X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

চীনা হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে উত্তাল রাজপথ, অনড় হংকং-এর শাসক

বিদেশ ডেস্ক
১০ জুন ২০১৯, ১৩:১৮আপডেট : ১০ জুন ২০১৯, ১৭:০০

চীনে বন্দি  প্রত্যর্পণের সুযোগ রেখে প্রস্তাবিত আইনের বিরুদ্ধে রবিবার হংকংয়ের রাজপথে নেমেছেন লক্ষাধিক মানুষ। তবে বিক্ষোভকারীদের কোনও তোয়াক্কা না করে সোমবার অঞ্চলটির শাসক বেইজিংপন্থী হিসেবে পরিচিত ক্যারি ল্যাম সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, প্রস্তাবিত ওই আইনে কোনও কাটছাঁট করা হবে না।

চীনা হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে উত্তাল রাজপথ, অনড় হংকং-এর শাসক হংকংয়ের জনসংখ্যা প্রায় ৭৪ লাখ হলেও ১২শ’ জনের একটি বিশেষ কমিটি নেতা বাছাইয়ে ভোট দেওয়ার সুযোগ পান। অঞ্চলটির নেতা বা প্রধান নির্বাহী ক্যারি ল্যামের দাবি, হংকং যে বিশেষ স্বাধীনতা উপভোগ করে, নতুন আইনের ফলে তার কোনও ক্ষতি হবে না। তবে সেখানকার গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারীরা বলছেন, আইনটির মাধ্যমে অঞ্চলটির রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করবে বেইজিং। এর প্রতিবাদ জানাতেই তারা রাজপথের বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন।

সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ক্যারি ল্যাম দাবি করেন, এই আইনের প্রয়োজন রয়েছে এবং এতে মানবাধিকারের রক্ষাকবচগুলো যুক্ত করা হয়েছে।

তার দাবি, প্রস্তাবিত এই আইনটি বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে তোলা হয়নি। বিবেকের তাড়নায় এবং হংকংয়ের প্রতি অঙ্গীকার থেকেই এই প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত আইনটিতে মূলত চীন ও তাইওয়ানে বন্দি বহিঃসমর্পণের কথা বলা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভের আয়োজক সংগঠন সিভিল হিউম্যান রাইটস ফ্রন্ট জানিয়েছে, একই ইস্যুতে গত এপ্রিলে আয়োজিত কর্মসূচিতে এক লাখ ৩০ হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। তবে রবিবারের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া মানুষের সংখ্যা আরও বেশি। চীনা হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে উত্তাল রাজপথ, অনড় হংকং-এর শাসক

হংকংয়ে যেখানে বিক্ষোভ হচ্ছে, সেখানে অবস্থানরত জার্মান বার্তা সংস্থা ডিপিএ'র প্রতিনিধি জানিয়েছেন, রবিবারের বিক্ষোভেও আগের বারের মতো বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নিয়েছেন। তাদের হাতে থাকা লাল কার্ডবোর্ডে চীনা এবং ইংরেজি ভাষায় লেখা রয়েছে, ‘চীনে বহিঃসমর্পণ নয়।’

বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরুর ঘণ্টাখানেক পরও অনেক মানুষকে এতে যোগ দিতে দেখা গেছে। ভিড় কমার কোন ইঙ্গিত নেই, বরং ক্রমশ যেন তা বেড়েছে। প্রতিবাদকারীরা মনে করছেন, বন্দি প্রত্যাবর্তনের এই আইন পাস হলে তা হংকংয়ের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে চীনের হস্তক্ষেপের সুযোগ বাড়িয়ে দেবে।

হংকং চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত হলেও ২০৪৭ সাল অবধি অঞ্চলটির স্বায়ত্তশাসনের নিশ্চয়তা দিয়েছে দেশটি। দেড়শ’ বছর ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনে থাকার পর লিজ চুক্তির মেয়াদ শেষে ১৯৯৭ সালের ১ জুলাই হংকংকে চীনের কাছে ফেরত দেওয়া হয়েছিল।

প্রসঙ্গত, গত বছরের এক ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রস্তাবিত এই বহিঃসমর্পণ বিলটি তৈরি করা হয়। তাইওয়ানে ছুটি কাটানোর সময় অন্তঃসত্ত্বা বান্ধবীকে হত্যার অভিয়োগ ওঠে হংকংয়ের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। কিন্তু তাইওয়ানের সঙ্গে হংকংয়ের বন্দি বিনিময়ের কোনও চুক্তি না থাকায় সেই ব্যক্তিকে এখন তাইপেতে বিচারের জন্য পাঠানো যাচ্ছে না। চীনা হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে উত্তাল রাজপথ, অনড় হংকং-এর শাসক

