X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রিটেনে আইএস-এর অর্থ সংগ্রহের মূল পরিকল্পনাকারী সিরিয়ায় নিহত বাংলাদেশি জঙ্গি সুজন!

বিদেশ ডেস্ক
২১ আগস্ট ২০১৭, ১৫:০৫আপডেট : ২১ আগস্ট ২০১৭, ১৫:৪৩
image

আইএস-এর বিভিন্ন জঙ্গিবাদী হামলার অর্থায়নের উৎস ব্রিটেনের ওয়েলস। সেখানে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জঙ্গি সাইফুল হক সুজনের মালিকানাধীন কোম্পানির অধীনে বিভিন্ন ভুয়া ফার্মের নাম ব্যবহার করে ওই অর্থ সংগ্রহ করা হয়। এফবিআই-এর গোপন নথির বরাত দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এই দাবি করা হয়েছে। তারা বলছে, সিরিয়ায় নিহত জঙ্গি সুজনই ব্রিটেন থেকে আইএস-এর জন্য জঙ্গি কার্যক্রমের অর্থ সংগ্রহ প্রক্রিয়ার মূল পরিকল্পনাকারী।ফেডারেল আদালতে এফবিআইয়ের দেওয়া ওই এফিডেভিটের বরাত দিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালও ক'দিন আগে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন স্থানের জঙ্গি অর্থায়নে সুজনের সংশ্লিষ্টতার কথা জানিয়েছিল।
বাংলাদেশি জঙ্গি সাইফুল হক সুজন

একই নথির বরাত দিয়ে ক’দিন আগে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছিল, আইব্যাকস নামের নিজস্ব প্রযুক্তি কোম্পানির মাধ্যমে জনপ্রিয় অনলাইন শপিং সাইট ই-বেতে কম্পিউটারের প্রিন্টার বিক্রির নাটক সাজাতো সিরিয়ায় নিহত বাংলাদেশি জঙ্গি সুজন। আর পেপাল অ্যাকাউন্টে ওই প্রিন্টারের দাম বিনিময় হতো। আসলে প্রিন্টার বিক্রির আড়ালে ব্রিটেন থেকে জঙ্গি অর্থায়নের টাকা সংগ্রহ করত সে, যে টাকা এসেছে বাংলাদেশেও। সম্প্রতি স্পেনের বার্সেলোচনায় 'আইএস-এর হামলা'র প্রেক্ষাপটে আবারও ওই নথি আলোচনায় আসে।  টাইমস অব ইন্ডিয়ার রবিবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাদ্রিদে যে ব্রিটিশ কোম্পানিগুলো নজরদারি ব্যবস্থা সরবরাহ করেছিলো তার মধ্যে একটি পিটার সোরেন নামে ভুয়া ব্যক্তির ও প্রতিষ্ঠানের নামে ছিলো। ধারণা করা হচ্ছে ওই ব্যক্তি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জঙ্গি সাইফুল সুজনের সহযোগী ছিলেন। এই আইটি বিশেষজ্ঞ তিনবছর আগে সাউথ ওয়েলস ত্যাগ করে আইএসে যোগ দিতে সিরিয়া চলে যান। এরপর রাকায় এক ড্রোন হামলায় নিহত হন তিনি।  

সন্দেহভাজন এক আইএস সদস্যের বিষয়ে তদন্ত করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা অর্থপাচার ও জঙ্গি অর্থায়নের ওই নেটওয়ার্ক খুঁজে পান। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল তাদের ১১ আগস্ট (শুক্রবার) তারিখের প্রতিবেদনে এফবিআইয়ের দেওয়া এফিডেভিটের বরাত দিয়ে জানিয়েছিল, এই পদ্ধতিতেই অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোকে ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশের জঙ্গি অর্থায়ন হয়ে থাকে। একই পদ্ধতি ব্যবহার করে আইএস নেটওয়ার্ক যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশেও টাকা পাঠিয়েছে। আর এর পেছনে ছিলেন আইএসের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা ‘বাংলাদেশি কম্পিউটার প্রকৌশলী’ সাইফুল হক সুজন। আইএসের ওই নেটওয়ার্কে যুক্ত বেশ কয়েকজন পরে যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশে গ্রেফতার বা নিহত হয় বলে এফবিআইয়ের এফিডেভিটে উল্লেখ করা হয়েছে।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার সেই প্রতিবেদন

