ভারত ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে পূর্ব নির্ধারিত বৈঠক ভণ্ডুল হয়ে যাওয়ায় পরস্পরকে দুষছে দিল্লি ও ইসলামাবাদ। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে চলতি সপ্তাহে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সাইডলাইনে এ বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে এই বৈঠকের প্রস্তাব করেছিলেন। ভারতও এতে রাজি হয়েছিল। আশা করা হচ্ছিল পাকিস্তানে নতুন সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে নতুন করে শান্তি প্রক্রিয়া সূচনা হতে পারে। কিন্তু ভারত শেষ মুহূর্তে বৈঠকটি বাতিল করে দেয়। এ নিয়ে শনিবার জাতিসংঘে বাদানুবাদে জড়িয়েছে দুই দেশ।
ভারত অধিকৃত কাশ্মিরে তিন পুলিশ সদস্যের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ পাকিস্তানকে দায়ী করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ইসলামাবাদ। অন্যদিকে, পাকিস্তানের ডাক বিভাগ সম্প্রতি ‘ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে নির্যাতন’ শিরোনামে ২০টি টিকেটের একটি সেট প্রকাশ করে। মূলত এসবের জেরেই বৈঠক বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় দিল্লি। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, পাকিস্তানের 'অশুভ পরিকল্পনা' প্রকাশ হয়ে গেছে। বিশ্বের কাছে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরানে খানের 'আসল রূপ' বেরিয়ে পড়েছে।
শনিবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা বাতিলের কোনও পরিকল্পনা তার দেশের ছিল না।
২০০৮ সালে মুম্বাই হামলার জন্য আবারও পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করেন সুষমা স্বরাজ। তিনি বলেন, ওই হামলার ‘মূলহোতা’ হাফিজ সাঈদ এখনও পাকিস্তানের রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। যে দেশ হাফিজ সাইদের মতো সন্ত্রাসীদের মুক্তভাবে ঘুরতে দেয় সেই দেশের সঙ্গে আলোচনায় বসা অসম্ভব।
সুষমা বলেন, ভারতের বিরুদ্ধে আলোচনার প্রক্রিয়া ছিনতাইয়ের অভিযোগ আনা হচ্ছে। অথচ এটি ডাহা মিথ্যা।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ‘নয়া পাকিস্তান’ স্লোগানের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, নতুন পাকিস্তানের সাথে পুরনো পাকিস্তানের কোনও পার্থক্য নেই। তারা নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত ১৩২ জন সন্ত্রাসী ও ২২টি সন্ত্রাসী সংগঠনকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে।
ইসলামাবাদকে সন্ত্রাসবাদের চারণক্ষেত্র হিসেবেও আখ্যায়িত করেন সুষমা। তিনি বলেন, ওসামা বিন লাদেনকেও তারা সেফ হ্যাভেন তৈরি করে দিয়েছিল।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি তার বক্তব্যে অভিযোগ করেন, পাকিস্তানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পেছনে কলকাঠি নাড়ে ভারত। ২০১৪ সালে পেশোয়ারের স্কুলে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায়ও দিল্লির যোগসাজশ ছিল।
তিনি বলেন, ভারত শান্তি আলোচনা নিয়ে রাজনীতি করতে পছন্দ করে। আলোচনা এড়াতে তারা ডাহা মিথ্যাচার করছে। এ নিয়ে তারা তৃতীয়বারের মতো আলোচনা বন্ধ করে দিয়েছে। প্রতিবারই ‘তুচ্ছ কারণ’ দেখিয়ে আলোচনা থেকে পিছু হটে। কাশ্মিরে ভারতীয় বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘন, ছররা গুলিবর্ষণের শিকার ব্যক্তিদের ছবি নিয়ে তৈরি স্ট্যাম্পকেও তারা আলোচনা থেকে সরে যাওয়ার অবলম্বন হিসেবে ব্যবহার করছে।
আলোচনার কেন্দ্রে পাকিস্তানের ডাকটিকিট
পাকিস্তানের ডাক বিভাগ সম্প্রতি ‘ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে নির্যাতন’ শিরোনামে ২০টি টিকিটের একটি সেট প্রকাশ করেছে। একেকটি টিকিটে ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নির্যাতনের ওপর প্রকাশিত বিভিন্ন ঘটনার ছবি রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে রাসায়নিক অস্ত্রের শিকার এবং ছররা গুলিতে আহত মানুষের হৃদয়স্পর্শী সব ছবি।
একটি ডাকটিকিটে ২০১৬ সালে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত কাশ্মিরের স্বাধীনতা সংগ্রামের জনপ্রিয় নেতা বুরহান ওয়ানির ছবি রয়েছে। তাকে বর্ণনা করা হয়েছে ‘মুক্তির প্রতীক’ হিসাবে। বুরহান ওয়ানির হত্যাকাণ্ড নিয়ে এখনও কাশ্মীরে অসন্তোষ চলছে।
ফারুক আহমেদ দার নামে যে কাশ্মিরি যুবককে ভারতের সেনাবাহিনীর একটি জিপের সামনের বাম্পারে বেঁধে গাড়ি চালানো হয়েছিল, সেই ছবিও রয়েছে একটি ডাকটিকিটে। প্রতিটি টিকিটের বাঁদিকে উর্দুতে একটি বাক্য লেখা রয়েছে: ‘কাশ্মির একদিন পাকিস্তান হবে।’