বাংলাদেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার আগেই ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ চলচ্চিত্র টিম শুটিং করতে করতে পাড়ি জমিয়েছিল সুন্দরবনে। তবে এটি শেষ না করেই করোনাভাইরাস ইস্যুতে ঢাকায় ফিরতে হচ্ছে তাদের। ফিরতি পথে মাঝপথে আটকে গেল পুরো ইউনিট। বাধা এসেছে স্থানীয় প্রশাসন থেকে। কবে নাগাদ ফেরার অনুমতি মিলবে, সেটিও অনিশ্চিত!
১৪ মার্চ ঢাকার সদরঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া ভাড়া করা এই শুটিং লঞ্চে আছেন সিয়াম আহমেদ, পরীমনি, পরিচালক আবু রায়হান জুয়েলসহ পুরো ১২০ জনের টিম। টার্গেট ছিল টানা ২৫ দিনের শুটিং-ট্যুর শেষ করে ঢাকায় ফিরবে লঞ্চটি। কিন্তু তার আগেই ফিরতে হলো তাদের, মাঝ নদীতে পড়তে হলো বাধার মুখে।
চলচ্চিত্রের বিভিন্ন সংগঠন শুটিং বন্ধের ঘোষণা দিলেও এই শুটিং ইউনিট ছিল আলাদা। কারণ, তাদের দাবি, পুরো লঞ্চটাই শুরু থেকে ছিল নদীতে কোয়ারেন্টিনের মতোই।
তবে এবার বিপত্তি বেঁধেছে। ২৬ তারিখে শুটিং বন্ধ করে সুন্দরবন থেকে ঢাকার পথে লঞ্চ ছেড়েছে। এরপর বাদ সাধে প্রশাসন।
প্রশাসন থেকে ঢাকায় ফেরার অনুমতি মিলছে না লঞ্চটির।
নির্মাতা আবু রায়হান জুয়েল রবিবার (২৯ মার্চ) বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা করে গত ২৬ তারিখ থেকে শুটিং বন্ধ রেখেছি। সেই থেকে এখন পর্যন্ত লঞ্চের মধ্যেই অবস্থান করছি। এখন আমরা খুলনা পার হয়েছি। আমি ইতোমধ্যে প্রশাসনকে কয়েকবার চিঠি দিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনও ঘাটে যাওয়ার অনুমতি পাচ্ছি না।’
আবু রায়হান জুয়েল আরও বলেন, ‘আমরা যেহেতু ১৪ দিনের ওপর লঞ্চে অবস্থান করছি আর আমাদের মধ্যে কেউ নতুন করে যুক্ত হয়নি এবং কেউ কোথাও যায়নি। তাছাড়া হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নিয়ম ১৪ দিন। আমরা ১৪ দিনের বেশি লঞ্চ কোয়ারেন্টিনে আছি। আমাদের ইচ্ছে ছিল সড়ক পথে ঢাকায় ফেরার। তবে দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে সেটি আর হয়নি। প্রশাসনের অনুমতি পেলে আমরা লঞ্চে করেই ঢাকায় ফিরবো।’
সবাই যেখানে শুটিং বন্ধ করেছেন, আপনারা কেন তা করলেন না—এমন প্রশ্নে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সুন্দরবনের যে স্থানে শুটিং করেছি, সেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না বললেই চলে। তাই শুটিংয়ের নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে জানতে আমাদের সময় লেগেছে। জানার পরই আমরা ঢাকায় ফেরার প্রস্তুতি নিয়েছি। কিন্তু এখন তো মাঝ নদীতেই আটকা পড়লাম।’
২০১৮-১৯ অর্থবছরে সরকারি অনুদানে লেখক মুহাম্মদ জাফর ইকবালের ‘রাতুলের রাত রাতুলের দিন’ অবলম্বনে নির্মিত হচ্ছে ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ ছবিটি।
আবু রায়হান জুয়েল জানান, এরমধ্যে ছবিটির ৬০ ভাগ শুটিং শেষ করেছেন। যদিও তার পরিকল্পনা ছিল শতভাগ শেষ করেই ঢাকায় ফেরার। তিনি এটাও জানান, মাঝ নদীতে প্রশাসনের বাধায় আটকা পড়লেও থেমে নেই তাদের শুটিং।
জুয়েল বলেন, ‘সিয়াম-পরী লঞ্চেই আছে। তবে তাদের আর লঞ্চের কোনও অংশ বাকি নেই। তবে আমরা অলস সময় না কাটিয়ে বাচ্চাদের নিয়ে কিছু কিছু শুটিং করছি। সবাই নিরাপদেই আছি। আমার ধারণা, ৪ এপ্রিল পর্যন্ত এভাবেই থাকতে হবে। আবেদন করেছি আমরা। তবে যানবাহন চলাচলে তো ৪ তারিখ পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা। তার আগে যদি প্রশাসনের সিগন্যাল পাই, তো রওনা হবো, না হলে নদীর বুকে ভাসবো। কী আর করা? ৪ এপ্রিলের আগে ঢাকায় ফেরার বিষয়টি এখন অনেকটাই অনিশ্চিত।’
ছবির অন্যতম দুই চরিত্রে অভিনয় করছেন সিয়াম আহমেদ ও পরীমনি। তাদের সঙ্গে আছে একদল শিশুশিল্পী।
এই ছবিটির চিত্রনাট্য লিখেছেন জাকারিয়া সৌখিন। ছবিটির সহ-প্রযোজনায় আছে বঙ্গ।
* লঞ্চেই থাকা-খাওয়া-শুটিং, এভাবেই ২৫ দিন!