এফবিআইয়ের নথি অনুযায়ী, ওই সময়ে আইএসের কম্পিউটার অপারেশনস বিষয়ক পরিচালক হিসেবে নিয়োজিত ছিল সুজন। সেই সুজনের প্রতিষ্ঠিত ব্রিটিশ প্রযুক্তি কোম্পানি আইব্যাকসের মাধ্যমে ওই আর্থিক নেটওয়ার্কটি পরিচালিত হতো। ওই নথি অনুযায়ী, বাংলাদেশে সুজনের কোম্পানির একটি শাখা রয়েছে। তুরস্কেও ওই কোম্পানির একটি শাখা স্থাপন করছিল সুজন। তবে সুজন কবে আইএসে যোগ দিতে সিরিয়া গিয়েছিল, তা স্পষ্ট করে জানা যায়নি। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল লিখেছে, ওয়েবসাইট তৈরি করে দেওয়া পাশাপাশি ‘প্রিন্টার কনফিগার করে দেওয়ার কাজ’ও করত সুজনের কোম্পানি আইসব্যাক। কিন্তু ওই কোম্পানির নামে ১৮ হাজার ডলারে কানাডার একটি প্রতিষ্ঠান থেকে মিলিটারি গ্রেড সার্ভেইল্যান্স ইকুইপমেন্ট কেনা হয়েছিল বলে তথ্য পেয়েছেন এফবিআইয়ের তদন্তকারীরা। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানিতে তারা আড়িপাতা সরঞ্জাম খুঁজে বের করার যন্ত্রপাতি কেনার অর্ডার দিয়েছিল, যা পাঠানোর কথা ছিল তুরস্কে। অ্যাপ ও ওয়েবসাইট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আইব্যাকস টেকনোলজিসের মূল কার্যক্রম চলত যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ থেকে। বাংলাদেশ ছাড়াও ডেনমার্ক, অস্ট্রেলিয়া, জর্ডান, তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রে এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা ছিল। ওই ব্যবসার আড়ালে সুজন অর্থপাচারে যুক্ত ছিল বলে দাবি করছেন তদন্তকারীরা।
এবার একই নথির বরাত দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, আলেক্সান্দ্রা গেটে আইব্যাকস নেটওয়ার্ক নামের কোম্পানিটি গড়ে তুলেছিলেন সুজন। এফবিআইয়ের সূত্রে তাদের দাবি, সুজনই আইএস-এর যুক্তরাজ্যভিত্তিক অর্থায়নের মূল পরিকল্পনাকারী। প্রতিষ্ঠানটির আরেকজন পরিচালকের সঙ্গে পাওয়া তাদের স্কাইপি আলাপের বিষয়বস্তুতে একথা নিশ্চিত হয় এফবিআই। স্থানীয় রেস্টুরেন্টগুলোকে ওয়েবসাইট ও প্রিন্টিং সার্ভিস দিতো আইসব্যাক। তবে এফবিআই ও ব্রিটিশ সন্ত্রাস বিরোধী পুলিশ ইউনিটের দাবি, সাইফুল সিরিয়া যাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি তাদের জঙ্গি কার্যক্রম বৃদ্ধি করে। কার্ডিফের  ফার্ম আইব্যাকস ইলেক্ট্রনিকস থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ম্যারিল্যান্ডে বাস করা আইএস সমর্থক মোহাম্মদ এলশানওয়েকে ৭ হাজার ৭০০ ডলার পাঠায়। আর গত সপ্তাহেই সেই এলশিনওয়েকে সন্ত্রাসী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত। ২০১৫ সালের জুলাইয়ে অ্যাডভান্স টেকনোলোজি গ্লোবাল নামে একই ঠিকানায় আরেকটি কোম্পানি খোলা হয়। ২০১৬ সলের মার্চে আইবাসল বিলীন হয়ে যায়। আর আটমাস আগে কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় এটিজি। টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, এভাবেই সুজনের কোম্পানির অধীনে বিভিন্ন ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে জঙ্গিবাদের অর্থ সংগ্রহ হয়।

/এমএইচ/বিএ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
বাজারে এলো বাংলা ভাষার স্মার্টওয়াচ ‘এক্সপার্ট’
বাজারে এলো বাংলা ভাষার স্মার্টওয়াচ ‘এক্সপার্ট’
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