শ্রীলঙ্কার বামপন্থি প্রেসিডেন্ট আনুরা কুমারা দিসানায়েকে ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতার বার্ষিকী উপলক্ষে দেওয়া ভাষণে দেশটির ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ ইমেজ বদলানোর অঙ্গীকার করেছেন। মার্কসবাদী হিসেবে পরিচিত দিসানায়েকে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান থেকে ঐতিহ্যবাহী জাঁকজমকপূর্ণ সামরিক কুচকাওয়াজ ও বিমান প্রদর্শনী বাদ দিয়েছেন। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়েছে। যা সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য বিলাসবহুল ব্যয় কমানোর তার প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, আমরা শ্রীলঙ্কার বৈশ্বিক ইমেজকে দুর্নীতিগ্রস্ত শাসনের দেশ হিসেবে পরিচিতি থেকে বদলানোর জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অসংখ্য বাধা এবং অতীতের দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক ব্যবস্থার গভীরভাবে প্রোথিত ত্রুটিগুলো সত্ত্বেও, নাগরিকদের সম্মিলিত ইচ্ছায় গঠিত জনগণের সরকার অবিচলিতভাবে এগিয়ে চলেছে।
দিসানায়েকের সরকার গত বছরের শেষের দিকে দ্বিপক্ষীয় ও বেসরকারি ঋণদাতাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিলম্বিত ঋণ পুনর্গঠন চুক্তি সম্পন্ন করেছে, যা শ্রীলঙ্কাকে দেউলিয়া দেশের মর্যাদা থেকে মুক্তি দিয়েছে। ২০২২ সালের এপ্রিলে শ্রীলঙ্কা ৪৬ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়, কারণ দেশটির খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ এবং অন্যান্য অপরিহার্য পণ্য আমদানির জন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফুরিয়ে গিয়েছিল।
এই নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকট তখনকার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাক্ষেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল। তার উত্তরসূরি রনিল বিক্রমসিংহে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ২.৯ বিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তা পেয়েছিলেন।
গত সেপ্টেম্বরে নির্বাচনে বিক্রমসিংহেকে পরাজিত করে ক্ষমতায় আসা দিসানায়েকে তার পূর্বসূরির সরকারের কঠোর মিতব্যয়ী ব্যবস্থাগুলো বজায় রেখেছেন এবং চার বছরের আইএমএফ সহায়তা কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।
দিসানায়েকে বলেন, নতুন সরকার হিসেবে গত চার মাসে আমরা একটি স্থিতিশীল অর্থনীতির ভিত্তি স্থাপন করেছি এবং একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু করেছি।
শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় দিসানায়েকের সরকারের পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্নীতি দমন ও অর্থনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে দেশটির ইমেজ বদলানো সম্ভব হলে তা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের জন্যও একটি উদাহরণ হতে পারে।