিসেবে আমি আমার কমিউনিটির দাবিগুলো অর্জনের জন্য সরকারের সাথে নেগোশিয়েট করতে আগ্রহী। সেন্সর কমিটির প্রধান কাজ হবে সেন্সর বোর্ডকে সার্টিফিকেশনে কনভার্ট করা। এবং সার্টিফিকেশন আইন অনুযায়ী সেন্সরশিপ কমিটি রিফর্ম করা হবে।’

যদিও বিশেষজ্ঞ ও সমালোচকরা নাম প্রকাশে অনাগ্রহ প্রকাশে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, সরকারি পদে থেকে সরকার সংস্কারের স্বপ্ন দেখানোর মানে হচ্ছে- আমরা গাছেরটাও খাবো, তলারটাও কুড়াবো! যে লোভ থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে স্পষ্টভাবে বেরিয়ে এসেছেন আশফাক নিপুণ। সরকারের বিরুদ্ধে কাজটি কঠিন হলেও রাতারাতি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন নিজেকে।

এদিকে সেন্সর প্রথার ঘোর বিরোধী নির্মাতা মাসুদ হাসান উজ্জ্বল এই পরিস্থিতিতে দারুণ যুক্তি তুলে ধরেছেন। টেনেছেন সাম্প্রতিক উদাহারণও। নির্মাতার ভাষায়, ‘‘আমার সমস্ত প্রতিবাদী সহকর্মীরা চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্য হয়েছেন। আমার আনন্দিত হয়ে সবাইকে শুভেচ্ছা জানানো উচিত। কিন্তু কথা হলো- সবাই মিলে না একসাথে এতগুলো বছর ধরে বলে চলেছি, সেন্সর প্রথা বাতিল হোক, সার্টিফিকেশন প্রথা চালু হোক! এখন ঘটনা যদি এমন হয় ‘নে বাবা সেন্সর বোর্ডের সদস্য বানায় দিছি, আর কথা বলিস না’। তাহলে তো সমস্যা। প্রতিষ্ঠানের পদ নিলে যে প্রতিবাদ করা যায় না, প্রতিষ্ঠানের পদের প্রতি একটু হলেও নতজানু হতে হয়, তার জাজ্বল্যমান উদাহরণ হলেন শিল্পকলা একাডেমির নব নিযুক্ত ডিজি সৈয়দ জামিল আহমেদ। তিনি যদি শিল্পকলার ডিজি না হতেন তাহলে এক বোরকা বিতর্কে এত রকমের জবাবদিহিতা আর ব্যাখ্যার ধার ধারতেন?’’ মাসুদ হাসান উজ্জ্বল উজ্জ্বলের বক্তব্য স্পষ্ট, বিপ্লব করে যারা সরকারের এই সেন্সর টোপ গিলেছেন- তারা মূলত আত্মঘাতী হয়েছেন। একজন শিল্পীর কিংবা বিপ্লবীর জন্য এটা চূড়ান্ত পরাজয়। 

বলা দরকার, ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর বাসস (বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা) সূত্রে জানা যায়, এদিন জাতীয় সংসদে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বিল, ২০২৩’ পাস করা হয়েছে। প্রাক্তন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এদিন জাতীয় সংসদে বিলটি পাসের প্রস্তাব করেন এবং তৎকালীন ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে কণ্ঠভোটে এটি পাস হয়। এর আগে বিলের ওপর আনিত জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি করা হয়।

জানা হয়, ১৯৬৩ সালের ‘সেন্সরশিপ অব ফিল্মস অ্যাক্ট’ রহিত করে নতুন আইনটি করা হয়েছে। এ বিলে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নির্মিত চলচ্চিত্র, আমদানি করা বিদেশি চলচ্চিত্র, বাংলাদেশি কোনও ব্যক্তি কর্তৃক দেশে বা বিদেশে নির্মিত এবং যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত চলচ্চিত্র জনসাধারণের মধ্যে প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে পরীক্ষণ ও সার্টিফিকেশন দেওয়ার জন্য সরকার বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড নামে একটি বোর্ড গঠন করবে। তথ্যসচিব হবেন ১৪ সদস্যের এই বোর্ডের চেয়ারম্যান।

