X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১
অভিবাসন পরিকল্পনার ব্লুপ্রিন্ট প্রকাশ

ট্রাম্পের বহিষ্কারাদেশের আওতায় ১ কোটি অভিবাসী!

বিদেশ ডেস্ক
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৯:০৮আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ০৩:১৯
image

ট্রাম্পের বহিষ্কারাদেশের আওতায় ১ কোটি অভিবাসী! নতুন অভিবাসন নীতিমালার ব্লুপ্রিন্ট প্রকাশ করেছে সদ্য মার্কিন শাসনক্ষমতায় আসা ট্রাম্প প্রশাসন। ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (ডিএইচএস) থেকে ইস্যু করা  দুইটি মেমোতে অভিবাসনকর্মীদের এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী আরও কঠোর হতে যাচ্ছে ট্রাম্পের অভিবাসননীতি। ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি অনুযায়ী অনথিভূক্ত অভিবাসীদের বের করে দেওয়ার পথ সুগম হবে। পাশাপাশি দ্রুততর হবে অবৈধদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো থেকে পাওয়া ওই দুই মেমোর বিস্তারিত বিবরণ পাঠ করে দেখা গেছে, কার্যত যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ১ কোটি ১০ লাখ অবৈধ/অনথিভূক্ত অভিবাসীর সবাই এর আওতায় পড়তে পারেন। সে কারণে অভিবাসন সংক্রান্ত কর্মকর্তাদের সংখ্যা বাড়ানোর কথাও ভাবছে ট্রাম্প প্রশাসন৷ সবমিলে অভিবাসন সংক্রান্ত ট্রাম্পের নতুন নীতি সেখানকার অনথিভূক্ত অভিবাসীদেরকে অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে। কেননা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ ছাড়াই কাউকে বহিস্কারের সুযোগ রাখা হয়েছে।

রয়টার্স এবং এএফপি তাদের বিশ্লেষণাত্মক প্রতিবেদনে দাবি করেছে, ট্রাম্প প্রশাসনের সর্বাধুনিক নির্দেশাবলীর ফলে বহিষ্কারের পরিধি বাড়বে৷ যুক্তরাষ্ট্রে যে এক কোটি দশ লক্ষ বেআইনি অভিবাসী আছেন, প্রয়োজনে তাদের সকলকেই বহিষ্কার করার অধিকার থাকবে অভিবাসন কর্মকর্তাদের৷ হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র শন স্পাইসার মঙ্গলবার বলেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসন কর্মকর্তাদের ‘বাধামুক্ত'' করতে চান৷ একই দিনে প্রকাশিত নতুন অভিবাসন নির্দেশাবলীকে ট্রাম্পের সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিকল্পনার অঙ্গ, বলে মনে করা হচ্ছে৷

অভিবাসন কর্মকর্তাদের জন্য ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (ডিএইচএস) থেকে ইস্যু করা মেমোতে বিভাগীয় সেক্রেটারি জন কেলি বলেছেন, ‘দক্ষিণ সীমান্তে বেআইনি অভিবাসন অতিমাত্রায় বেড়েছে। সংশ্লিষ্ট ফেডারেল দফতর আর তাদের সাজসরঞ্জাম অপর্যাপ্ত হয়ে পড়েছে’। কেলি দাবি করেছেন,  ‘যুক্তরাষ্ট্রের  পক্ষে একটি তাৎপর্যপূর্ণ জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে৷’

নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম একান্ত সাক্ষাৎকারে কঠোর অভিবাসন পরিকল্পনার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ১২ নভেম্বর (রবিবার) সিবিএস টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে  তিনি বলেছিলেন , ‘যেসব অবৈধ অভিবাসীর ক্রিমিনাল রেকর্ড রয়েছে, যারা অপরাধী চক্রের সদস্য, মাদক কারবারি; এদের সংখ্যা সম্ভবত ২০ লাখ, ৩০ লাখও হতে পারে, আমরা তাদের দেশ থেকে বের করে দেব অথবা কারারুদ্ধ করব।’ তবে মাইগ্রেশন পলিসি ইন্সটিটিউটের হিসাব অনুযায়ী, আমেরিকায় থাকা ১ কোটি ১০ লাখেরও বেশি অবৈধ/অনথিভূক্ত অভিবাসীর মধ্যে অপরাধের রেকর্ড রয়েছে মাত্র ৮ লাখ ২০ হাজার মানুষের। এদের মধ্যে 'গুরুতর অপরাধী' ৩ লাখ। তখন বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল, ট্রাম্প ঘোষিত ২০ থেকে ৩০ লাখ অভিবাসীকে তাড়িয়ে দিতে বাকী ১৭ থেকে ২৭ লাখ গুরুতর অপরাধী কোথায় পাওয়া যাবে? এই প্রশ্নের আংশিক উত্তর পাওয়া যায় ওবামা প্রশাসনের অভিবাসন নীতির দিকে দৃষ্টি ফেরালে। 

একই বিশ্লেষণে ওবামা প্রশাসনের অভিবাসন নীতির প্রসঙ্গ টেনে দেখানো হয়, যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই অনথিভূক্ত অভিবাসীদের একটা বড় অংশকে তাড়িয়ে দিয়েছে। বারাক ওবামা তার দুই শাসনামলের প্রথম ছয় বছরে ২৫ লাখ অভিবাসীকে তাড়িয়েছেন। তবে নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর এক অনুসন্ধান বলছে, তাড়িয়ে দেওয়া ২৫ লাখ অভিবাসীর দুই তৃতীয়াংশের বিরুদ্ধেই তেমন কোনও গুরুতর অপরাধের রেকর্ড ছিল না।

ওবামা প্রশাসন অপরাধী আখ্যা দিয়ে অভিবাসী তাড়ালেও ট্রাম্প তেমন করে ভাবছেন না। তিনি একরকম সরাসরিই অবৈধদের বের করে দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে, নতুন মেমোগুলিতে যে সর্বাঙ্গীণ নীতির আভাস দেওয়া হয়েছে, তা প্রায় সব অ-নথিভুক্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য: ‘‘অত্যন্ত সীমিত কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া, ডিএইচএস কোনো শ্রেণী বা পর্যায়ের বহিষ্কারযোগ্য বিদেশিদের এই নির্দেশ কার্যকরি করা থেকে অব্যাহতি দেবে না৷'' ডিএইচএস কর্মকর্তারা বলছেন যে, যে সব অ-নথিভুক্ত ব্যক্তিদের ঝুঁকি বলে গণ্য করা হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে সর্বাগ্রে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ তবে যে প্রায় সাড়ে সাত লাখ ‘ড্রিমার' শিশুবয়সে বেআইনিভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এসেছে, তারা পূর্বাপর সুরক্ষিত থাকবে৷

নতুন নির্দেশে যে দু'টি দপ্তরে আরো ১৫,০০০ নতুন কর্মকর্তা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। একটি হল শুল্ক ও সীমান্ত সুরক্ষা (সিবিপি) এবং অপরটি অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগ (আইসিই)৷ মেমো দু'টির ফলে আইসিই-র এজেন্টরা ‘দ্রুততর বহিষ্কার''-এর সংখ্যা বাড়াতে পারবেন৷ এই ‘দ্রুততর বহিষ্কার' হল শুনানি ছাড়াই বহিষ্কার। এটি বিশেষত সেই সব অভিবাসীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে, যারা দু'বছরের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকার প্রমাণ দিতে পারবেন না৷ তবে এই পদক্ষেপটি আপাতত ফেডারাল রেজিস্টারে প্রকাশ ও পর্যালোচনার অপেক্ষায় থাকবে৷ বর্তমানে যে সব ব্যক্তিদের সীমান্তে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ও যারা প্রমাণ করতে পারছেন না যে, তারা ১৪ দিনের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন - একমাত্র তাদেরই বিনা শুনানিতে বহিষ্কার করা সম্ভব৷

নতুন নির্দেশ অনুযায়ী যে সব অভিবাসী তাদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন সম্পর্কে আদালতের রায়ের অপেক্ষা করছে, আইসিই-র এজেন্টরা তাদেরও গ্রেফতার করতে পারবেন৷  
সূত্র: সিএনএন, গার্ডিয়ান, হাফিংটন পোস্ট আলজাজিরা

/বিএ/

সম্পর্কিত
চুক্তি হোক বা না হোক রাফাহতে ইসরায়েলি অভিযান চলবে: নেতানিয়াহু
ক্যানারি দ্বীপে নৌকাডুবি, ৫০ জনের মৃত্যুর আশঙ্কা
হামাসকে ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মেনে নেওয়ার আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
সর্বশেষ খবর
থাইল্যান্ড সফর একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীথাইল্যান্ড সফর একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে
‘গরমে অসুস্থ’ হয়ে মারা যাওয়া সেই শ্রমিকের পরিবারের পাশে জেলা প্রশাসন
‘গরমে অসুস্থ’ হয়ে মারা যাওয়া সেই শ্রমিকের পরিবারের পাশে জেলা প্রশাসন
ওমরাহ করতে স্ত্রীসহ সৌদি আরব যাচ্ছেন মির্জা ফখরুল
ওমরাহ করতে স্ত্রীসহ সৌদি আরব যাচ্ছেন মির্জা ফখরুল
ঢাকার অধস্তন আদালতগুলোতে এসি লাগাতে আইনি নোটিশ
ঢাকার অধস্তন আদালতগুলোতে এসি লাগাতে আইনি নোটিশ
সর্বাধিক পঠিত
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
মিল্টন সমাদ্দার আটক
মিল্টন সমাদ্দার আটক
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তদন্ত করবে ডিবি
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তদন্ত করবে ডিবি