প্রস্তাবিত বিলে এ ধরনের পরিস্থিতিতে সন্দেহভাজন অপরাধীকে ফেরত পাঠানোর পথ সুগম করা হয়েছে। কিন্তু চীন এই আইনের সুবিধা নিয়ে হংকং-এর বাসিন্দাদের ওপর খবরদারি বাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা থাকায় বিষয়টি সেখানে এটি রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। ফলে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের সাধারণ বাসিন্দারা ছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রও এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি তাইওয়ানও জানিয়েছে যে, সন্দেহভাজন সেই খুনের মামলার আসামিকে ফেরত নিতে চায় না তারা। কেননা এটি এমন এক উদাহরণ তৈরি করবে যা চীন ভবিষ্যতে কাজে লাগাতে পারে।

বেইজিংয়ের দুর্বল আইন এবং মানবাধিকার রেকর্ডের কারণে সেখানে কোনও বন্দিকে ফেরত পাঠানো নিরাপদ মনে করছেন না তাইওয়ান এবং হংকংয়ের সাধারণ মানুষ।

হংকংয়ে পুরো পরিবার সঙ্গে নিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যোগ দেওয়া হেরা পুন বলেন, ‘আমি মনে করি এটা এখন পর্যন্ত প্রস্তাবিত সবচেয়ে বাজে আইন। আমরা সবাই বুঝতে পারছি যে হংকংয়ের বিচার ব্যবস্থায় নাড়া দিচ্ছে চীন।’

পুন মনে করেন, চীন সরকার কারও ওপর অসন্তুষ্ট হলেই তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে যা সুষ্ঠু বিচার ব্যবস্থার বহিঃপ্রকাশ নয়। রবিবারের বিক্ষোভে অংশ নেওয়া আরও অনেকে তার মতো একই মনোভাব প্রকাশ করেছেন।

ক্রিস্টোফার নামের এক প্রতিবাদকারী বলেন, ‘আমি তিন সন্তানের পিতা এবং আমিও প্রস্তাবিত আইনের বিরুদ্ধে আমার মতামত জানাতে চাই। আমি মনে করি নতুন এই আইন হংকংয়ের মৌলিক স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপের শামিল।’

হংকং সরকার অবশ্য আইনটি নিয়ে জনগণের উদ্বেগের কথা বিবেচনায় এনে কোন কোন ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে বন্দি বহিঃসমর্পণ করা যাবে তা কমিয়ে আনার কথা বলছে। তবে প্রতিবাদকারীরা সরকারের এমন কথায় সন্তুষ্ট নয়। বরং অতীতে এ ধরনের প্রতিবাদে কাজ হওয়ায় এবারও আইনটি বাতিল হবে বলে আশাবাদী তারা।

/এমপি/
সম্পর্কিত
বাংলাদেশের আম নিতে চায় চীন
তাইওয়ানের কাছাকাছি আবারও সামরিক কার্যকলাপ চালালো চীন
পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চীনকে যা করতে হবে
সর্বশেষ খবর
‘কবরস্থানের উন্নয়নে’ কেটে ফেলা হলো অর্ধশতাধিক গাছ
‘কবরস্থানের উন্নয়নে’ কেটে ফেলা হলো অর্ধশতাধিক গাছ
টপ অর্ডার ব্যাটারদের ব্যর্থতায় চিন্তিত টিম ম্যানেজমেন্ট
বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলটপ অর্ডার ব্যাটারদের ব্যর্থতায় চিন্তিত টিম ম্যানেজমেন্ট
গুলিবিদ্ধ হয়ে আধাঘণ্টা ওষুধের দোকানের সামনে পড়ে থেকে মৃত্যু, বাড়িতে মাতম
গুলিবিদ্ধ হয়ে আধাঘণ্টা ওষুধের দোকানের সামনে পড়ে থেকে মৃত্যু, বাড়িতে মাতম
মোংলা বন্দরে কনটেইনারবাহী জাহাজ আসার নতুন রেকর্ড
মোংলা বন্দরে কনটেইনারবাহী জাহাজ আসার নতুন রেকর্ড
সর্বাধিক পঠিত
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
আজ কি বৃষ্টি হবে?
আজ কি বৃষ্টি হবে?