X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

একদিকে ‘ভারত জোড়ো’ অন্যদিকে ইন্ডিয়া জোট ছোড়ো!

রক্তিম দাশ, কলকাতা
২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১৭:৩০আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১৭:৩৮

ভারত জোড়ো যাত্রায় বেরিয়েছেন ইন্ডিয়া জোটের প্রধান মুখ রাহুল গান্ধী। তবে দেশকে জুড়তে গিয়ে খালি হয়ে যাচ্ছে তার জোট। একদিকে ভারত জোড়ো অন্যদিকে ইন্ডিয়া ছোড়ো—দুটিই চলছে সমানতালে। অন্তত তৃণমূল, আম আদমি পার্টি (আপ)-এরপর এবার জেডি (ইউ) নেতা নীতীশ কুমারের পদক্ষেপ এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে।

কংগ্রেসের নেতৃত্বে ২৮টি দল নিয়ে ইন্ডিয়া জোটের পথ চলা শুরু হয়। তবে হারাধনের ১০ টি ছেলের মতো জোটের দলের সংখ্যা কমতে কমতে আর মাত্র ৫টি টিকে আছে। লোকসভা ভোট যতই এগিয়ে আসছে এই সংখ্যাটিও টিকে থাকবে কি-না সে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। হারাধনের এই ৫টি ছেলের মতো তামিলনাড়ুর ডিএমকে, মহারাষ্ট্রের শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকুরের শিবির), কেরালার সিপিএম, বিহারের আরজেডি এবং উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পার্টি জোটটিতে থাকবে কি-না, নাকি তারাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কেজরিওয়ালের মতো একলা চলো নীতি অনুসরণ করে  কংগ্রেসের বিরুদ্ধেই প্রার্থী দেবে তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বিহারের আরজিডি এখনও ইন্ডিয়া জোটে টিকে থাকার অন্যতম কারণ মুসলিম ভোট ব্যাংক। তারা মনে করছেন, জোট থেকে এই মুহূর্তে চলে গেলে এই ভোট ব্যাংকে ফাটল ধরতে পারে। তাই বিকল্প খোঁজার চেষ্টায় রয়েছেন। দক্ষিণের দল ডিএমকের জাতীয় রাজনীতিতে তেমন কোনও প্রভাব নেই। তামিলনাড়ুতেই তারা সীমাবদ্ধ। আর যোগীর দাপটে উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টির অবস্থা এখন নাজুক। তাদেরও ভরসা উত্তরপ্রদেশের মুসলিম ভোট ব্যাংক। কংগ্রেসের সঙ্গে ১১টি আসন দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেও দলটি ইন্ডিয়া জোটকে ক্ষমতা দখলের ক্ষেত্রে কতটা সাহায্য করতে পারবে এ নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। বিরোধী জোটের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল এবং পাঞ্জাব ও দিল্লিতে ক্ষমতায় থাকা আপ যে সমর্থন দিতে পারত ইন্ডিয়া জোটকে তা এখন আর নেই। শুধু মুসলিম ভোট আর দক্ষিণের কয়েকটা আসন নিয়ে দিল্লির মসনদ দখলের পরিকল্পনাকে অলীক বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। কেননা, নীতীশের পক্ষত্যাগ দেশবাসীর কাছে এই বার্তাটি পরিষ্কার করে দিয়েছে, ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে বিরোধীহীন লড়াইয়ের মুখে বিজেপি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শুরুতে দেশজুড়ে মোদি বিরোধী নেতাদের নিয়ে সোনিয়া ও রাহুলরা ইন্ডিয়া জোট নিয়ে যতটাই আশাবাদী ছিলেন, আঞ্চলিক দলগুলোর সঙ্গে অনৈক্য, আসন বণ্টন নিয়ে মীমাংসা না হওয়ার মতো বিষয়গুলো ধীরে ধীরে জোটটিকে শেষ করে দিতে থাকে।

আঞ্চলিক দলগুলোর আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে কংগ্রেস। বড় শরিক হিসেবে দাদাগিরির অভিযোগ উঠেছে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। পশ্চিমবঙ্গে রাহুলের ভারত জোড়ো যাত্রা প্রবেশের ঠিক একদিন আগে মমতা বলেছিলেন, রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এ যাত্রা নিয়ে মমতাকে কিছু জানানো হয়নি বলে অভিযোগও উঠেছে। একইভাবে এই যাত্রা বিহারে পৌঁছনোর এক দিন আগেই ইন্ডিয়া জোট থেকে বেরিয়ে বিজেপির কাছে ফিরে যায়  জেডিইউ। আপও ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গে নেই বলে আগেই জানিয়েছিল। ফলে দেশটিতে মোদি বিরোধী বলে আদৌ কোনও জোট রয়েছে কি-না যেটিকে দেশের মানুষ ভরসা করতে পারে বার বার সে প্রশ্নই উঠছে।

জাতপাতের ভিত্তিতে গেরুয়া বলয়ে যে রাজনীতি করে এতদিন আঞ্চলিক দলগুলো ও কংগ্রেস ক্ষমতায় আসত সেই ভোট ব্যাংকেও থাবা বসিয়েছে বিজেপি। তপশিলি জাতি ও উপজাতি ভোট ব্যাংক ক্রমশ ক্ষমতাসীন দলটির দিকে চলে যাচ্ছে। অন্তত সাম্প্রতিক মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়ের বিধানসভা ভোট তা-ই প্রমাণ করেছে। একইভাবে উত্তরপ্রদেশ ও বিহারেও এই ভোট ব্যাংক গত বিধানসভা ভোটেই মত পাল্টে বিজেপির দিকে চলে গেছে। শুধু তপশিলি বা উপজাতি ভোটই নয়, সংখ্যালঘু ভোট যেগুলো এতদিন বিরোধীদের একচেটিয়া বলে মনে করা হতো তাতেও সুকৌশলে ফাটল ধরিয়েছে গেরুয়া শিবির। গেরুয়া বলয়ে পশমন্দা মুসলিমদের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচির উদ্যোগ নিয়ে তাদের বেশিরভাগ অংশকে নিজেদের দিকে টানতে সক্ষম হয়েছে বিজেপি। ২০১৯ লোকসভা ভোটের ফলাফল এবং গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ ও কর্ণাটকের বিধানসভা ভোটের ফলাফলে মুসলিমদেরকেও  বিজেপিকে ভোট দিতে দেখা গেছে।

উল্লেখ্য, দেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে পশমন্দা মুসলিমরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। এছাড়া খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বেশ কিছু গোষ্ঠীর কাছেও মোদি পৌঁছে গেছেন। ফলে গোয়াসহ দক্ষিণের বেশ কয়েকটি রাজ্যে এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে।

ইন্ডিয়া ছোড়ো শব্দটি শুধু আঞ্চলিক দলগুলোর কাছেই নয় গত কয়েকদিনে কংগ্রেসের অভ্যন্তরেও প্রভাব ফেলেছে। সম্প্রতি রামমন্দির উদ্বোধনে কংগ্রেসের অনুপস্থিতির পাশাপাশি শ্রীরাম নিয়ে করা মন্তব্যকে দলের একটা অংশ ভালোভাবে নেয়নি। এ নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ ঝেড়ে দলও ছেড়েছেন বেশ কয়েকজন নেতা। এ ভাঙনকে আটকাতে পারছেন না সোনিয়া ও রাহুলরা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাহুল গান্ধী নরেন্দ্র মোদি ও আরএসএসের বিরুদ্ধে যতই চিৎকার করুক তাতে কোনও লাভ হবে না। কেননা, অন্তর্দ্বন্দ্বে  ক্রমশ ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়ছে শতাব্দী প্রাচীন এ দলটি। ঢাল, তলোয়ারহীন নিধিরাম সর্দার হয়ে মোদির বিরুদ্ধে রাহুল যে কোনোভাবে জিততে পারবেন না তা এখন দিনের আলোর মতো পরিষ্কার।

চব্বিশ সালের লোকসভা নির্বাচনের আবহে এককভাবে যে মোদির বিরুদ্ধে লড়াই করা যাবে না তা অনুধাবন করেই আঞ্চলিক দলগুলোকে নিয়ে ইন্ডিয়া জোট গড়ে ছিল কংগ্রেস। তবে শেষ হওয়া বেশ কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা ভোটে নিজেদের মধ্যে আসন সমঝোতাই করতে পারেনি এই জোট। এর পরিবর্তে একে অপরের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছে দলগুলো। জোটের নেতারা দিল্লিতে বিজেপির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুললেও ভোটের মাঠে তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে বিরোধী জোটের এই ফাটলের পুরো সুযোগ নিয়ে বাজিমাত করেছে বিজেপি। আবার এনডিএ জোটকেও ধরে রেখেছে এবং নীতিশের মতো পুরনো সঙ্গীকে ফের জোটে ফিরিয়ে বিহারে ক্ষমতায় চলে এসেছে।

এদিকে, রামমন্দির উদ্বোধন করে হিন্দু ভোটের মেরুকরণের পাশাপাশি মুসলিম, দলিত সব ভোট ব্যাংককে বাড়িয়ে নরেন্দ্র মোদি যখন তৃতীয় মেয়াদে দিল্লির মসনদের স্বপ্ন দেখছেন তখনই ভারত জোড়োর পরিবর্তে ইন্ডিয়া আর কংগ্রেস ছোড়োর ধাক্কায় সোনিয়া ও রাহুলদের অবস্থা এখন ক্রমশও শাঁখের করাতে মতো হয়ে যাচ্ছে।

/এএকে/
সম্পর্কিত
১৭ রোগীকে হত্যার দায়ে যুক্তরাষ্ট্রে এক নার্সকে ৭৬০ বছরের কারাদণ্ড
ক্রিমিয়ায় মার্কিন নির্মিত ৪টি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিতের দাবি রাশিয়ার
পশ্চিমবঙ্গ জয়ে এবার মোদির ত্রিপুরী সেনা!
সর্বশেষ খবর
যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কি দ্বিমুখিতা এবং আত্মপ্রতারণা নয়?
যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কি দ্বিমুখিতা এবং আত্মপ্রতারণা নয়?
চার দিনের সফরে নেদারল্যান্ডস যাচ্ছেন কৃষিমন্ত্রী
চার দিনের সফরে নেদারল্যান্ডস যাচ্ছেন কৃষিমন্ত্রী
‘জলবায়ুর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সবুজায়ন ও জলাধার রক্ষার বিকল্প নেই’
‘জলবায়ুর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সবুজায়ন ও জলাধার রক্ষার বিকল্প নেই’
চামড়া খাতে ন্যূনতম মজুরি ২২ হাজার ৭৭৬ টাকা প্রস্তাব
চামড়া খাতে ন্যূনতম মজুরি ২২ হাজার ৭৭৬ টাকা প্রস্তাব
সর্বাধিক পঠিত
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে
বিসিএসে সফলতায় এগিয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা
বিসিএসে সফলতায় এগিয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা
গাজীপুরে ট্রেন দুর্ঘটনা: স্টেশন মাস্টারসহ ৩ জন বরখাস্ত
গাজীপুরে ট্রেন দুর্ঘটনা: স্টেশন মাস্টারসহ ৩ জন বরখাস্ত
চট্টগ্রামে যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
চট্টগ্রামে যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!