X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

করাচিতে বিভাজনের আগুন উসকে দিচ্ছে পাকিস্তান সরকার: আইসিজি

অদিতি খান্না, যুক্তরাজ্য
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ০০:০৭আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ০০:১৪

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ জাতিগত, রাজনৈতিক ও গোষ্ঠীগত উত্তেজনার আগুনকে উসকে দিচ্ছে পাকিস্তান। আর এতে করে উগ্রপন্থিদের একটি কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে দেশটির বন্দরনগরী করাচি। ব্রাসেলসভিত্তিক ইউরোপীয় থিংক ট্যাংক দ্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের (আইসিজি) নতুন এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
‘পাকিস্তান: স্টোকিং দ্য ফায়ার ইন করাচি’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী লস্কর-ই-তৈয়বা, জামায়াত-উদ-দোহা ও জয়িশ-ই-মোহাম্মদের মতো জিহাদি গোষ্ঠীগুলোকে মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন ধরনের দাতব্য শাখা পরিচালনা করার অনুমোদন দিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘পাকিস্তানের সবচেয়ে ভয়ংকর দলগুলো করাচিতে নিজেদের অবস্থানকে পোক্ত করছে। শিয়াবিরোধী লস্কর-ই-জাংভি এবং ভারতবিরোধী লস্কর-ই-তৈয়বা, জামায়াত-উদ-দোহা ও জয়িশ-ই-মোহাম্মদের সঙ্গে করাচির সবচেয়ে সমৃদ্ধ মাদ্রাসাগুলোর ওতপ্রোত সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।’
১৯৭১ সালে তৎকালীন পাকিস্তান থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মকেই এই পরিস্থিতির উৎস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, ‘১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিভাজন ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর জুলফিকার আলী ভুট্টোর নবগঠিত পিপিপি সরকার প্রধানত সিন্ধি অধ্যুষিত করাচির জন্য বিশেষ সুবিধা ঘোষণা করেন। সরকারি চাকরিতে ওই সময় এখানকার জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব কম ছিল। তাদের জন্য সরকারি চাকরি ছাড়াও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও বিশেষ কোটা ঘোষণা করে পিপিপি সরকার।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সিন্ধি জনগোষ্ঠীর জন্য এসব সুযোগ-সুবিধা করাচিতে বসবাসরত মোহাজেরদের (ভারত থেকে আসা অভিবাসী) মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দেয়। এতে এই এলাকার জাতিগত-রাজনৈতিক বিভাজনও বৃদ্ধি পায়। এর ফলেই গত শতকের আশি ও নব্বইয়ের দশকে মোহাজের ও সিন্ধি জনগোষ্ঠীর মধ্যে সহিংস সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এটা প্রাদেশিক রাজনীতির পাশাপাশি জাতীয় রাজনীতিকেও অস্থিতিশীল করে তোলে।’
বৈশ্বিক সংঘর্ষ প্রতিরোধের লক্ষ্য নিয়ে কর্মরত স্বতন্ত্র সংস্থা আইসিজি তাদের প্রতিবেদনে বলছে, দশকের পর দশক ধরে অবহেলা ও অব্যবস্থাপনা পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় ও সমৃদ্ধ শহর করাচিকে ‘প্রেশার কুকারে’ পরিণত করেছে। পাশাপাশি সিন্ধি পুলিশের কর্তৃত্ব ও কর্মপরিচালনার স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসার আহ্বানও জানিয়েছে পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের প্রতি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘রাজনৈতিক দল ও রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিভিন্ন মাত্রায় গোপন আঁতাতের মাধ্যমে অপরাধী গোষ্ঠীগুলো বেড়ে উঠেছে। এসব গোষ্ঠীর মধ্যে মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্টের (এমকিউএম) সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে এমন চাঁদাবাজ গোষ্ঠীর পাশাপাশি পিপিপির পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত বালুচ গোষ্ঠীও রয়েছে। এছাড়া, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শিথিলতা ও রাষ্ট্রীয় সমর্থনের অভাবের সমন্বয়ে লাভবান হয়েছে জিহাদি গোষ্ঠীগুলো।’
পাকিস্তানের এই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতার চালিকাশক্তি হিসেবে অন্যান্য কারণের মধ্যে করাচির কারখানাগুলোতে যন্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে শ্রমিকদের চাহিদা হ্রাস পাওয়া ও সড়ক নির্মাণের মতো কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করা হয়েছে আইসিজির প্রতিবেদনে।
আইসিজি বলছে, ‘বছরের পর বছর ধরে বিদ্যুৎ সংকটের কারণে অনেক কারখানা পণ্য রফতানির সময়সীমা মেনে চলতে ব্যর্থ হয়ে বন্ধ হয়ে গেছে। এসব ব্যবসা এখন চলে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোতে। কারখানা মালিকদের অনেকেই কারখানাগুলোকে শ্রীলঙ্কার মতো সস্তা শ্রমের দেশে স্থানান্তর করছেন। বাকিরা স্থায়ী শ্রমিকের বদলে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মাধ্যমে শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করিয়ে নিচ্ছেন।’
আইসিজির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা, কিন্তু সামরিক আদেশে পরিচালিত আধা-সামরিক বাহিনী পাকিস্তান রেঞ্জার্সের রাজনৈতিক বিবেচনাপ্রসূত অভিযান করাচির সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল এমকিউএমের সমর্থকদের ‘লক্ষ্যবস্তুতে’ পরিণত করলেও তাদের ‘দমাতে পারেনি’।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিবেদনটির উপসংহারে বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের ফেডারেল সরকারের অনুধাবন করা উচিত যে ওই এলাকার নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বদলে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রাখলে তা পাকিস্তানের অর্থনৈতিক এই প্রাণকেন্দ্রে স্থিতিশীলতা আনতে ব্যর্থ হবে এবং সেটা পুনরায় পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক পথে ফেরার প্রক্রিয়ায় জনগণের কর্তৃত্বকে আবারও দুর্বল করে দেবে।’

আরও পড়ুন-

হামলার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের মাজারে মাজারে প্রতিরোধের ডাক

আসাদ প্রশ্নে আবারও সংশয়, জেনেভা শান্তি আলোচনা নিয়ে ধোঁয়াশা

/টিআর/এএআর/

সম্পর্কিত
তাইওয়ান প্রণালিতে আবারও চীনা সামরিক বিমান শনাক্ত
চীনের দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক ধসে নিহত ৩৬
লাইয়ের অভিষেক পরবর্তী চীনা সামরিক মহড়া নিয়ে সতর্ক অবস্থানে তাইওয়ান
সর্বশেষ খবর
পিকআপের পেছনে ট্রাকের ধাক্কা, উল্টে গিয়ে ২ শ্রমিক নিহত
পিকআপের পেছনে ট্রাকের ধাক্কা, উল্টে গিয়ে ২ শ্রমিক নিহত
নবযুগ প্রকাশনীর কর্ণধার অশোক রায় নন্দী মারা গেছেন
নবযুগ প্রকাশনীর কর্ণধার অশোক রায় নন্দী মারা গেছেন
মালয়েশিয়ায় আটকে পড়া বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ
মালয়েশিয়ায় আটকে পড়া বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ
চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে মুক্তিযোদ্ধাকে গাছে বেঁধে বিচারের হুমকি
চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে মুক্তিযোদ্ধাকে গাছে বেঁধে বিচারের হুমকি
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
গাজীপুরে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ, বগি লাইনচ্যুত
গাজীপুরে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ, বগি লাইনচ্যুত