X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্পের আদেশে ক্ষুব্ধ চীন, বাড়ছে প্যারিস চুক্তি ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা

ফাহমিদা উর্ণি
৩০ মার্চ ২০১৭, ১৬:৩০আপডেট : ৩১ মার্চ ২০১৭, ১৫:৫৫
image

Untitled-1 জ্বালানি স্বাধীনতার নামে (‘এনার্জি ইন্ডিপেন্ডেন্স এক্সিকিউটিভ অর্ডার’) নামে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া নতুন নির্বাহী আদেশে প্যারিসে স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক জলবায়ু-সমঝোতা চুক্তি ভঙ্গের ইঙ্গিত দেখছে চীন। বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধে বিগত ওবামা প্রশাসনের নেওয়া বিভিন্ন পরিবেশবান্ধব কর্মসূচি বাতিল করে নতুন করে দেওয়া এই নির্বাহী আদেশে প্যারিস চুক্তির উল্লেখ নেই। এই প্রেক্ষাপটে বেইজিং আশঙ্কা করছে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম রাখার ঐতিহাসিক অঙ্গীকার থেকে সরে আসতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। তারা জানিয়েছে, তেমন ঘটলে যুক্তরাষ্ট্রের ওই অঙ্গীকারের দায় চীন নেবে না। চীনের এই প্রতিক্রিয়ার পর আরও সংশয়ের মধ্যে পড়লো জলবায়ু সমঝোতা বাস্তবায়নের প্যারিস অঙ্গীকার।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) বিগত ওবামা প্রশাসনের নেওয়া বেশ কিছু পরিকল্পনা বাতিল করে একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন ট্রাম্প। কার্বন নিঃসরণের কারণে বেড়ে যাওয়া বৈশ্বিক উষ্ণতাকে সীমিত রাখতে পূর্ববর্তী ওবামা প্রশাসনের ‘ক্লিন পাওয়ার প্ল্যান’ পরিকল্পনা বাতিল করে ‘এনার্জি ইন্ডিপেন্ডেন্স এক্সিকিউটিভ অর্ডার’ নামে নতুন নির্বাহী আদেশ জারি করেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের আদেশে যুক্তরাষ্ট্র স্বাক্ষরিত প্যারিস চুক্তির উল্লেখ নেই। এতে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম রাখার ঐতিহাসিক সেই প্যারিস-সমঝোতা সংশয়ের মুখে পড়ে।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার কাজে নেতৃত্ব দেওয়াটা চীনের জন্য স্বস্তিদায়ক নয়। এ লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র অংশগ্রহণ না করলে যে শূন্যস্থান তৈরি হবে তা বেইজিং পূরণ করবে না বলেও সতর্ক করা হয়। ট্রাম্পের উদ্যোগের সমালোচনা করে এতে বলা হয়,  ‘ওয়াশিংটন যতগুলো দায়িত্ব প্রত্যাখ্যান করবে, তার সবগুলো বেইজিং এর পক্ষে অনেক চেষ্টা করেও মেটানো সম্ভব হবে না’।

ওই সম্পাদকীয়তে বলা হয়, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনই সে সমঝোতা প্রথম ভঙ্গ করতে পারে, যা হতাশাজনক। জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে ট্রাম্প প্রশাসনকে পশ্চিমা জনমতের পক্ষ থেকে চাপ দিয়ে যেতে হবে। ওয়াশিংটনের রাজনৈতিক স্বার্থপরতাকে অবশ্যই নিরুৎসাহিত করতে হবে। দীর্ঘ সময় ধরে চীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় উঠতি দেশ হিসেবে থাকবে। উন্ত পশ্চিমা পাওয়ার হাউসের জন্য এ দেশটি নিজের উন্নয়নের জায়গা ছেড়ে দেবে তা কী করে প্রত্যাশা করা যায়?’

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ার জন্য দায়ী গ্রিন হাউস গ্যাস সবচেয়ে বেশি নিঃসরণ করে থাকে চীন। এরপরই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে বৃহত্তর নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের রপ্তানিকারক দেশও চীন। জলবায়ুর পরিবর্তন যে বাস্তবিক হুমকি সে ব্যাপারে চীনা নেতারা সম্মত হয়েছেন। নিঃসরণ কমানোর ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে প্রতিশ্রুতিও দিয়ে আসছেন তারা।  অন্যদিকে নির্বাহী আদেশের মধ্য দিয়ে আবারও প্যারিস চুক্তি কার্যকর না করার ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে আসবে কিনা তা এখনও চূড়ান্ত করেনি ট্রাম্প প্রশাসন। তবে নতুন নির্বাহী আদেশটি জারি হলে প্যারিস জলবায়ু চুক্তির শর্ত যুক্তরাষ্ট্র আদৌ কতটা পূরণ করতে পারবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

এবার একই ধরনের সন্দেহ পোষণ করতে দেখা গেল বেইজিংকে। ট্রাম্পের নতুন জ্বালানি নীতির পর চীনের এই প্রতিক্রিয়ায় জলবায়ু চুক্তি ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা আরও প্রকট হয়েছে।  ‘২১ শতকের জ্বালানি’ উৎপাদনে জড়িত একজন মার্কিন চেম্বার অব কমার্স-এর একজন সদস্যকে উদ্ধৃত করে গার্ডিয়ানের সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এখনও  সরাসরি প্যারিস চুক্তি অস্বীকার করেননি ট্রাম্প। তবে নির্বাহী আদেশের সিদ্ধান্তের পর ওই চুক্তির প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি ভঙ্গ করতে বাধ্য হবে। আর যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি ভঙ্গ করলে অন্য দেশগুলোও তা মানার বাধ্যবাধকতা অনুভব করবে না।

একইভাবে প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশের বিপন্নতার প্রেক্ষিতে গত বছরের ডিসেম্বরে প্যারিসে কপ ২১ নামের একটি সম্মেলনে প্রথমবারের মতো একটি জলবায়ু চুক্তির ব্যাপারে সম্মত হন বিশ্বনেতারা। চুক্তির আওতায় বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে বিশ্বজুড়ে কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। গত বছর নভেম্বরে ওবামা প্রশাসন ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। শুরু থেকেই ওই প্যারিস চুক্তির বিরোধিতাকারী ট্রাম্প জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক উৎপাদন ফিরিয়ে এনেছেন।  নিশ্চিত বৈজ্ঞানিক প্রমাণসাপেক্ষেই তার সিদ্ধান্তে কার্বন নিঃসরণ বেড়ে যাবে। স্বভাবতই বৈশ্বিক উষ্ণতাও বাড়বে।

/বিএ/

 

 

সম্পর্কিত
চীন সফরের পরিকল্পনা করেছেন পুতিন
‘সরকারকে যারা চাপ দেবে তারা নিজেরাই যথেষ্ট চাপে রয়েছে’
তাইওয়ান প্রণালিতে আবারও চীনা সামরিক বিমান শনাক্ত
সর্বশেষ খবর
ছেলের মৃত্যুর ৪ দিনের মাথায় চলে গেলেন বাবা, গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া
ছেলের মৃত্যুর ৪ দিনের মাথায় চলে গেলেন বাবা, গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া
গাজা ও ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে কাজ করতে চায় বাংলাদেশ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
গাজা ও ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে কাজ করতে চায় বাংলাদেশ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
অনেক নার্ভাস ছিলেন সাইফউদ্দিন
অনেক নার্ভাস ছিলেন সাইফউদ্দিন
বকশিবাজার মোড়ে বাসের ধাক্কায় পথচারী নিহত
বকশিবাজার মোড়ে বাসের ধাক্কায় পথচারী নিহত
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা