X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

কেমন ছিল বৈশ্বিক রাজনীতি পুনর্নির্মাণের ৫ নির্বাচন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
৩১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৮:৩০আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯:২৪

বৈশ্বিক রাজনীতি পুনর্নির্মাণে ২০২৩ সালে পাঁচ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি রক্ষণশীল দল মধ্যপন্থি সরকারকে হটিয়ে দিয়ে বৈশ্বিক রাজনীতিতে ডানদিকে ঝুঁকেছে। বৈশ্বিক রাজনীতি পরিবর্তনে প্রভাব রেখেছে আর্জেন্টিনা, ফিনল্যান্ড, নাইজেরিয়া, নিউ জিল্যান্ড ও পোল্যান্ডের নির্বাচন। অপ্রত্যাশিত ভোটের ফলাফল, রাজনৈতিক পরিবর্তন ও বৈশ্বিক প্রভাব সবার নজর কেড়েছে।

এই নির্বাচনি ধারায় রাজনৈতিক অধিকারে পরিবর্তন আসতে পারে। যেমন, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ৮১ বছর বয়সী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনকি ২০২৪ সালে ভারতের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ডানপন্থি বিজেপি ক্ষমতায় আসতে পারে। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে এই দল ক্ষমতায় আসতে পারলে তৃতীয় মেয়াদে তারা সরকার গঠন করবে যা ভারতের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ইতিহাস হবে।

এখানে ২০২৩ সালের কয়েকটি নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করা হলো। যে নির্বাচনগুলো বৈশ্বির রাজনীতি প্রেক্ষাপট পরিবর্তন করে দিয়েছে।

আর্জেন্টিনা

২০২৩ সালে একটি ‘রাজনৈতিক ভূমিকম্প’ আর্জেন্টিনাকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। আলোড়িত নির্বাচনটি ১৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয়লাভ করেছেন উগ্র ডানপন্থি রাজনীতিবিদ ও টিভি তারকা হাভিয়ের মিলেই।

৫৩ বছর বয়সী স্বাধীনতাবাদী অর্থনীতিবিদ সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনৈতিক মতাদর্শ অনুসরণ করেছেন। ট্রাম্পের স্লোগান অনুকরণ করে ‘মেইক আর্জেন্টিনা গ্রেট অ্যাগেইন’ প্রচার করেছেন তিনি। হাভিয়ের মিলেই মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তন একটি সমাজতান্ত্রিক চক্রান্ত, গর্ভপাতের অধিকার অপ্রয়োজনীয়। তাছাড়া নির্বাচনে জালিয়াতিরও অভিযোগ এনেছেন তিনি।

নির্বাচনি প্রচারণায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম-কানুনের তিরস্কার করে তা পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছিলেন মিলেই। ঘোষণা দিয়েই থেমে থাকেননি তিনি। ২২ ডিসেম্বর সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নও করেছেন। ৩০০টির বেশি ব্যাংকিং নিয়ম পরিবর্তন করে দেশের অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণমুক্ত করেছেন মিলেই।

২০২১ সালে রাজনৈতিক জোট লা লিবারতাদ আভানজা (স্বাধীনতার অগ্রগতি) প্রতিষ্ঠা করেন মিলেই। ওই বছরেই আইনসভা নির্বাচনে বুয়েন্স আইরেসে ১৭ শতাংশ ভোট সংগ্রহ করেন তিনি।

নির্বাচনি প্রচারণায় আর্জেন্টিনার ৪০ বছরের ঋণ সংকট সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মিলেই। সে ঋণ সংকট সমাধানের আশায় তাকে ভোট দিয়েছেন আর্জেন্টাইনরা। প্রাথমিক নির্বাচনে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে জাতিকে অবাক করে দিয়েছেন তিনি। তাছাড়া সরকারের আকার ছোট করা, পেনশন তহবিল হ্রাস করা এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবাকে বেসরকারিকরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মিলেই।

