X
বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
১২ আষাঢ় ১৪৩২

ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ‘অন্ধ’ করে দিয়েছিল মার্কিন সেনাবাহিনীকে!

বিদেশ ডেস্ক
১৬ জানুয়ারি ২০২০, ১৭:১২আপডেট : ১৬ জানুয়ারি ২০২০, ১৯:৫৯
image

বাগদাদে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা ঘাঁটিতে যখন ইরান হামলা চালায়, সে সময় ইরাকের আকাশে টহল দিচ্ছিলো উচ্চ-নজরদারির ক্ষমতাসম্পন্ন ৭টি মার্কিন ড্রোন। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির এক বিশেষ প্রতিবেদনে ঘাঁটির নজরদারিতে নিয়োজিত ওই ড্রোনগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর ‘চোখ’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ইরানের হামলার সময় এগুলোতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ‘অন্ধ’ হয়ে পড়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।

ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ‘অন্ধ’ করে দিয়েছিল মার্কিন সেনাবাহিনীকে! গত ৮ জানুয়ারি ইরানের কুদস ফোর্সের কমান্ডার কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার বদলা নিতে ইরাকের মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় তেহরান। দুটি ঘাঁটিতে অন্তত ২২টি ব্যালিস্টিক মিসাইল ছোড়ে ইরানের সেনাবাহিনী (রেভ্যুলশনারি গার্ড)। এ হামলায় অন্তত ৮০ জন মার্কিন সেনা নিহত হয়েছে বলে ইরানের পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও পরে জানা যায়, কোনও সেনা হতাহত হননি।

এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, আইন আল আসাদ ঘাঁটিতে হামলা শুরুর পর আকাশ থেকে আর যোগাযোগ করতে পারেনি মার্কিন বাহিনী। সে সময় ইরাকের আকাশে টহলরত ৭টি চালকবিহীন বিমানের মধ্যে এমকিউ-ওয়ানসি গ্রে ঈগল নামের আধুনিক ড্রোনটি টানা সাত ঘণ্টা উড়তে এবং চারটি হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র বহন সক্ষম।

২৬ বছর বয়সী স্টাফ সার্জেন্ট কসটিন হেরউইগ বলেন, ‘সংঘাতের আশঙ্কায় আমরা এয়ার ক্রাফটগুলো (ড্রোন) চালু রেখেছিলাম। তিনি নিজেও একটি গ্রে ঈগল পরিচালনা করছিলেন। ঘাঁটিতে অবস্থান করা ১৫০০ সেনার বেশিরভাগই বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়েছিল। তবে ১৪ জন পাইলট আলাদা কন্টেইনারে আশ্রয় নেয়। সেটাকে ককপিট বানিয়ে ড্রোন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছিলো তারা।’

হেরউইগ বলেন, প্রথম ক্ষেপণাস্ত্রটি তাদের শেল্টারে আঘাত হানে। তবে পাইলটদের আগের অবস্থানেই থাকতে হয়। এরপর একের পর এক আঘাত হতে থাকে। তিনি ভাগ্যকে বরণ করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। সেনারা জানায়, তিন ঘণ্টা পর্যন্ত ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম আমাদের আর কিছুই করার নেই। কোনও নিয়ন্ত্রণ ছিল না তখন।’

তখনও আসল ঘটনা বাকিই ছিল। ফার্স্ট সার্জেন্ট ওয়েসলে কিলপ্যাট্রিক বলেন, ‘শেষ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার এক মিনিটেরও কম সময়ে আমি বেশ কিছুটা পেছন দিকে দিয়ে ঘুরে বাংকারের দিকে যাচ্ছিলাম। দেখলাম, আমাদের ফাইবার লাইনগুলো আগুনে পুড়ছে। ওই লাইনগুলো ভার্চুয়াল ককপিট থেকে অ্যান্টেনা ও স্যাটেলাইটের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। এর মাধ্যমে গ্রে ঈগলসে সংকেত পাঠানো হতো এবং ক্যামেরা থেকে পাওয়া ফিডব্যাক আইন আল-আসাদ ঘাঁটির স্ক্রিনে চলে যেত।’

কিলপ্যাট্রিক বলেন, ফাইবার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় সেখানে আর কোনও নিয়ন্ত্রণ ছিল না। ফলে সেনারা ড্রোনগুলোর অবস্থান আর খুঁজে পাচ্ছিল না এবং আকাশে-মাটিতে কী ঘটছে, সে সম্পর্কে কিছুই জানতে পারছিলো না। অর্থাৎ তখন যদি কোনও ড্রোন ভূপাতিত করা হয়ে থাকে সে সম্পর্কে জানার কোনও সুযোগ ছিল না মার্কিন বাহিনীর।

হেরউইগ বলেন, ‘এটা বিশাল ব্যাপার। প্রথমত ড্রোনগুলো অনেক ব্যয়বহুল। তাছাড়া এতে এমন উপাদান রয়েছে, আমরা চাই না তা শত্রুপক্ষ পেয়ে যাক।’

