ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে হামলায় হতাহতদের প্রতি সংহতি জানিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালনের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ঐক্যের ডাক দিয়েছেন নিউ জিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন। এ সময় মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর বাণী উদ্ধৃত করে তিনি সবাইকে এক হওয়ার আহ্বান জানান।
১৫ মার্চ (শুক্রবার) ২৮ বছর বয়সী অস্ট্রেলীয় নাগরিক ব্রেন্টন ট্যারান্ট নামের সন্দেহভাজন হামলাকারীর লক্ষ্যবস্তু হয় নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদ। শহরের হাগলি পার্কমুখী সড়ক ডিনস এভিনিউর আল নুর মসজিদসহ লিনউডের আরেকটি মসজিদে তার তাণ্ডবের বলি হয় অর্ধশত মানুষ। হামলায় নিহত অর্ধশত মানুষের মধ্যে আল নুর মসজিদে হামলায় প্রাণহানি হয় ৪৩ জনের। বুলেটের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত সেই মসজিদ থেকেই জুমার নামাজ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও রেডিওতে সম্প্রচার করা হয়। তারপর পালন করা হয় দুই মিনিটের নীরবতা।
এদিন আল নুর মসজিদের সামনে হেগলি পার্কে হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে যোগ দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন। সে সময় তার মাথা স্কার্ফ দিয়ে ঢাকা ছিলো। তিনি বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে পুরো নিউ জিল্যান্ডই ব্যথিত। আমরা সবাই এক।’ তিনি বলেন, ‘মোহাম্মদ (সা.) বলেছেন, বিশ্ববাসী পারস্পরিক ভালোবাসা ও সহানুভূতি দিয়ে একটি শরীরের মতো থাকবেন। যখন শরীরের কোন অঙ্গে ব্যথা হয় তখন পুরো শরীরে ব্যথা হয়।
এদিন নামাজ পরিচালনাকারী ইমাম গামাল ফালুদা বলেন, ওই বন্দুকধারী এখানে হামলা চালিয়ে বিশ্বের লাখ লাখা মানুষের হৃদয় ভেঙে দিয়েছে। আজ সেই একই জায়গা থেকে আমি শুধু ভালোবাসাই দেখতে পাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমাদের হৃদয় ভেঙে গেছে, কিন্তু আমরা ভেঙে পড়িনি। আমরা জীবিত ও আমরা এক। আমরা কাউকেই আমাদের মাঝে বিভক্তি তৈরি করতে দেবো না।
এছাড়া দেশের অন্যান্য মসজিদও সব ধর্মাবলম্বী মানুষের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। মসজিদগুলোর সামনে ভালোবাসা ও সুরক্ষার প্রতীক হিসেবে মানববন্ধন করবেন নিউ জিল্যান্ডবাসী।
হামলার পর থেকেই নিউ জিল্যান্ডবাসীও এই মর্মান্তিক ঘটনায় নিহতদের স্মরণে শ্রদ্ধা জানিয়ে যাচ্ছেন। ফুল দেওয়ার স্থানগুলো ভরে গেছে। ফুলের সঙ্গে রয়েছে সমবেদনা জানিয়ে লেখা চিরকুটও। এছাড়া হতাহতদের প্রতি সংহতি ও দেশটিতে বসবাসরত মুসলিমদের প্রতি সম্মান জানিয়ে কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন শুরু করে নিউ জিল্যান্ড। মুসলিম রীতিতে সালাম দিয়ে ভাষণ শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী। মসজিদে হামলায় হতাহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে গিয়ে পার্লামেন্টের স্পিকারকে সম্বোধন করে জাসিন্ডা বলেন, মিস্টার স্পিকার, আসসালামু আলাইকুম। পরে ইংরেজিতে বলেন, পিস বি আপন উইথ ইউ (আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক)।