দক্ষিণ আমেরিকায় প্রতিষ্ঠিত গোলাপি জোয়ারকে (বাম রাজনীতি) অস্বীকার করেছেন মিলেই। চীন ও ব্রাজিলের মতো সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোকে অস্বীকার করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মতো রক্ষণশীল দেশগুলোর সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেছেন তিনি।

২০২৩ সালের নভেম্বরের নির্বাচনে ৫৫ দশমিক সাত শতাংশ ভোট পেয়ে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট পদে জয়লাভ করেন মিলেই। এই নির্বাচনে তার বামপন্থি প্রতিপক্ষ ও অর্থমন্ত্রী সার্জিও মাসাকে পরাজিত করেছেন। ৪৪ দশমিক তিন শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন তিনি।

পেরোনিজম (আর্জেন্টিনায় উদ্ভূত বামপন্থি রাজনীতির ধারা)-এর আধিপত্যের অবসান ঘটিয়েছেন মিলেই। এখন তাকে দেশের অর্থনীতি নিয়ে কাজ করতে হবে। কারণ ১৬০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি আর্জেন্টাইনদের ক্লান্ত করে তুলেছে। দেশের ৪০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে জীবনযাপন করেন।

আগস্টে প্রাথমিক নির্বাচনের শুরুতেই নির্বাচনি প্রচারণায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সঙ্গে মিলেই বলেছিলেন, পরজীবী, মূর্খ, অকেজো রাজনৈতিক ব্যক্তির অবসান ঘটাবো। এরা দেশকে ডুবিয়ে দিচ্ছে।

অক্টোবরের প্রাথমিক নির্বাচনে কোনও প্রার্থী সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। নির্বাচনে মাসা পেয়েছিলেন ২১ দশমিক ৪৩ শতাংশ ভোট। এদিকে ২৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন মিলেই।

সেই নির্বাচনে প্রথম ধাপের ফলাফলে অনিয়মের অভিযোগ এনে মিলেই বলেন, এটি ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে। মূলত ট্রাম্প ও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর নির্বাচনি কৌশল অবলম্বন করেছিলেন মিলেই। তবে মিলেইয়ের মনে কোনও ভয় ছিল না। কারণ একটি জরিপে দেখা গেছে, ১৯৮৩ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন তিনি।

বিপুল ভোটে জয়লাভের পরও মিলেই তার নীতি বাস্তবায়ন করতে পারবে কিনা তা অনিশ্চিত। কারণ তার দল নিম্নকক্ষে (চেম্বার অব ডেপুটিজ) ২৫৭টি আসনের মধ্যে মাত্র ৩৮টি এবং সিনেটে ৭২টি আসনের মধ্যে ৭টি আসন পেয়েছেন।

এরইমধ্যে ৩০০টিরও বেশি নিয়ম পরিবর্তন করেছেন মিলেই। যার মধ্যে রয়েছে, ভাড়া নিয়ন্ত্রণ, রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের বেসরকারিকরণ প্রতিরোধ। তবে ১০ দিনের মধ্যে আইন প্রণেতাদের একটি যৌথ কমিটি দিয়ে মূল্যায়ন করে যদি তা প্রত্যাখ্যান করা হয় তবে তার নবনির্বাচিত প্রেসিডেনসিয়াল ডিক্রি বাতিল হবে।

নাইজেরিয়া

আফ্রিকার সবচেয়ে জনবসতিপূর্ণ দেশ নাইজেরিয়া। ২০২৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ক্ষমতা ধরে রেখেছে অল প্রগ্রেসিভ কংগ্রেস (এপিসি)। ৭০ বছর বয়সী লাগোসের সাবেক গভর্নর বোলা টিনুবু জয়ী হয়েছেন। ৮৮ লাখ ভোট পেয়েছেন তিনি। যা নাইজেরিয়ার মোট জনসংখ্যার ৩৬ দশমিক ৬১ শতাংশ। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির (পিডিপি) আতিকু আবুবকর। এই নির্বাচনের আবুবকর পেয়েছেন প্রায় ৭০ লাখ ভোট। এর পরেই ৬১ লাখ ভোট পেয়েছেন লেবার পার্টির পিটার ওবি।

