হোয়াইট হাউজে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করতে এসে উলটো অপদস্থ হয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা। বুধবার (২১ মে) ওই সাক্ষাতের কিছু সময় পার হতেই কয়েকটি সংবাদের প্রিন্ট কাগজ এবং একটি ভিডিও দেখিয়ে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ গণহত্যা চলছে। তবে এই বৈঠকের পরদিন রয়টার্সের ফ্যাক্ট চেকে জানা গেল, ওই ভিডিও তাদেরই করা এবং সেটি ছিল আসলে কঙ্গোতে হত্যাযজ্ঞের ঘটনা।
রয়টার্সের ফ্যাক্ট চেকিং দলের দাবি অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারিতে ওই ভিডিও ধারণ করা হয়। ঘটনাস্থল ছিল কঙ্গোর গোমা শহর, যেখানে রুয়ান্ডা সমর্থিত এম ২৩ সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চলেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, সহায়তা কর্মীরা নিহতদের সরিয়ে নিচ্ছেন।
অথচ রামাফোসাকে এই ভিডিও দেখিয়ে অভিযোগ করে ট্রাম্প বলেন, এগুলো সব (দক্ষিণ আফ্রিকার) শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের মরদেহ।
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কিছুটা টানাপড়েন চলছে। এই অবস্থার উন্নতির মানসেই হোয়াইট হাউজে গিয়েছিলেন রামাফোসা। শুরুতেই বলেন, তিনি কেবল বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা করতে চান। তবে ট্রাম্প তার স্বভাবসুলভ কথার মারপ্যাঁচে অভিযোগ তোলেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ নিধন চলছে এবং সরকার নতুন ভূমি আইনের মাধ্যমে শ্বেতাঙ্গদের ভূমি কেড়ে নিচ্ছে। নিধনযজ্ঞের প্রমাণ হিসেবেই ওই ভিডিও দেখান মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
ট্রাম্প যে ওয়েবসাইট থেকে ভিডিওটি নিয়েছেন, সেটি হলো আমেরিকান থিংকার (মার্কিন চিন্তাবিদ) নামক একটি অনলাইন ভিত্তিক সাময়িকী। সাময়িকীর ওই পোস্টে ভিডিওর ক্রেডিটে লেখা ছিল ইউটিউব স্ক্রিন গ্র্যাব। তবে সংযুক্ত লিংকটি ছিল একটি সংবাদের, যারা আবার রয়টার্সকে ক্রেডিট দিয়েছিল।
এই ঘটনায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে আমেরিকান থিংকারের ম্যানেজিং এডিটর আন্দ্রেয়া উইডবার্গ রয়টার্সকে বলেছেন, ভুল মূলত ট্রাম্পের দিক থেকে হয়েছে, কেননা তিনি ছবি শনাক্তে ভুল করেছেন। তবে ওই প্রতিবেদনে রামাফোসা সরকারের ব্যর্থতা স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানাতে রয়টার্সের অনুরোধে হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে সাড়া দেওয়া হয়নি।
ওই ভিডিওটি করেছিলেন রয়টার্সের সাংবাদিক ডিজাফার আল কাতানি। তার ভিডিওকে দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ নিধন হিসেবে প্রচার করার খবর পেয়ে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
ভিডিও সংগ্রহের দিনের কথা স্মরণ করে আল-কাতানি বলেছেন, সেদিন সাংবাদিকদের প্রবেশ করা খুবই দুরূহ ব্যাপার ছিল। আমি সরাসরি সশস্ত্র গোষ্ঠী এম ২৩-এর সঙ্গে কথা বলি। তাদের সঙ্গে দেনদরবার করে প্রয়োজনীয় ফুটেজ সংগ্রহের অনুমতি নেওয়া হয়। আর কঙ্গোর এই ভিডিও দেখিয়ে রামাফোসাকে ট্রাম্প বলতে লাগলেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ নিধন চলছে।
এর আগে, ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে হোয়াইট হাউজে এনে তুলোধুনো করেছেন ট্রাম্প আর তার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। এছাড়াও, একাধিকবার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানকে হোয়াইট হাউজে ডেকে নিয়ে বিভিন্নভাবে অপদস্থ করেছেন তিনি। সর্বশেষ রামাফোসার ঘটনায় বিশ্লেষকরা বলছেন, এরপর ট্রাম্পের সঙ্গে সহজে আর কেউ দেখা করতে চাইবেন বলে মনে হয় না।
তবে, জেলেনস্কির মতো ট্রাম্পের প্ররোচনায় পা দিয়ে মেজাজ হারাননি রামাফোসা। তিনি শান্তভাবে বলেন, তার দেশে শ্বেতাঙ্গ নিধনের মতো কোনও ঘটনা ঘটছে না।
তিনি উলটো পেশাদারিত্বের সঙ্গে কটাক্ষ করে বলেন, আমি দুঃখিত, আপনাকে একটা জেট বিমান উপহার দিতে পারলাম না।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি কাতারের কাছ থেকে একটি বিমান উপহার পেয়েছেন ট্রাম্প। সমালোচকরা বলছেন, একজন রাষ্ট্রপ্রধানের পদে আসীন ব্যক্তির জন্য এভাবে উপহার নেওয়াটা দৃষ্টিকটু এবং উৎকোচ গ্রহণের শামিল।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স