বিলটির উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে তখনকার তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘দেশীয় চলচ্চিত্র শিল্পের সুরক্ষা, বিকাশ, সংরক্ষণ, পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, রাষ্ট্রের স্বাধীনতা, অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্ব, চলচ্চিত্র শিল্পের সৃজনশীলতা তথা চলচ্চিত্র শিল্পের সার্বিক উন্নয়ন, চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন প্রদান এবং সার্টিফিকেশনপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র সুষ্ঠুভাবে প্রদর্শনের লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন, ২০২৩’ শীর্ষক বিলটি আইনে পরিণত করা আবশ্যক বিধায়, বিবেচনা ও অনুমোদনের জন্য এই মহান জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে।’

এদিন বিল পাসের প্রক্রিয়ায় আলোচনায় অংশ নেন তৎকালীন বিরোধী দলীয় সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী, ফখরুল ইমাম, পীর ফজলুর রহমান, বেগম রওশন আরা মান্নান, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী ও হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।

বলা দরকার, এই আইনের মাধ্যমে গত বছরের নভেম্বরে সেন্সর বোর্ড প্রথা বাতিল হলেও সেটি ভেঙে সার্টিফিকেশন বোর্ড গঠন করেনি বিগত সরকার। যদিও সেই সরকার সময় পেয়েছিল মাত্র ৭ মাস। অবশেষে পুরনো সেন্সর বোর্ড ভেঙে দিলেও একই নামেই নতুন মুখ বসিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ড. জাকির হোসেন রাজু মোটা দাগে সেন্সর বোর্ড ও সার্টিফিকেশন বোর্ড-এর মধ্যে পার্থ কী? চলচ্চিত্রজনের সঙ্গে আলাপ করে এটুকু স্পষ্ট হয়েছে, সার্টিফিকেশন চালু হলে কোনও ছবি আর আটকানোর সুযোগ থাকবে না। বড়জোর প্রতিটি ছবির দর্শক বিবেচনা করে সেটি গ্রেডিং সিস্টেম করা হবে। অর্থাৎ কোন ছবি কাদের জন্য, সেটি আগে থেকে সার্টিফিকেশন বোর্ড যাচাই করে জানিয়ে দেবে। ফলে সিনেমা আটকে রাখার যে প্রক্রিয়া, সেটি উঠে যাবে নতুন আইন অনুসরণ করলে।

দেখার বিষয়, অন্তর্বর্তী সরকার আগের মতো সিনেমা আটকাতে চায়, নাকি স্বাধীন করতে চায়। আপাতত আটকানোর দিকেই ঝুঁকে আছে সরকার। অভিমত বেশিরভাগ সমালোচকের।

আরও:

আবারও নিপুণ-নওশাবা: এবার সেন্সর বোর্ডে

শিল্পীদের কল্যাণে কাজ করবেন ‘নিগৃহীত’ তিন শিল্পী

দেশ ডেকেছে, মানা করতে পারিনি: নওশাবা

যাদের নিয়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০২৩ জুরি বোর্ড

/এএমএম/এমএম/
সম্পর্কিত
শুরু হলো সার্টিফিকেশন বোর্ডের সিনেমা দর্শন, কিন্তু...
শুরু হলো সার্টিফিকেশন বোর্ডের সিনেমা দর্শন, কিন্তু...
আবারও নিপুণ-নওশাবা: এবার সেন্সর বোর্ডে
আবারও নিপুণ-নওশাবা: এবার সেন্সর বোর্ডে
দেশ ডেকেছে, মানা করতে পারিনি: নওশাবা
দেশ ডেকেছে, মানা করতে পারিনি: নওশাবা
শিল্পীদের কল্যাণে কাজ করবেন ‘নিগৃহীত’ তিন শিল্পী
শিল্পীদের কল্যাণে কাজ করবেন ‘নিগৃহীত’ তিন শিল্পী
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
গোল্ডেন স্টেট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘নীলচক্র’
গোল্ডেন স্টেট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘নীলচক্র’
১৪ নাটক নিয়ে মহিলা সমিতিতে উৎসব শুরু
১৪ নাটক নিয়ে মহিলা সমিতিতে উৎসব শুরু
৭ বছর পর মুক্ত হলো ‘দায়মুক্তি’
৭ বছর পর মুক্ত হলো ‘দায়মুক্তি’
বন্ধ হচ্ছে না মধুমিতা সিনেমা হল
বন্ধ হচ্ছে না মধুমিতা সিনেমা হল
ওটিটিতে ‘ফাতিমা’
ওটিটিতে ‘ফাতিমা’