নাইজেরিয়ার এই নির্বাচন খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা। কারণ ভূ-রাজনৈতিকভাবে এর প্রভাব রয়েছে। নাইজেরিয়া প্রতিবেশী দেশ বুরকিনা ফাসো, গিনি, গিনি-বিসাউ ও মালি অভ্যুত্থানের সাক্ষী। এজন্য নাইজেরিয়াকে পশ্চিম আফ্রিকার একটি স্থিতিশীল শক্তি হিসেবে দেখা হয়। এর ধারাবাহিকতায় নাইজেরিয়ায় গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় থাকছে। 

১৯৯৩ সালে সামরিক শাসনের পর থেকে সপ্তমবারের মতো ক্ষমতা ধরে রেখেছে এপিসি। এই নির্বাচনে বিরোধী দলগুলো পুনরায় ভোটের আবেদন করলেও শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছে।

তবে নির্বাচনি প্রচারণা বিতর্কমুক্ত ছিল না। প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মুসলিম হওয়ায় সন্ত্রাস-বিধ্বস্ত বোর্নো রাজ্যের কাশিম শেট্টিমার সঙ্গে টিনুবুর সংঘর্ষ হয়েছিল। নাইজেরিয়ায় এই বিষয়টি ঐতিহ্যগত। জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার জন্য প্রেসিডেন্টের পদ মুসলিম ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনি প্রচারণায় প্রার্থীরা ২১ দশমিক আট শতাংশ মুদ্রাস্ফীতি এবং দেশের ৩৩ শতাংশ মানুষের বেকারত্বের সমস্যা সমাধানের কথা বলেছেন। যেখানে ৪২ দশমিক পাঁচ শতাংশ মানুষ ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী। তাছাড়া বোকো হারাম, অপহরণকারী দল ও অন্যান্য বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহী গোষ্ঠী মোকাবিলা তো আছেই।

তবে এবার বেশিরভাগ তরুণ ভোটাররা পিটার ওবিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চেয়েছেন। কারণ তিনি দস্যুতার অবসান, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগে আর্থিক ঋণ বৃদ্ধি এবং নাইজেরিয়ার সীমান্ত সুরক্ষায় প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

২৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে প্রায় ৯৩৫ লাখ নিবন্ধিত ভোটারের মধ্যে মাত্র ২৪৯ লাখ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। ভোটকেন্দ্রে নির্বাচন কর্মকর্তাদের দেরিতে আসা, প্রতারণা, প্রযুক্তিগত ত্রুটি, সহিংসতা ও ভোটার দমন এবং ভোটারদের উদাসীনতা ইত্যাদিকে ভোট প্রয়োগ না করার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে নাইজেরিয়ার স্বাধীন জাতীয় নির্বাচন কমিশন।

নিউ জিল্যান্ড

২০২৩ সালের ১৪ অক্টোবরের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন লেবার পার্টি পরাজিত হয়েছে। এই দলের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে নিউ জিল্যান্ড আবারও ডানপন্থি রাজনীতির দিকে ঝুঁকেছে। ক্রিস্টোফার লাক্সনক্সের নেতৃত্বে মধ্য-ডানপন্থি নিউ জিল্যান্ড ন্যাশনাল পার্টি ১২৩ আসনের প্রতিনিধি পরিষদে ৪৮টি আসন জিতে একক বৃহত্তম হিসেবে জয়লাভ করেছে। লেবার পার্টি পেয়েছে মাত্র ৩১টি আসন। এদিকে গ্রিন পার্টি ১৫টি আসন পেয়েছে।

নির্বাচনের ফলাফল দেখে মনে হয়েছে, লেবার পার্টিকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। মূলত, সাবেক প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নের বামপন্থি নীতি থেকে বের হয়ে আসতে চেয়েছেন ভোটাররা। পরিবর্তন চেয়েছেন তারা। তাই তাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন তারা। তাছাড়া তার আমলে জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়, মুদ্রাস্ফীতি, সুদের হার বৃদ্ধি পেয়েছে।

