ভারতের গোয়াতে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে আয়োজক দেশ ভারত সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে পাকিস্তানকে তীব্র আক্রমণ করে। তবে দিন শেষে সম্মেলনের গৃহীত যৌথ ঘোষণাপত্রে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। পাঁচ সদস্য দেশ একমত হয়ে যে গোয়া ঘোষণা জারি করেছে তাতে সার্বিকভাবে সন্ত্রাসবাদের নিন্দা থাকলেও পাকিস্তানকে সরাসরি বিব্রত করতে পারে, এমন কোনও মন্তব্য ঠাঁই পায়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের উপস্থিতিতে সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদের জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করা ভারতের জন্য একটা অসম্ভব ব্যাপার।
মনে করা হচ্ছে, সন্ত্রাসবাদের প্রশ্নে ভারতের যে ব্যাখ্যা, তাতে তারা চীন বা রাশিয়ার মতো ব্রিকসের অন্য সদস্য দেশগুলোকে পুরোপুরি সহমত পোষণ করাতে পারেনি।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব অমর সিনহা বলেন, ব্রিকসভুক্ত দেশগুলো এ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি।
তিনি বলেন, পাকিস্তানভিত্তিক সংগঠনগুলোর নজর হচ্ছে ভারতের দিকে। এটা তাদের উদ্বেগের কারণ নয়। প্রকৃতপক্ষে এটা আমাদের প্রভাবিত করেছে।
এদিকে গোয়াতে বিমসটেক আউটরিচে ভাষণ দিতে গিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জঙ্গিবাদকে নির্মূল করতে হলে তাদের যারা মদত দেয়, অর্থ বা প্রশিক্ষণ দেয় তাদের আগে নির্মূল করা দরকার।
ব্রিকসের সঙ্গেই যে বিমসটেক আউটরিচ অনুষ্ঠিত হচ্ছে, সেখানে অংশ নিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, জঙ্গিবাদ যে আকারেই আসুক না-কেন, তাকে পরাস্ত করতেই হবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পাকিস্তানের নাম উল্লেখ না করেই দেশটিকে সন্ত্রাসবাদের আঁতুড় ঘর হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
সন্ত্রাসবাদের মদতদাতা হিসেবে পাকিস্তানকে কূটনৈতিকভাবে কোণঠাসা করাটা কতখানি প্রয়োজন, চীন ও রাশিয়াসহ ব্রিকসের অন্য সদস্যদের তা বোঝানোর জন্যও ভারত সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়েছে।
নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় বেছে বেছে এগোনোর কোনও সুযোগ নেই।
ভারত-শাসিত কাশ্মীরের উরিতে জঙ্গি হামলার পর থেকেই সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার প্রশ্নে ভারতের সঙ্গে চীন ও রাশিয়ার মতবিরোধের বিষয়টি সামনে চলে এসেছিল।
উরি’র হামলার জন্য ভারত সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করলেও বেইজিং তাদের পুরনো মিত্র ইসলামাবাদের পাশেই দাঁড়িয়েছে। এমনকি জয়েশ-ই-মোহাম্মদের নেতা মাসুদ আজহারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রেও জাতিসংঘে বাদ সেধেছে চীন।
উরিতে হামলার পর ভারতের দাবি অনুযায়ী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত যৌথ সামরিক মহড়া বাতিল করেনি রাশিয়া। ফলে উরি হামলার এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে যখন গোয়াতে ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোর শীর্ষ নেতারা মিলিত হন; তখনই ধারণা করা হয়েছিল নিজেদের মতো করে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার প্রশ্নে বিশেষত চীন ও রাশিয়াকে পাশে পেতে ভারত সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবে। কিন্তু শেষ দিনের সর্বসম্মত গোয়া ঘোষণায় তার প্রতিফলন না দেখা যাওয়ার পেছনে তাই আপাতত চীনের দিকেই আঙ্গুল তুলছেন বিশ্লেষকরা। সূত্র: দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া, বিবিসি বাংলা।
/এমপি/