২০১৯ সালে মার্কিন সামরিক বাজেট অনুযায়ী, একটি গ্রে ঈগলের মূল্য ৭০ লাখ ডলার। ২০১৭ সাল থেকে ইরাকে মোতায়েনরত মার্কিন নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনী আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই ড্রোন ব্যবহার করছে।

বিধি অনুযায়ী ইরাকের আকাশে ড্রোন ও উড়োজাহাজ ওড়ানোর জন্য সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয় মার্কিন জোটের। ইরান হামলা চালানোর কয়েক দিন আগে ওই অনুমোদনের সময়সীমা পেরিয়ে যায়। এরপরও ইরাকের আকাশে ড্রোন চালানো অব্যাহত রাখা হয় বলে জানান সিনিয়র এক মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা।

৮ জানুয়ারি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সময় বাকি সেনাদের সঙ্গে পাইলটরাও একপর্যায়ে বাংকারে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। তবে হামলা বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা ছুটে গিয়ে সিগন্যাল ঠিক করতে থাকেন। তারা মূলত গ্রে ঈগলস ড্রোনের সঙ্গে সংযোগ পাওয়ার চেষ্টা করেন। সকাল হতে হতে সেনারা পুড়ে যাওয়া ফাইবারের ৫০০ মিটার পর্যন্ত প্রতিস্থাপন করতে সক্ষম হন। ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ঘাঁটিতে অনেক গর্ত তৈরি হয় এবং নিয়ন্ত্রণ টাওয়ারের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

হেরউইগ বলেন, ‘এয়ার ক্র্যাফট অবতরণের জায়গা বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাই কারও সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই আমাদের অন্যত্র অবতরণ করাতে হয়। বাকি এয়ারক্রাফট কোথায় আছে আমরা জানতাম না। আমরা সে সময় বেশ উদ্বিগ্ন ছিলাম।’

হামলার পর মার্কিন সেনাদের মূল লক্ষ্য ছিল গ্রে ঈগলকে অবতরণ করানো। বিপজ্জনক পর্যায়ে জ্বালানি কমে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ড্রোনগুলো আকাশে উড়তে থাকে। প্রত্যেকটি ড্রোন অবতরণ করাতে কয়েক ঘণ্টা লেগে যায় পাইলটদের। সর্বশেষ ড্রোনটিকে অবতরণ করানো হয় সকাল নয়টায়। কিলপ্যাট্রিক বলেন, ‘আমরা আমাদের সব ড্রোন মাটিতে নামাতে সক্ষম হই। এটা জটিল একটা কাজ ছিল।’

/এমএইচ/বিএ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
বৈশ্বিক অনুদান কমায় রোহিঙ্গা শিশুদের পড়ালেখার ক্ষতি হচ্ছে: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
ইরানের সঙ্গে বৈঠক হবে, তবে চুক্তি জরুরি নয়: ট্রাম্প
গাজায় যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী ট্রাম্প
সর্বশেষ খবর
ঘরে ভ্যাপসা গন্ধ? দূর করার ৬ উপায় জেনে নিন
ঘরে ভ্যাপসা গন্ধ? দূর করার ৬ উপায় জেনে নিন
খাগড়াছড়িতে এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের আশপাশে ১৪৪ ধারা জারিসহ ৬ নির্দেশনা
খাগড়াছড়িতে এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের আশপাশে ১৪৪ ধারা জারিসহ ৬ নির্দেশনা
ইনিংস সমৃদ্ধ করার আশায় দ্বিতীয় দিন শুরু বাংলাদেশের 
ইনিংস সমৃদ্ধ করার আশায় দ্বিতীয় দিন শুরু বাংলাদেশের 
বৈশ্বিক অনুদান কমায় রোহিঙ্গা শিশুদের পড়ালেখার ক্ষতি হচ্ছে: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
বৈশ্বিক অনুদান কমায় রোহিঙ্গা শিশুদের পড়ালেখার ক্ষতি হচ্ছে: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
সর্বাধিক পঠিত
যে কারণে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী টিটুকে সরিয়ে দিলেন ট্রাইব্যুনাল
যে কারণে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী টিটুকে সরিয়ে দিলেন ট্রাইব্যুনাল
রাইস কুকারে রান্না করতে গিয়ে মা-মেয়ের মৃত্যু
রাইস কুকারে রান্না করতে গিয়ে মা-মেয়ের মৃত্যু
বছরে ৯৬০ কোটি টাকা সুদ দিতে হয়, চলছে না আইসিবি: অধ্যাপক আবু আহমেদ
বছরে ৯৬০ কোটি টাকা সুদ দিতে হয়, চলছে না আইসিবি: অধ্যাপক আবু আহমেদ
আটকের পর অধ্যক্ষ বললেন ‘আ.লীগ করায় দোষ হলে যেকোনও শাস্তি মেনে নেবো’
আটকের পর অধ্যক্ষ বললেন ‘আ.লীগ করায় দোষ হলে যেকোনও শাস্তি মেনে নেবো’
ইশরাক বললেন ক্ষমা চাইতে, আসিফ দিলেন ‘কড়া বার্তা’
ইশরাক বললেন ক্ষমা চাইতে, আসিফ দিলেন ‘কড়া বার্তা’