X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১
টানা ৫ম সপ্তাহে ভূমি দিবসের বিক্ষোভ

অস্তিত্ব রক্ষায় ইসরায়েলি মারণাস্ত্রের দিকে ছুটছে গাজার বিপন্ন তরুণরা

আরশাদ আলী
২৮ এপ্রিল ২০১৮, ১২:৪৩আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০১৮, ১৬:৫৬
image

একমাত্র জীবনের দাবিই পারে মৃত্যুকে উপেক্ষা করতে। কেবল তখনই মানুষ মৃত্যুভয়কে তুচ্ছজ্ঞান করতে পারে, যখন অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্ন সামনে আসে। গাজা উপত্যকতার তরুণরাও লড়ছেন অস্তিত্বের প্রশ্নে। সেখানকার বিপন্ন তারণ্য এবার একেবারেই ইসরায়েলি সমরাস্ত্রের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেছে। ২০ এপ্রিল নারীদের নেতৃত্বে উত্তাল বিক্ষোভের ধারাবাহিকতায় ২৭ তারিখের ভূমি দিবসের কর্মসূচিতে ছিল তরুণদের প্রাধান্য। শিক্ষা ও চিকিৎসা বঞ্চিত ‘বিপ্লবী তরুণদের’ ওই শুক্রবারে ইসরায়েলি গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন ৩ ফিলিস্তিনি। এদিনের কর্মসূচি সফল করতে গিয়ে আগত হয়েছেন সহস্রাধিক। সরেজমিন উপত্যকতার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আল জাজিরার প্রতিবেদক জানিয়েছেন, তরুণরা আর ইসরায়েলি সমরাস্ত্রকে ভয় পাচ্ছে না। কর্মসূচি সফল করতে তাজা গুলি উপেক্ষা করে তারা এগিয়ে যাচ্ছে সীমান্ত বেস্টনির দিকে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়েছে। হত্যাযজ্ঞের নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার  কমিশন। তবুও থামছে না ইসরায়েলি মারণাস্ত্রের আঘাত। ভূমি দিবসের কর্মসূচি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৬ জনে।
অস্তিত্ব রক্ষায় ইসরায়েলি মারণাস্ত্রের দিকে ছুটছে গাজার বিপন্ন তরুণরা

গাজা উপত্যকাকে বলা হয়ে থাকে পৃথিবীর বৃহত্তম উন্মুক্ত কারাগার। সুদীর্ঘ ইসরায়েলি অবরোধে ভেঙে পড়েছে সেখানকার অবকাঠামো। সেখানকার মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষা চিকিৎসাসহ যাবতীয় মৌলিক অধিকার থেকে। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে জাতিসংঘের শিশুবিয়ষক সংস্থা ইউনিসেফ-এর দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী সেখানে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী ফিলিস্তিনি পরিবারের সংখ্যা ৪০ শতাংশ। আর ৭০ ভাগ মানুষ টিকে আছে মানবিক সহায়তার ওপর ভর করে। জাতিসংঘের পরিসংখ্যান বলছে, গাজার মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশের বয়স ২৪ বছরের কম। আর ১৫-২৯ বছর বয়সী গাজার জনসংখ্যার ৫৬ শতাংশই বেকার। তরুণদের বেকারত্বের হারের বিবেচনায় এটিই বিশ্বে সর্বোচ্চ।

ভূমি দিবসের কর্মসূচি ‘মার্চ ফর গ্রেট রিটার্ন’ সফল করতে প্রায় একমাস ধরে গাজার ইসরায়েল সীমান্তে প্রতিদিন জড়ো হয়েছেন কয়েকশ বিক্ষোভকারী । ক্ষুদ্র আয়তনের গাজার প্রায় ২ লাখ শরণার্থী নিজেদের ভূমিতে ফেরার দাবি জানাচ্ছেন। ১৯৪৮ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে উচ্ছেদ হওয়া ৭ লাখ ৫০ হাজার ফিলিস্তিনির মধ্যে ছিলেন তারাও। ভূমি দিবসের বিক্ষোভ ১৫ মে পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়ার কথা। তবে অনেক আন্দোলনকারীই বলছেন, পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, আন্দোলন ছাড়া কোনও বিকল্প তাদের সামনে নেই। ফলে ১৫ মে’র পরেও এই বিক্ষোভ অব্যাহত থাকতে পারে।

এবারের বিক্ষোভের ৫ম শুক্রবারটি ছিল তরুণদের। এই বিক্ষোভের নাম দেওয়া বিপ্লবী তরুণদের শুক্রবার। বিক্ষোভের আগেই ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আভিচায় আদ্রায়ি ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে ফিলিস্তিনি তরুণদের ঘরে থাকার হুমকি দিয়েছিলেন। তবে তার এই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভ কর্মসূচি সফল করতে দলে দলে যোগ দেয় গাজা উপত্যকার তরুণরা। এদেরই একজন ২৫ বছরের বাশার আবু রাস। মিডল ইস্ট আইয়ের কাছে তিনি রেখেছেন, ‘কিসের ভবিষ্যতের কথা বলছেন আদ্রায়ি? ২০১৪ সালে তারা গাজা ধ্বংস করেছে, তারা কয়েক হাজার তরুণের শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য কোথাও যেতে দিচ্ছে না।’

