টানাপোড়েন সত্ত্বেও ভারতের কাছে বেলআউট চাইছে মালদ্বীপ। দ্বীপরাষ্ট্রটির প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু বলেছেন, তিনি আত্মবিশ্বাসী যে অর্থনৈতিক এই সংকটে ভারত তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে। গত বছরের শেষ দিকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর, এই প্রথম আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় সফরে ভারত আসছেন তিনি। রবিবার (৬ অক্টোবর) তার দিল্লি পৌঁছার কথা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, পাঁচ দিনের সফরে ভারতের কাছে কয়েকশ’ মিলিয়ন ডলারের বেলআউট প্যাকেজের জন্য অনুরোধ জানাবেন মইজ্জু।
গত মাসে (সেপ্টেম্বর) মালদ্বীপের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল প্রায় ৪৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই অর্থ দিয়ে দেড় মাসের আমদানির খরচ মেটানো সম্ভব। এমন পরিস্থিতিতে ভারত ‘বেল আউট’ দিলে তা মালদ্বীপের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে শক্তিশালী করবে।
‘বেল আউট’ হচ্ছে দেনার দায়ে বা মূলধন সংকটে পড়ে দেউলিয়া হওয়ার পথে কোনো দেশ বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্র বা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের তরফে আর্থিক সহায়তা করা।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, নির্বাচনের সময় ‘ভারত বিদায়’ নীতির প্রচারণা চালিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন মইজ্জু। আর এখন তার এই ভারত-মুখী সুর সম্পর্কে কি বলছেন তিনি? বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘ভারত আমাদের আর্থিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত। আমাদের অন্যতম বৃহত্তম উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে তারা সর্বদা আমাদের বোঝা হ্রাস করতে, আমাদের সামনে আসা চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার জন্য আরও ভাল বিকল্প এবং সমাধান খুঁজে পেতে প্রস্তুত।’
ভারত-বিরোধী প্রচার নিয়ে সরাসরি কোন কথা না বলে তিনি জানিয়েছেন, ‘আমরা আত্মবিশ্বাসী যে, যে কোনও মতবিরোধ উন্মুক্ত আলোচনা এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে।’
গত মাসে আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থা মুডি’স মালদ্বীপের ক্রেডিট রেটিং (ঋণমান) কমিয়ে দেয়। সংস্থাটি বলে,মালদ্বীপের ঋণখেলাপি হওয়ার ঝুঁকি বাস্তবিক অর্থে বেড়েছে। মুডি বলেছে, ‘(বিদেশি) রিজার্ভ সরকারি বাহ্যিক ঋণ পরিষেবার প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলারের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে কম এবং ২০২৫ ও ২০২৬ সালে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি।’
মুইজু কোথা থেকে এই রিজার্ভ সংকট মোকাবিলার জন্য অর্থ খুঁজে পাবেন তা স্পষ্ট নয়।
ইতিমধ্যে তুরস্ক ও চীন সফর করেছেন মুইজ্জু। বিশেষ করে গত জানুয়ারিতে তার চীন সফরকে নয়াদিল্লির প্রতি মালদ্বীপের একটি বড় ধরনের কূটনৈতিক অবজ্ঞাপূর্ণ আচরণ হিসেবে দেখা হয়েছিল। কারণ, মালদ্বীপের পূর্ববর্তী নেতারা নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম বিদেশ সফরের জন্য নয়াদিল্লিকেই বেছে নিয়েছিলেন।
ভারত মহাসাগরে অবস্থিত প্রায় এক হাজার ২০০টি প্রবালদ্বীপ নিয়ে মালদ্বীপ গঠিত। দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ৫ লাখ ২০ হাজার। ছোট দ্বীপরাষ্ট্রটি তার বেশির ভাগ খাদ্য,অবকাঠামো নির্মাণ ও স্বাস্থ্যসেবার জন্য বিশাল প্রতিবেশী দেশ ভারতের ওপর নির্ভরশীল।
এ কারণেই তার দিল্লি সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ ভারত এরই মধ্যে মালদ্বীপের বিভিন্ন অবকাঠামো এবং উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ১.৪ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা দিয়েছে।