X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

কাশ্মির সীমান্তে উত্তেজনা বাড়ছে, ৭ ভারতীয় সেনা হত্যার দাবি

বিদেশ ডেস্ক
২৩ নভেম্বর ২০১৬, ২১:৩৮আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০১৬, ২১:৫০
image

 

কাশ্মির সীমান্তে উত্তেজনা বাড়ছে, ৭ ভারতীয় সেনা হত্যার দাবি মঙ্গলবার তিন ভারতীয় সেনার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বুধবার আবারও অশান্ত হয়ে উঠেছে ভারত-পাকিস্তানের কাশ্মির সীমান্ত। সীমান্তের নিয়ন্ত্রণরেখায় (লাইন অব কন্ট্রোল) পরস্পরকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে দুই দেশের সেনাবাহিনী। প্রচণ্ড গোলাগুলিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে কাশ্মির সীমান্ত। ঘটনাস্থলে নিজেদের ৩ সেনা সদস্যের পাশাপাশি ৭ ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে পাকিস্তান। তবে ভারত তাদের পক্ষের সেনা নিহতের দাবি অস্বীকার করেছে। পাকিস্তানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডন দাবি করেছে, দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলায় এখন পর্যন্ত ১০ বেসামরিকসহ ২০ জন নিহত হয়েছে। পাকিস্তানের দাবি অনুযায়ী, নিহত ১০ বেসামরিকের মধ্যে ৯ জন নিহত হয়েছেন একটি যাত্রীবাহী বাসে ভারতীয় সেনাদের চালানো গুলিতে। তাদের দাবি অনুযায়ী অপরজনও ভারতীয় সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন, তবে অন্য এলাকায়। 

পাকিস্তান পুলিশের বরাত দিয়ে সে দেশের সংবাদমাধ্যম ডন দাবি করে, বুধবার পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের লাওয়াত এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাস লক্ষ্য করে ভারতীয় সেনারা গুলি চালায়। ওই ঘটনায় ৯ জন নিহত এবং ১১ জন আহত হয়। উদ্ধার কাজে আসা অ্যাম্বুলেন্সকে লক্ষ্য করেও ভারতীয় সেনারা গুলি করে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তাছাড়া নায়কাল এলাকায়ও ভারতীয় সেনাদের গুলিতে এক ব্যক্তি নিহত হন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। 

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, মঙ্গলবারের ঘটনায় জবাব হিসেবে লাইন অব কন্ট্রোলে বড় ধরনের গোলাগুলি শুরু করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।

বুধবার আইএসপিআর-এর বিবৃতির বরাত দিয়ে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডনের আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এদিন এলওসির কাছে ভারতীয় সেনাদের সঙ্গে গোলাগুলিতে তিন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছেন। আইএসপিআর-এর বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ভারতীয় সেনাদের অনর্থক গোলাগুলির জবাব দিতে গিয়ে তিন সেনা শাহাদাত বরণ করেছেন।’ নিহত সেনাদের পরিচয়ও প্রকাশ করা হয়েছে। তারা হলেন, ক্যাপ্টেন তৈমুর আলি খান, হাভিলদার মুস্তাক হোসেন এবং লান্স নায়েক গুলাম হোসেন। ওই বিবৃতিতে এ-ও দাবি করা হয়, পাকিস্তানের পাল্টা গুলিতে সাত ভারতীয় জওয়ান নিহত হয়েছেন। তবে পাকিস্তানের দাবির ব্যপারে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

মঙ্গলবার তিন ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পর এ ঘটনায় পাকিস্তানি কমান্ডোকে দায়ী করে ভারতীয় সেনাবাহিনী হুমকি দিয়েছিল, ওই ঘটনার কঠোর জবাব দেবেন তারা। বুধবার ভারতীয় সেনাবাহিনীর উত্তরাঞ্চলীয় কমান্ড-এর পক্ষ থেকে ব্রিগেডিয়ার পি. এস. গোরতা দাবি করেন, ‘দুই দেশ পাল্টাপাল্টি গুলি চালিয়েছে’। তবে বুধবারের ঘটনায় কোনও ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার খবর অস্বীকার করেছেন তিনি। গোরতা বলেন, ‘আমাদের দিক থেকে এটা ছিল পাল্টা গুলিয়ে চালিয়ে জবার দেওয়ার ঘটনা। গতকাল পাকিস্তান যা করেছে, তার প্রতিফল হিসেবে গুলি চালানো হয়েছে।’