এসব কারণে কেবল ডানপন্থি দলগুলো কাছেই নয়, গ্রিন পার্টির মতো অন্যান্য বাম দলগুলোর কাছেও ভোট হারিয়েছে লেবার পার্টি। দ্য গার্ডিয়ানের মতে, ভোটাররা মনে করেন, শিশু দারিদ্র্য হ্রাস, কারাগার সংস্কার বা আদিবাসী অধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি রাখতে ব্যর্থ হয়েছে বামপন্থি দলটি।

যাইহোক, এ বছর জানুয়ারি মাসে আকস্মিকভাবে পদত্যাগ করেন আরডার্ন। তার স্থলাভিষিক্ত হন ক্রিস হিপকিনস। সমর্থন বাড়ানোর জন্য আরডার্নের নীতি প্রয়োগ করতে শুরু করেন হিপকিন্স। সম্পদ কর আরোপ করা, ধর্মীয় গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক বক্তব্যকে নিষিদ্ধ করা, ছাঁটাই বন্ধ করার জন্য একটি নতুন বিমা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা এবং জৈব ব্যবহারের জন্য প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দিন তিনি। তার এসব সিদ্ধান্তে সবাই ধারণা করেছিল, লেবার পার্টি তার প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে আরও ব্যর্থ হচ্ছে।

ভোটারদের লেবার পার্টিকে না চাওয়া বা অনীহাকে পুঁজি করে এবং এসিটি পার্টিকে সঙ্গে নিয়ে লেবার পার্টির ঘাঁটিতে জয়লাভ করেছে ন্যাশনাল পার্টি। ট্যাক্স ও সরকারি খরচ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে জয়লাভ করেছে তারা।

৬২টি আসনের মধ্যে অর্ধেকের কম আসন পেয়েছিল ন্যাশনাল পার্টি। ১১টি আসন এসিটি পাওয়ায় জয়লাভ করতে পেরেছিল তারা। তারা মোট ৫৯টি আসন পেয়েছিল। তারপর ৮টি আসন পাওয়া পপুলিস্ট পার্টি নিউ জিল্যান্ড ফার্স্টের সঙ্গে যোগ দিয়ে নতুন সরকার গঠন করেছে জোটটি।

ফিনল্যান্ড

ইউরোপের সবচেয়ে উদারপন্থি দেশ হলো ফিনল্যান্ড। ২০২৩ সালের নির্বাচনে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এসডিপি) সানা মারিন নেতৃত্বাধীন বর্তমান বামপন্থি জোটকে হারিয়েছে রক্ষণশীল ন্যাশনাল কোয়ালিশন পার্টির (এনসিপি)। এই নির্বাচনের মাধ্যমে ডানপন্থি প্রবণতা দেখলো ইউরোপ।

৫৪ বছর বয়সী পেটেরি অর্পো অতি-ডানপন্থি ফিন্স পার্টি ৪৬টি আসন, সুইডিশ পিপলস পার্টি অফ ফিনল্যান্ড ৯টি আসন এবং ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটস ৫টি আসন জিতেছে। এইভাবে মোট ২০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ১০৮টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করেছে জোটটি।

ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পরিপ্রেক্ষিতে উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থার (ন্যাটো) সদস্য হয়েছে ফিনল্যান্ড। ন্যাটোর সদস্য হওয়ার সিদ্ধান্তকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী সানা মেরিনের জন্য একটি কূটনৈতিক বিজয় হিসেবে দেখছে দেশবাসী। এটি রাশিয়ার মধ্য দিয়ে ইয়েমেন, সোমালিয়া, সিরিয়া ও ইরাক থেকে শরণার্থীদের আসার সুযোগ করে দিয়েছে।

