১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০। ফ্রান্সের ক্রিশ্চিয়ান ওপেন ডোর চার্চ। প্রার্থনায় সমবেত কয়েকশ মানুষ। “আমরা সৃষ্টিকর্তার মহিমা গাইতে যাচ্ছি! এই রজনীতে আপনাদের কাছে সেই আনন্দ উপলব্ধ হচ্ছে কি?” যাজকের এই কথার মধ্য দিয়েই শুরু হয় সান্ধ্যকালীন প্রার্থনা। সমস্বরে আওয়াজ আসে—‘হ্যাঁ’। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী, ওই চার্চের জমায়েত থেকেই ফ্রান্সে কোভিড-১৯ সংক্রমণের সবচেয়ে বড় বিস্তৃতিটা ঘটেছে।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক বিশেষ প্রতিবেদনে ওই প্রার্থনা সভাকেই করোনাভাইরাসের টাইমবোমা আখ্যা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ফ্রান্সে আড়াই হাজারের মতো মানুষের করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার পেছনে ভূমিকা রয়েছে ওই সমাবেশের।
হাজার হাজার মাইল পথ অতিক্রম করে জার্মানি ও সুইজারল্যান্ডের সীমান্তবর্তী মিলুজ শহরে সপ্তাহব্যাপী ওই প্রার্থনায় যোগ দিতে গিয়েছিলেন অনেকে। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই চার্চের অনুসারীদের কাছে বার্ষিক এই উৎসব সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় আসর। তবে এবারের সমাবেশে অন্তত কোনও একজন বহন করছিলেন প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস।
চার্চে প্রার্থনায় যোগ দেওয়া ব্যক্তিরা নিজেদের অজ্ঞাতেই ভাইরাসটি বয়ে নিয়ে গেছেন পশ্চিম আফ্রিকার বুরকিনা ফাসো, ভূমধ্যসাগরের দ্বীপ কোরসিকা, লাতিন আমেরিকার গায়ানা, সুইজারল্যান্ড, একটি ফরাসি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং ইউরোপের সবচেয়ে বড় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ওয়ার্কশপে।
এর কয়েক সপ্তাহ পরে জার্মানি আংশিকভাবে ফ্রান্সের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়, স্থগিত করে ২৫ বছর ধরে চলা অবাধ চলাচল চুক্তি। জার্মানির ওই সিদ্ধান্ত গ্রহণে সম্পৃক্ত দুজন রয়টার্সকে বলেছেন, করোনাভাইরাস ছড়ানোর ক্ষেত্রে ওই চার্চকেন্দ্রিক গোষ্ঠীটি ‘প্রধান নিয়ামক’ হিসেবে কাজ করেছে।
চার্চের কর্মকর্তারা রয়টার্সকে বলেছেন, সমাবেশে উপস্থিতদের মধ্যে ১৭ জন এরইমধ্যে কোভিড-১৯-এ মারা গেছেন।