মঙ্গলবার মাছিল সেক্টরে অতর্কিত হামলায় ভারতের তিন সেনা জওয়ান নিহত হন। শুধু তাই নয়, ওই তিনজনের একজনের শিরশ্ছেদ করারও অভিযোগ ওঠে পাকিস্তানের বর্ডার অ্যাকশন টিম (ব্যাট)-এর বিরুদ্ধে।

এরপরই, ভারতের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, পাকিস্তানি সেনার এই হামলার সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল রাজেশ কালিয়া জানান, হামলাকারীরা এক সেনার দেহ ছিন্নভিন্ন করেছে। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ভীরুচিত্তের এই হামলার চরম প্রতিশোধ নেওয়া হবে। তবে এই হামলা পাকিস্তানি সেনারা চালিয়েছে নাকি কাশ্মিরের স্বাধীনতাকামী বিদ্রোহীরা চালিয়েছে তা স্পষ্ট করেননি ভারতীয় সেনা মুখপাত্র।

তবে ভারতীয় জওয়ানের শিরশ্ছেদের বিষয়টি নাকচ করে দেয় পাকিস্তান। পাকিস্তানি পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র নাফিস জাকারিয়া দাবি করেন, পাকিস্তানের ভাবমূর্তিকে কলুষিত করতেই ভারত এই অভিযোগ করেছে। একইসঙ্গে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলোকেও ‘মিথ্যা’ ও ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেছে ইসলামাবাদ।

উল্লেখ্য, পাঠানকোটের সেনাঘাঁটিতে জঙ্গি হামলা এবং পরবর্তীতে হিজবুল নেতা বুরহান ওয়ানিকে কথিত এনকাউন্টারে হত্যার পর থেকেই ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা বাড়তে থাকে। সাম্প্রতিক উরি সেনাঘাঁটিতে জঙ্গি হামলার পর আবারও জয়েশ ই মোহাম্মদের সংশ্লিষ্টতার প্রসঙ্গ তুলে পাকিস্তানকে দায়ী করতে শুরু করে ভারত। পারস্পরিক দোষারোপ এবং এ নিয়ে আন্তর্জাতিক তৎপরতার এক পর্যায়ে ২৮ সেপ্টেম্বর (বুধবার) রাতে নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে ভারতের সেনারা সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলোতে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালানোর দাবি করে। ঘটনার পর থেকে পাকিস্তান দাবি করে আসছে এটি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ছিল না, সীমান্ত সংঘর্ষ বা আন্তঃসীমান্ত গোলাগুলির ঘটনা ছিল। ঘটনাকে ভারতের দিক থেকে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ প্রমাণ করে তাদের সামরিক শক্তি জানান দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয় সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের দাবিটি একটি ভ্রম। মিথ্যে প্রভাব তৈরির জন্য ভারতীয়রা ইচ্ছে করে এমনটা করছে। এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে ভারতের দাবিকৃত ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ যতোটা না জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সাফল্য-ব্যর্থতার প্রশ্ন, তার থেকেও বেশি করে ভারত ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্ষমতা-আত্মমর্যাদা আর দম্ভের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়। আর তখন থেকে কাশ্মির সীমান্তে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয় এবং প্রায়ই আন্তঃসীমান্ত গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে।

/এফইউ/বিএ/

সম্পর্কিত
পাচার হওয়া বোনকে নিতে এসে কলকাতায় অসহায় দশায় চট্টগ্রামের তরুণ
আম আদমি পার্টির সাথে জোট, দিল্লি কংগ্রেস প্রধানের পদত্যাগ
ভারতের মণিপুরে আবারও জাতিগত সহিংসতা
সর্বশেষ খবর
আবাহনীর ১০ ক্রিকেটার চট্টগ্রামে, একাদশ গঠন নিয়ে বিপাকে সুজন
আবাহনীর ১০ ক্রিকেটার চট্টগ্রামে, একাদশ গঠন নিয়ে বিপাকে সুজন
আওয়ামী লীগ নেতাকে হারিয়ে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা রউফ জয়ী
আওয়ামী লীগ নেতাকে হারিয়ে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা রউফ জয়ী
বাংলাদেশের আম নিতে চায় চীন
বাংলাদেশের আম নিতে চায় চীন
গাজীপুর-নীলফামারীর দুই হাসপাতালে দুদকের অভিযান
গাজীপুর-নীলফামারীর দুই হাসপাতালে দুদকের অভিযান
সর্বাধিক পঠিত
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