অস্তিত্ব রক্ষায় ইসরায়েলি মারণাস্ত্রের দিকে ছুটছে গাজার বিপন্ন তরুণরা

জাতিসংঘ ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়েই গাজা উপত্যকাকে বসবাসের অযোগ্য ঘোষণা করে। প্রায় ১১ বছর ধরে গাজায় ইসরায়েল ও মিসরের অবরোধের কারণে উপকূলীয় এলাকাটির অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটেছে বলে মনে করে সেখানকার ফিলিস্তিনিরা। ২৫ বছরের ইউসেফ আবু হাশিশ বলেন, আমাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে, আমরা বিদেশে পড়তে যেতে পারি না কারণ রাফাহ সীমান্ত শুধু মানবিক কারণে চালু করে মিসর। আমরা এরেজ চেকপয়েন্ট দিয়ে যাতায়াত করতে পারি না ইসরায়েলের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থার কারণে। হাশিশ জানান, বিক্ষোভে তার সঙ্গে যোগ দেওয়া দুই বন্ধু দুই বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও কোনও চাকরি পাননি। বলেন, এই জন্যই আমরা বিক্ষোভের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই উপায়েই কেবল আমরা দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে আমাদের কথা বলতে পারব।

আনওয়ার আল-সালহি নামের ২৯ বছরের আরেক যুবক একের পর এক অস্থায়ী চাকরি করছেন। মাঝে মাঝে সপ্তাহে ৭ ডলারের বিনিময়ে চাকরি করেন। তিনিই পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী মানুষ। তার আরও দুই ভাই থাকলেও তারা বেকার। সালহি জানান, তিনি পশ্চিম তীরের হেবরনে একটি চাকরি পেয়েছিলেন। কিন্তু ইসরায়েল তাকে সেখানে যাতায়াতের অনুমতি না দেওয়ায় চাকরিটি করতে পারেননি। ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের একত্রিত করতে না পারার মধ্য দিয়ে আমাদেরকেই ব্যর্থ করেছে ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক দলগুলো। ৭০ বছর আগে আমাদের ভূমি দখলকারী, আমাদেরকে অবরুদ্ধকারী, আমাদের অধিকার লঙ্ঘনকারী, আমাদের শিশুর হত্যাকারী ও পশ্চিমতীরে স্বজনদের দেখতে বাধা দেওয়া ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ দরকার।

অস্তিত্ব রক্ষায় ইসরায়েলি মারণাস্ত্রের দিকে ছুটছে গাজার বিপন্ন তরুণরা

সালহি আরও বলেন, আমাদের আশাবাদ হারিয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ এই ইসরায়েলি দখল। আমাদের শুধু কণ্ঠ রয়েছে যা বিশ্বকে শোনানো দরকার। আমাদের বিরুদ্ধে যে নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে তাতে বিশ্বের নীরবতা ভাঙতে সহযোগিতা করবে আমাদের এই চিৎকার। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে নিরস্ত্রহীন বিক্ষোভ করছি আমাদের ভূমিতে ফেরার আইনি অধিকারের দাবিতে।

গাজা থেকে কাতারভিত্তিক আল জাজিরার সাংবাদিক স্টেফানি ডেক্কার জানান, ইসরায়েল স্পষ্টভাবেই চায়, ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীরা সীমান্ত বেস্টনি থেকে দূরে থাকুক। তারা এজন্য প্রয়োজনে গুলি করবে বলে জানিয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি এমনই দাঁড়িয়েছে, মানুষ এখন আর ভয় পাচ্ছে না। ইসরায়েলি সেনাদের তাজাগুলির মুখেও তারা এগিয়ে যাচ্ছে। স্টেফানি বলেন, ‘হ্যাঁ তারা সীমান্ত বেস্টনির দিকে এগিয়ে যায়; হ্যাঁ, তারা পাথর ছুড়ে মারে, তারা ককটেল ছুড়ে মারে। কিন্তু মনে রাখতে হবে তারা মোকাবিলা করছে বিশ্বের অন্যতম অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত সেনাবাহিনীকে। দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে এটাই তাদের প্রতিরোধ, অবরোধের বিরুদ্ধে এটাই তাদের প্রতিবাদ। যে অবরোধ তাদের অবাধ যাতায়াতের স্বাধীনতাকে খর্ব করেছে। গাজাবাসীর সাম্প্রতিক অবস্থাকে আখ্যা দিয়ে স্টেফানি আরও বলেন,  ‘আমি গাজা থেকে খবর সংগ্রহ করছি কয়েক বছর ধরে। কিন্তু এতোটা খারাপ অবস্থা কখনও দেখিনি।’

 

/বিএ/
সম্পর্কিত
চুক্তি হোক বা না হোক রাফাহতে ইসরায়েলি অভিযান চলবে: নেতানিয়াহু
হামাসকে ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মেনে নেওয়ার আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
গাজায় যুদ্ধবিরতি নাকি রাফাহতে হামলারাজনৈতিক সংশয়ের মুখোমুখি নেতানিয়াহু
সর্বশেষ খবর
শোইগুর সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে পুতিনের?
শোইগুর সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে পুতিনের?
বাড্ডায় নারীর মরদেহ উদ্ধার
বাড্ডায় নারীর মরদেহ উদ্ধার
ম্যানসিটির ওপর চাপ ধরে রাখলো আর্সেনাল
ম্যানসিটির ওপর চাপ ধরে রাখলো আর্সেনাল
এবার এক লাফে স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ৬ হাজার টাকার বেশি
এবার এক লাফে স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ৬ হাজার টাকার বেশি
সর্বাধিক পঠিত
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে
বিসিএসে সফলতায় এগিয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা
বিসিএসে সফলতায় এগিয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা
চট্টগ্রামে যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
চট্টগ্রামে যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
লিথুয়ানিয়ার ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে: বেলারুশ
লিথুয়ানিয়ার ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে: বেলারুশ