X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

১৩ হাজার উইঘুরকে আটকের স্বীকারোক্তি চীনের

বিদেশ ডেস্ক
১৮ মার্চ ২০১৯, ১২:৪৬আপডেট : ১৮ মার্চ ২০১৯, ১৯:১৯

২০১৪ সাল থেকে জিনজিয়াং প্রদেশের প্রায় ১৩ হাজার উইঘুর মুসলিমকে আটকে রাখার কথা স্বীকার করেছে চীন। এর আগে জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক কমিটির জাতিগত বৈষম্য বিষয়ক সংস্থা জানায়, চীনে ১০ লাখ উইঘুর মুসলিমকে আটকে রাখা হয়েছে। উইঘুর প্রদেশকে কার্যত ‘বিশাল একটি বন্দিশিবিরে’ পরিণত করা হয়েছে। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনার মুখে এ বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিলো বেইজিং। সোমবার চীন সরকারের এক শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, ২০১৪ সাল থেকে জিনজিয়াংয়ে প্রায় ১৩ হাজার ‘সন্ত্রাসী’কে গ্রেফতার করা হয়েছে। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

১৩ হাজার উইঘুরকে আটকের স্বীকারোক্তি চীনের নির্বাসিত উইঘুরদের সংগঠন ওয়ার্ল্ড উইঘুর কংগ্রেসের পক্ষ থেকে চীন সরকারের এই শ্বেতপত্র প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। সংগঠনের মুখপাত্র দিলশাদ রক্ষিত এক বিবৃতিতে বলেন, চীন ইচ্ছাকৃতভাবে প্রকৃত ঘটনাকে বিকৃত করছে।

বেইজিং বলছে, জিনজিয়াংয়ে জঙ্গিবাদের হুমকি মোকাবিলায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চীনের পক্ষ থেকে অবশ্য উইঘুর বন্দিশিবিরগুলোকে কারাগারগুলো হিসেবে স্বীকার করা হয় না। এসব বন্দিশিবিরকে ‘ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার’ হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে দেশটি।

চীন সরকার বলছে, ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত জিনজিয়াংয়ে তারা এক হজার ৫৮৮টি ‘সন্ত্রাসী গ্যাং’ গুঁড়িয়ে দিয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ১২ হাজার ৯৯৫ ‘সন্ত্রাসী’কে। এছাড়া দুই হাজার ৫২টি বিস্ফোরক ডিভাইস জব্দ করা হয়েছে। অবৈধ ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের জন্য ৩০ হাজার ৬৪৫ জনকে সাজা দেওয়া হয়েছে। একই সময়ে তিন লাখ ৪৫ হাজার ২২৯ কপি ধর্মীয় উপাদান বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

বর্তমানে উইঘুরদের বসবাস চীনের জিনজিয়াং অঞ্চলে হলেও এটি মূলত তুর্কি বংশোদ্ভূত জাতিগোষ্ঠী। তাদের সংস্কৃতিতে আরবদের প্রভাব রয়েছে। এ জনগোষ্ঠীর বর্ণমালাও আরবি। ১৩ হাজার উইঘুরকে আটকের স্বীকারোক্তি চীনের

২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ভয়াবহ উইঘুর বন্দিশিবিরগুলোর কথা অস্বীকার করে আসছিল চীন। গত অক্টোবরে প্রথমবারের মতো এগুলোর অস্তিত্ব স্বীকার করে তারা। তবে বেইজিং-এর দাবি, ছোটখাটো অপরাধের জন্য আটক রেখে তাদের বৃত্তিমূলক শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। এতে বন্দিশিবিরগুলোকে ‘ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার’-হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

২০১৮ সালের আগস্টে জেনেভায় চীনের ওপর জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক কমিটির দুই দিনের বিশেষ সভায় উঠে আসে চীনে উইঘুরদের বন্দিশিবিরে আটকে রাখার বিষয়টি। সভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক কমিটির জাতিগত বৈষম্য বিষয়ক সংস্থা জানায়, চীনে ১০ লাখ উইঘুর মুসলিমকে আটকে রাখা হয়েছে। চীনা কর্তৃপক্ষ স্বায়ত্তশাসিত উইঘুর প্রদেশকে কার্যত ‘বিশাল একটি বন্দিশিবিরে’ পরিণত করেছে। ১৩ হাজার উইঘুরকে আটকের স্বীকারোক্তি চীনের

