প্রতি বছর ৯/১১-এর স্মরণসভায় যখন সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের আত্মীয়স্বজন একত্রিত হন, তখন একটি হৃদয়বিদারক বাক্য প্রতিধ্বনিত হয়: ‘আমি কখনও তোমার সঙ্গে দেখা করতে পারিনি।’
এটি প্রজন্মের পরিবর্তনের প্রতিফলন। যেখানে আত্মীয়রা প্রতি বছর ৯/১১-এ নিহতদের নাম পাঠ করেন। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আল-কায়েদার হামলায় চারটি বিমানে করে হামলা চালিয়ে প্রায় তিন হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল, যাদের মধ্যে অনেকেরই নাম নতুন প্রজন্মের সদস্যদের মাধ্যমে উচ্চারিত হয়। গত বছর ১৪০ জনের বেশি পাঠকের মধ্যে ২৮ জনই ছিলেন সেসব শিশুরা, যারা হামলার পর জন্মগ্রহণ করেছে। এবারের স্মরণসভায়ও তরুণদের অংশগ্রহণ প্রত্যাশিত।
অনেক পাঠক নিহতদের সন্তান, যাদের মা অন্তঃস্বত্ত্বা ছিলেন, আবার অনেকেই নিহতদের ভাগনে-ভাগনি বা নাতি-নাতনি। তারা গল্প, ছবি ও দায়িত্ববোধ উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছে। এটি এমন এক ঐতিহ্য, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চলতে থাকবে, যেন ৯/১১-এর ঘটনা এবং তাতে হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জনদের স্মৃতি কখনও ম্লান না হয়।
১৩ বছর বয়সী অ্যালান আলডিকি বলেন, ‘এটি যেন মশাল হস্তান্তরের মতো।’ তিনি গত দুই বছর ধরে তার দাদাসহ আরও কয়েকজনের নাম পড়েছেন এবং বুধবারও তা করার পরিকল্পনা রয়েছে। অ্যালান তার দাদা অ্যালান তারাসিয়েভিচের স্মৃতিচিহ্নগুলো নিজের ঘরে সংরক্ষণ করেন, যিনি একজন দমকলকর্মী ছিলেন।
গত বছর তিনি বলেন, ‘আমি দাদার সম্পর্কে এত কিছু শুনেছি যে মনে হয় তাকে চিনি, কিন্তু তবুও, আমি সত্যিই তাকে চেনার সুযোগ পেলে ভালো লাগত।’
অ্যালান নাম পড়ার দায়িত্ব নিয়েছেন কারণ এটি তাকে তার দাদার সঙ্গে আরও কাছাকাছি যাওয়া বোধ জাগায়। তিনি আশা করেন যে একদিন তার সন্তানরাও এতে অংশ নেবে। তার কথায়, ‘তাদের শেখানো একটি সম্মানের বিষয়, কারণ এভাবে তুমি তাদের উত্তরাধিকার ও কী ভুলে যেতে হবে না তা জানাতে পারা যায়।’
৯/১১ স্মরণসভায় নিহতদের নাম পাঠ করা একটি ঐতিহ্য। প্রতিটি পরিবার সদস্যরা লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে নিহতদের নাম পাঠ করেন। পাঠকরা প্রায়শই তাদের প্রিয়জনের সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ও আবেগঘন কথা বলেন।
১৭ বছর বয়সী কেপ্রি ইয়ারোস গত বছর তার নিহত চাচা নিউ ইয়র্কের দমকলকর্মী ক্রিস্টোফার মাইকেল মজিলোর স্মৃতিচারণ করে বলেছেন, আমি প্রায়ই ভাবি, তিনি যদি এখনও এখানে থাকতেন, তাহলে তিনি আমার অন্যতম সেরা বন্ধু হতেন, আমার সঙ্গে কলেজ খোঁজা, মা-বাবার সঙ্গে মজা করে সময় কাটাতেন।
তিনি এবার দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠানে নাম পড়েছেন। এই বিষয়ে বলেন, আমার জন্য এটি অনেক বড় বিষয় যে আমি আমার চাচার নাম জীবিত রাখতে পারছি এবং পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এর গুরুত্ব তুলে ধরতে পারছি।
সূত্র: এপি