‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র লক্ষ্যে এবার আরও বড় লাফ মারলো ভারত। এমনিতে যত সময় এগোচ্ছে ততই জল, স্থল ও আকাশে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে ভারত। সে বিদেশ হোক কিংবা ভারতের বুকে তৈরি করা হোক নিজেদের অস্ত্র ভাণ্ডারকে আরও মজবুত করতে বছরে পর বছর ধরে কাজ করেই চলেছে মোদি সরকার। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটলো না। এবার ভারতে তৈরি হবে স্পেনের বাহুবলি হিসেবে খ্যাত এয়ারবাস সি-২৯৫।
এয়ারবাসের সি-২৯৫ একটি সামরিক পরিবহন উড়োজাহাজ। এর জন্য গুজরাটের ভদোদরায় টাটা এয়ারক্রাফট কমপ্লেক্স প্রস্তুত হয়ে গেছে। সোমবার ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই বেসরকারি খাতের প্ল্যান্টের উদ্বোধন করেন। তার সঙ্গে ছিলেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ। ভারতের সি-২৯৫ প্রোগ্রামে মোট ৫৬টি উড়োজাহাজ অন্তর্ভুক্ত থাকবে, যার মধ্যে ১৬ টি সরাসরি এয়ারবাস সরবরাহ করবে ভারতকে। বাকি ৪০টি ভারতে তৈরি হবে। এই ৪০টি সি-২৯৫ বিমান তৈরির দায়িত্ব থাকবে ‘টাটা অ্যাডভান্সড সিস্টেমস লিমিটেড’-এর।
সি-৩৯৫ প্রকল্পটি ভারতের জন্য ঐতিহাসিক। কারণ এই প্রথম কোনও বেসরকারি সংস্থা ভারতে একটি সম্পূর্ণ সামরিক উড়োজাহাজ তৈরি করবে। উল্লেখ্য, ২০২২ সালের অক্টোবরে, প্রধানমন্ত্রী মোদি ভদোদরায় ফাইনাল অ্যাসেম্বলি লাইন (এফএএল)-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। টাটা এয়ারক্রাফট কমপ্লেক্স (টিএসি) বেসরকারি খাতের প্রথম এফএএল হবে যা দেশে সামরিক বিমান তৈরি করতে চলেছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় দফতর সূত্রে খবর, টাটা এয়ারক্রাফ্ট কমপ্লেক্সের উৎপাদন থেকে শুরু করে সংযোজন, পরীক্ষা ও ডেলিভারি ও রক্ষণাবেক্ষণ পর্যন্ত বিস্তৃত কাজ রয়েছে। টাটা ছাড়াও অনেক সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা সি-২৯৫ কর্মসূচিতে তাদের ভূমিকা পালন করবে। ইন্ডিয়া ইলেক্ট্রনিক্স লিমিটেড এবং ইন্ডিয়া ডায়নামিক্স লিমিটেডের মতো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলো এই কর্মসূচির অংশ।
এয়ারবাস সি-২৯৫ একটি মিডিয়াম ট্যাকটিক্যাল ট্রান্সপোর্ট বিমান। কার্গো পরিবহন হোক কিংবা সেনা জওয়ানদের বহনের জন্য এর জুড়ি মেলা ভার। বিমানটি পরিবহন, প্যারাসুট ড্রপিং, ইলেকট্রনিক সিগন্যাল ইন্টিলিজেন্স, মেডিক্যাল ইভাকুয়েশন (এমইডিএভিএসি) এবং সামুদ্রিক টহলসহ বিভিন্ন মিশনের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
বিমানটি ৯ টন কার্গো বা ৭১ জন কর্মী বহন করতে সক্ষম। এটি দুটি প্র্যাট অ্যান্ড হুইটনি টার্বোপ্রপ ইঞ্জিন দ্বারা চালিত। এটি ৩০ হাজার ফুট উচ্চতা পর্যন্ত যেতে পারে। এটি ঘণ্টায় ৪৮১.৫২ কিলোমিটার ক্রুজ গতিতে উড়তে পারে। এয়ার-টু-এয়ার রিফুয়েলিং এর মাধ্যমে করা যেতে পারে, এই সিস্টেমটি ফিক্সড-উইং বিমান এবং হেলিকপ্টারগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই এয়ারবাস সি-২৯৫ সিএএসএ সি-২৯৫ নামেও পরিচিত।
৯০-এর দশকে প্রথম তৈরি হয় সি-২৯৫। এটি ১৯৯৭ সালের ২৮ নভেম্বর প্রথম উড্ডয়ন করে। ১৯৯৯ সালে, স্প্যানিশ এয়ার ফোর্স সি-২৯৫ এর প্রথম গ্রাহক ছিল। যার পরে মিসর, পোল্যান্ড ও ভারতসহ অনেক দেশ এতে আগ্রহ দেখায়। প্রথম বিমানটি ২০২৬ সালের মধ্যে সরবরাহ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ৪০টি বিমানের সরবরাহ ২০৩১ সালের আগস্টের মধ্যে শেষ হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।