এটিকে পুঁজি করে রিক্কা পুরার নেতৃত্বে অভিবাসনবিরোধী ও ইউরো-সন্দেহবাদী অতি-ডানপন্থি ফিন্স পার্টি অভিযোগ করে বলেছে, শরণার্থীরা দেশের ভেতরে সন্ত্রাসী গ্যাং তৈরি করছে। তাছাড়া কঠোর অভিবাসন আইনের প্রচারণা, ২০৩৫ সালের মধ্যে ফিনল্যান্ডে কার্বন নিরপেক্ষ করা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মারিনকে তিন হাজার ভোটে পরাজিত করেছে জোটটি।

কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলা এবং ফিনল্যান্ডের ন্যাটো সদস্যপদ গ্রহণ সবকিছুই দক্ষতার সঙ্গে করেছেন মেরিন। তার কাজেকর্মে এই শতাব্দীতে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভোট পেয়েছেন ও বিশ্বব্যাপী প্রশংসাও অর্জন করেছেন তিনি।

তার ‘পার্টি ভিডিও’, ক্রমবর্ধমান সরকারি ঋণ এবং জীবনযাত্রার ব্যয়ের কারণে বিতর্কিতও হয়েছেন মেরিন। এদিকে ৩৪ বছর বয়সে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কারণে মেরিনকে মাঝেমধ্যেই অনভিজ্ঞতার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

ফিনিশ অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য সরকারি ব্যয় ছয় বিলিয়ন ইউরো কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন অর্পো। প্রথম দিকে ভোটে উচ্ছ্বাসও দেখেছিলেন তিনি। কিন্তু নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে তা সংকুচিত হয়ে যায়।

২০১৯ সালের নির্বাচনের তুলনায়, এনসিপি তিন দশমিক আট শতাংশ ভোট পেয়ে ১০টি আসন লাভ করেছে, ফিনস দুই দশমিক ছয় শতাংশ ভোট পেয়ে ৭টি আসন লাভ করেছে যেখানে এসডিপি দুই দশমিক দুই শতাংশ ভোট পেয়ে ৩টি আসন লাভ করেছে।

অর্পো ফিন্স বা এসডিপির সঙ্গে সরকার গঠনের করা কথা চিন্তা করে রেখেছিলেন। কারণ ব্যবসাপন্থি রক্ষণশীল দল এনসিপির সঙ্গে এসডিপির বাজেট ব্যয় পার্থক্য রয়েছে। এদিকে ফিন্সের সঙ্গে রয়েছে অভিবাসন বিষয়ে পার্থক্য। অবশেষে নির্বাচনের ফলাফলের দুই মাস পরে চারদলীয় জোট সরকার গঠনের জন্য ফিন্সকে বেছে নিয়েছিলেন অর্পো।

পোল্যান্ড

২০২৩ সালের ১৫ অক্টোবরে বিপরীত প্রবণতায় পোলিশ পার্লামেন্ট নির্বাচন হয়েছে। এই নির্বাচনে একক-বৃহত্তর দল হওয়া সত্ত্বেও মাতেউস মোরাওয়েকির নেতৃত্বাধীন অতি-ডানপন্থি সরকার ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেনি।

মোরাওয়েকির আইন ও বিচার (পিআইএস) পার্টির নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন ইউনাইটেড রাইট জোটকে ক্ষমতাচ্যুত করে প্লাটফর্মা ওবিওয়াটেলস্কা (পিও) ডোনাল্ড টাস্কের নেতৃত্বে বিরোধী দল জয়লাভ করেছে। এই নির্বাচনে পিআইএস ১৯৪টি আসন জিতেছে। অপর দিকে পোল্যান্ডের ৪৬০ আসনের মধ্যে সিভিক কোয়ালিশন পেয়েছে ২৪৮টি আসন। এদের মধ্যে পিও ১৫৭টি আসন, থার্ড ওয়ের ৬৫টি আসন এবং বাম ২৬টি আসন জিতেছে।

নির্বাচনকে সামনে রেখে পোল্যান্ডের সেজম রাজ্য কমিশন প্রতিষ্ঠার অনুমতি দিয়ে একটি আইন পাস করেছে। যা ২০০৭-২০২২ সালে পোল্যান্ডের অভ্যন্তরীণ নীতিতে রুশ প্রভাব তদন্ত করবে। ‘লেক্স টাস্ক’ নামে পরিচিত আইনটি রাশিয়ার হস্তক্ষেপে সহায়তা করার সন্দেহে যেকোনও ব্যক্তিকে প্রতিহত করার ক্ষমতা রাখে। আইনটিকে অসাংবিধানিক বলে মনে করেন অনেকেই। ধারণা করা হয়েছে, এটি টাস্ককে নির্বাচনী প্রতিযোগিতা থেকে সরানোর কৌশল।

নির্বাচনি প্রচারণায় ক্ষমতাসীন সরকারের অসাংবিধানিক আইনের বিরুদ্ধে, গর্ভপাত, এলজিবিটি অধিকার এবং সামাজিক আবাসনের বিরুদ্ধে কয়েক হাজার ভোটার নিয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন টাস্ক।

প্রতিবেশী দেশ তুরস্ক ও হাঙ্গেরির মতো পোল্যান্ডে স্বৈরাচার, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে হতাশা প্রকাশ করেছেন তিনি। পিআইএস সরকারের নয় বছরের পোল্যান্ডের ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার আশঙ্কা ছিল। কারণ সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিরোধিতা করে বেশ কয়েকটি অগণতান্ত্রিক আইন পাস করেছে।

পিআইএস ৩৫ দশমিক চার শতাংশ ভোট পেয়েছে। তারপরে সিভিক কোয়ালিশন ৩০ দশমিক সাত শতাংশ ভোট পেয়েছে। থার্ড ওয়ে জিতেছে ১৪ দশমিক চার শতাংশ ভোট। এদিকে বাম আট দশমিক ছয় শতাংশ ভোট পেয়েছে। ডানপন্থি কনফেডারেশন সাত দশমিক দুই শতাংশ ভোট পেয়েছে। সেজমে পর্যাপ্ত আসন লাভের পাশাপাশি ৩৪টি আসনের তুলনায় ৬৬টি আসনও জিতেছে। শক্তিশালী উচ্চকক্ষের নিয়ন্ত্রণও নিয়েছিল তাদের।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ডোনাল্ড টাস্ক নির্বাচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোভিড-১৯ মহামারি পুনরুদ্ধার তহবিলে বরাদ্দ করা বিলিয়ন ইউরো স্থগিত করার বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করতে পারে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

পিআইএস-সমর্থিত প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ ডুডা থাকার কারণে টাস্কের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, ইইউ-পন্থি নীতি, মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস এবং সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ডুডা ইতোমধ্যেই নতুন সরকারের ব্যয় বিলে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেছেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্য দ্য হিন্দু অবলম্বনে। ভাষান্তর করেছেন সাদ্দাম হোসেন।

/এসএইচএম/এসএসএস/
সম্পর্কিত
কলকাতা স্টেশনে অর্থ পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার বাংলাদেশি
ইইউ দেশগুলোর সম্পর্ক জোরদারে মে মাসে জার্মানি সফরে যাচ্ছেন ম্যাক্রোঁ
কম্বোডিয়ায় অস্ত্রাগার বিস্ফোরণে নিহত ২০
সর্বশেষ খবর
কাপ্তাই হ্রদে নাব্য সংকট, ৫ উপজেলার যোগাযোগ বন্ধ
কাপ্তাই হ্রদে নাব্য সংকট, ৫ উপজেলার যোগাযোগ বন্ধ
কলকাতা স্টেশনে অর্থ পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার বাংলাদেশি
কলকাতা স্টেশনে অর্থ পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার বাংলাদেশি
তীব্র গরমে নির্বাচনি প্রচারণায় আ.লীগ নেতার মৃত্যু
তীব্র গরমে নির্বাচনি প্রচারণায় আ.লীগ নেতার মৃত্যু
দেশে আগ্রাসী শাসন চলছে: দিলারা চৌধুরী
দেশে আগ্রাসী শাসন চলছে: দিলারা চৌধুরী
সর্বাধিক পঠিত
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু