X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

নিজ গ্রামেই পুনর্বাসিত হতে চায় নো-ম্যানস ল্যান্ডের রোহিঙ্গারা

বিদেশ ডেস্ক
১৯ মার্চ ২০১৮, ১১:৩২আপডেট : ১৯ মার্চ ২০১৮, ১৪:০১
image

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের মধ্যবর্তী এলাকা নো-ম্যানস ল্যান্ডে আটকা পড়া রোহিঙ্গারা জানিয়ে দিয়েছেন, নিজ গ্রামে পুনর্বাসিত করার শর্তেই কেবল তারা প্রত্যাবাসনে রাজি। পুনর্বাসনের আগে সাময়িকভাবে ট্রানজিট ক্যাম্পে থাকার জন্য মিয়ানমার সরকারের দেওয়া প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন তারা। নো-ম্যানস ল্যান্ডের রোহিঙ্গাদের আশঙ্কা, ট্রানজিট ক্যাম্পে উঠলে তাদের দীর্ঘমেয়াদে সেখানে বন্দি করে রাখা হবে। রবিবার (১৯ মার্চ) নো-ম্যানস ল্যান্ডের রোহিঙ্গা শিবিরের এক নেতাকে উদ্ধৃত করে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এসব খবর জানানো হয়েছে।

রোহিঙ্গা
গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭ লাখ মানুষ। তারা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। আবার অনেক রোহিঙ্গা নো-ম্যানস ল্যান্ডে তাঁবু টানিয়ে থাকছেন। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পন্ন হলেও তা কার্যকরের বিষয়টি এখনও প্রক্রিয়াধীন। কেবল গত বছর আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ৭ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এলেও এখন পর্যন্ত কেবল ৩৮৮ জনকে ফেরত নেওয়ার প্রক্রিয়া চালু রাখার কথা জানিয়েছে মিয়ানমার। এ অবস্থাতেই গ্রামগুলোতে বুলডোজার চালিয়ে আলামত নষ্ট, বিপুল সামরিকায়ন, উন্নয়ন প্রকল্প চলমান থাকা, প্রত্যাবাসন নিয়ে বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর হুমকির ধারাবাহিকতায় রাখাইনে বৌদ্ধদের মডেল গ্রাম গড়ে উঠছে বলে খবর পাওয়া যায়। প্রত্যাবাসন প্রস্তুতির অংশ হিসেবে অস্থায়ী ক্যাম্পগুলো তৈরি করার কথা জানিয়েছে মিয়ানমার। এগুলোকে ‘আদর্শ গ্রাম’ বলেও ডাকেন তারা। এসব আদর্শ গ্রামকে স্থায়ী ক্যাম্প হিসেবে আখ্যায়িত করে জাতিসংঘ এ ধরনের পদক্ষেপের সমালোচনা করে আসছে। বহু আগেই অস্থায়ী ট্রানজিট ক্যাম্পকে ‘কনসেনট্রেশন ক্যাম্প’ বলে আখ্যা দিয়েছে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)। 

এ পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের ট্রানজিট ক্যাম্পে ফিরতে রাজি নন নো-ম্যানস ল্যান্ডের রোহিঙ্গারা। নিজ গ্রামে ফেরত ফেরত পাঠানো হলে তবেই প্রত্যাবাসনে রাজি হবেন বলে জানিয়েছেন তারা। রবিবার ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি’র সাংবাদিককে বলেন, চাপের কাছে নতিস্বীকার করে তারা মিয়ানমারে ফেরত যাবেন না, আবার বাংলাদেশেও ঢুকবেন না।

কাঁটাতারের বেড়ার ফাঁক দিয়ে সাংবাদিকদের দেওয়া সাক্ষাৎকারে দিল মোহাম্মদ নামের ৫১ বছর বয়সী ওই রোহিঙ্গা বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রবেশের কোনও ইচ্ছে আমাদের নেই। আমরা বাঙালি নই। আমরা মিয়ানমারের মূল নাগরিক।’

দিল মোহাম্মদ জানান, নো-ম্যানস ল্যান্ডে থাকা প্রায় ৬০০০ বাসিন্দা কেবল তখনই মিয়ানমারে ফিরে যাবে, যদি তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়, সেনাবাহিনীর ক্লিয়ারেন্স অপারেশনের সময় জ্বালিয়ে দেওয়া ঘরবাড়ির জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় এবং পুরনো গ্রামে পুনর্বাসিত হওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।

দিল বলেন, ‘আমরা ট্রানজিট ক্যাম্পে যেতে চাই না। আমাদের সরাসরি বাড়িতে যাওয়া প্রয়োজন।’

ইন্টারন্যাশনাল রেডক্রস বর্তমানে নো-ম্যানস ল্যান্ডের রোহিঙ্গাদের সহায়তা জুগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশি অংশে এসে তারা এ সহায়তা গ্রহণ করে।

প্রতাবাসিত রোহিঙ্গাদের জন্য মিয়ানমারে ট্রানজিট ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে
জানুয়ারিতে সম্পাদিত ঢাকা-নেপিদো প্রত্যাবাসন চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরিয়ে নেওয়া শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বাংলাদেশের পাঠানো প্রথম ৮ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা নিয়েই শুরু হয়েছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। এর ফরম্যাট বদল করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে মিয়ানমার। পালিয়ে আসা প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে ফিরিয়ে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে ৩৭৪ জনকে। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় অপরিহার্য শর্ত হিসেবে চাওয়া হয়েছে বৈধ কাগজপত্র। অথচ বেশিরভাগ রোহিঙ্গা পুড়ে যাওয়া সম্বল ফেলে পালিয়ে এসেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল প্রত্যাবাসন চুক্তিকে মিয়ানমারের ধোঁকাবাজি আখ্যা দিয়েছে।

প্রত্যাবাসিত রোহিঙ্গাদের জন্য নির্মাণাধীন ট্রানজিট ক্যাম্প ও পুনর্বাসনের গ্রামগুলো আসলে কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এসব ক্যাম্প দীর্ঘমেয়াদে বন্দিশালা হিসেবে ব্যবহার হবে বলে আতঙ্কবোধ করছে রোহিঙ্গারা। অতীতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর এ ধরনের ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া ১,২০,০০০ রোহিঙ্গা এখনও সেখানে বন্দিদের মতো জীবনযাপন করছে। তবে রোহিঙ্গাদের আটকে রাখার পরিকল্পনা করার কথা নাকচ করেছেন মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। ১৮ মার্চ রাখাইনের উত্তরাঞ্চল পরিদর্শনে গিয়ে মংডুর প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইয়ে হটুট সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, সাময়িকভাবে ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখার পর রোহিঙ্গাদের তাদের নিজেদের মূল গ্রামের কাছাকাছি পুনর্বাসিত করা হবে। হটুট বলেন, ‘আমি তাদের ক্যাম্পে চিরতরে থাকতে বলতে পারি না। তাদের সেখানে দীর্ঘদিন রাখার কোনও ইচ্ছে বা পরিকল্পনাও আমাদের নেই। সরকার তাদের নিজ গ্রাম কিংবা গ্রামের নিকটবর্তী জায়গায় ফেরত পাঠাবে।’ 

/এফইউ/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
অস্ত্র ও গুলিসহ ৫ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী আটক
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
সর্বশেষ খবর
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
বাজারে এলো বাংলা ভাষার স্মার্টওয়াচ ‘এক্সপার্ট’
বাজারে এলো বাংলা ভাষার স্মার্টওয়াচ ‘এক্সপার্ট’
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