দীর্ঘদিন ধরেই জিনজিয়াং প্রদেশ থেকে উইঘুরসহ অন্যান্য মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের আটকের খবর সামনে আসছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলোও জাতিসংঘের কাছে এ ব্যাপারে প্রতিবেদন দিয়েছে। এসব প্রতিবেদনে উইঘুর মুসলিমদের গণহারে আটকের অভিযোগ তোলা হয় চীনের বিরুদ্ধে। তবে চীন বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

উইঘুর মুসলিম কারা?

চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশ উইঘুর মুসলিম। এই প্রদেশটি তিব্বতের মত স্বশাসিত একটি অঞ্চল। বিদেশি মিডিয়ার ওপর এখানে প্রবেশের ব্যাপারে কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে। কিন্তু গত বেশ কয়েক ধরে বিভিন্ন সূত্রে খবর আসছে যে, সেখানে বসবাসরত উইঘুরসহ ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা ব্যাপক হারে আটকের শিকার হচ্ছে।

চীনকে কেন অভিযুক্ত করা হচ্ছে?

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিটির কাছে এ ব্যাপারে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, উইঘুর মুসলিমদের গণহারে ধরে বিভিন্ন বন্দিশিবিরে নেওয়া হচ্ছে। এরপর সেসব শিবিরে তাদের জোর করে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর প্রতি আনুগত্য প্রকাশে বাধ্য করা হচ্ছে। লন্ডনের চীনা দূতাবাসের সামনে উইঘুর হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ। ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯।

নির্বাসিত উইঘুর মুসলিমদের সংগঠন ওয়ার্ল্ড উইঘুর কংগ্রেস তাদের এক রিপোর্টে বলেছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই উইঘুরদের আটক করা হচ্ছে। তাদের জোর করে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষে স্লোগান দিতে বলা হচ্ছে। ওয়ার্ল্ড উইঘুর কংগ্রেস জানিয়েছে, বন্দিদের ঠিকমত খাবার দেওয়া হয় না এবং নানাভাবে নির্যাতন করা হয়। অধিকাংশ বন্দিকে দীর্ঘদিন আটকে রাখলেও তাদের অভিযুক্ত করা হয় না এবং কোনও আইনি সহায়তা নিতেও দেওয়া হয় না।

চীনের ভাষ্য

চীন সব সময় দাবি করে, দেশটিতে এ ধরনের কোনও বন্দিশিবিরের অস্তিত্ব নেই। গত এপ্রিলে মার্কিন একজন সিনিয়র কূটনীতিক ল্যরা স্টোন বলেছিলেন, ‘পুনঃশিক্ষা কেন্দ্রগুলোতে’ লাখ লাখ মানুষকে আটকে রাখা হয়েছে। প্রতিক্রিয়ায় চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তখন বলেছিলেন, ‘সবাই জানে এবং দেখে যে জিনজিয়াংয়ে সব জাতিগোষ্ঠী শান্তি ও সমৃদ্ধির মাঝে পাশাপাশি বসবাস করছে।’ সূত্র: আল জাজিরা, আনাদোলু এজেন্সি, টিআরটি ওয়ার্ল্ড।

/এমপি/
সম্পর্কিত
ডব্লিউএইচও এর সম্মেলনে যোগদানের বিষয়ে যা বললো তাইওয়ান
চীনের দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক ধসে নিহত ৩৬
হংকংয়ে টানা ১০ হাজার বজ্রাঘাত
সর্বশেষ খবর
অপহৃত ১০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি
অপহৃত ১০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি
ধানমন্ডিতে ছাদ থেকে পড়ে গৃহকর্মী আহত 
ধানমন্ডিতে ছাদ থেকে পড়ে গৃহকর্মী আহত 
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা